ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৩ আগস্ট ২০১৫

বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তীব্র স্রোতের কারণে মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের- টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমোরসহ ১৬ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলার পানি বিপদসীমার ২৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক চর-দ্বীপচর ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। রাজারহাটে পানিতে ডুবে শিশু সাদিয়া (৪) এবং সাপের কামড়ে শাহিন (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিস্তা নদীর পানির তীব্র স্র্রোতে উলিপুরের বজরা এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তীব্র স্রোতের কারণে জিঞ্জিরাম নদীর ওপর খাটিয়ামারী সøুইসগেটটি ভাঙ্গনের মুখ পড়েছে। এছাড়া ধরণী নদীর তীব্র স্রোতে তিন দিনে প্রায় ২০-২৫টি ঘর নদীতে ভেসে গেছে। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়েছে সাড়ে তিন হাজার পরিবার। ভাঙ্গনের ফলে ২৯ বাড়ি স্থানান্তর করা হয়েছে। বন্যার পানিতে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় অনেকেই ঘরের ভেতর মাচা করে অথবা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। পরিবারে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। অঘোষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে চর-দ্বীপচরের স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে। জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমিন জানান, বন্যার কারণে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং ৯ উপজেলার ইউএনওকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়াসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এসব নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার আট ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। রংপুর ॥ গঙ্গাচড়া, পীরগাছা এবং কাউনিয়া উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গরু-ছাগল ও আসবাবপত্র নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে তিস্তার বাঁধ ও স্কুল-কলেজের বারান্দায়। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়ের লাখ লাখ টাকার মাছ। পানিবন্দী মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে কর্ম ও খাদ্য সঙ্কট। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিন দিনে রংপুরে ৩৪৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া দফতর। যা বর্তমান মৌসুমে রেকর্ড বলে জানায় আবহাওয়া দফতর। লালমনিরহাট ॥ ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ধরলার শাখা নদী রতœাইয়ের পানি আকস্মিক বৃদ্ধি পেয়েছে। টানা বর্ষণে ধরলা ও তিস্তার উপকূলীয় অঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ। তিস্তার পানি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিপদসীমার ৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সকাল হতে ভারতের গজলডোবায় পানি প্রত্যাহার করেছে। তাই শনিবার দুপুরের পর হতে তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চরে এবং দ্বীপচরে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। বগুড়া ॥ ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সারিয়াকান্দীর নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দীতে যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৩ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ি স্পারসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশকিছু পয়েন্ট হুমকির মুখে পড়েছে। শনিবার সারিয়াকান্দির কামালপুর, চন্দনবাইশা ও কুতুবপুর ইউনিয়নের বাঁধসংলগ্ন প্রায় ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। জামালপুর ॥ উজানের পাহাড়ী ঢল এবং তিনদিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জের ২০ ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৮০ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রোপা আমন ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এদিকে ইসলামপুর পৌর এলাকার ভেঙ্গুরা গ্রামে শনিবার সকালে হাসান মিয়া নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।
×