ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেস্ট কমিউনিটি ক্লিনিক এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সজাগ থাকুন- বিনামূল্যের ওষুধ যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ আগস্ট ২০১৫

সজাগ থাকুন- বিনামূল্যের ওষুধ যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে

বাংলানিউজ ॥ রোগীদের বিনামূল্যে দেয়া সরকারী ওষুধ যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেস্ট কমিউনিটি ক্লিনিক এ্যাওয়ার্ড-২০১৪’ এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে ই-লার্নিং কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। সরকার ৩০ প্রকার ওষুধ রোগীদের বিনামূল্যে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ওষুধ যেন কেউ বাজারে বিক্রি করতে না পারে- সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। এ সমস্ত ওষুধ বাজারে বিক্রি করে কেউ যেন মানুষকে সেবা থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে আরও যত্নবান হতে হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি বিদেশে ওষুধ রফতানি করছে। প্রতিটি ওষুধ কোম্পানি কিন্তু ক্লিনিকগুলোতে বিনা পয়সায় ওষুধ দিতে পারেন। অনেকে দিচ্ছেন। আরও উদ্যোগ নিতে হবে।কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এটুকু চাই, যেন আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা খুব নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেন। আগামীতেও মানুষ যেন সুষ্ঠুভাবে এ সেবাটা পায়। কমিউনিটি ক্লিনিকের সুবিধার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। চিকিৎসার জন্য স্বামী, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আমরা সে অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনার পদক্ষেপ নিই। তারা যেন নিজেরাই ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার জন্য। এখানে প্রাথমিক সেবা নেয়ার পর প্রয়োজনে মানুষ উপজেলা, জেলা, মেডিক্যাল কলেজসহ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। সরকার সেজন্য এসব হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। বিএনপির আমলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আমার কাছে অবাক লাগে, কীভাবে তারা মানুষের চিকিৎসা সেবার এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আমরা শুনেছি খালেদা জিয়া বলেছিলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়ে গেলে মানুষ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলকে আর ভোট দেবে না। এজন্য তারা এ সেবা বন্ধ করে দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উৎপাদন, বিনিয়োগ, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা দল কীভাবে দেশকে পিছিয়ে নেয়। রাজনীতি তো মানুষের জন্য। জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিই। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই। অনুষ্ঠানে সাতটি বিভাগের সাতটি কমিউনিটি ক্লিনিককে পুরস্কৃত করা হয়। স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক ডা. মাখদুমা নার্গিস প্রমুখ। ঢালাওভাবে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রবণতা থেকে সবাইকে সরে আসার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢালাওভাবে মেডিক্যাল কলেজ করলে শেষে রোগী বাঁচানোর ডাক্তার হবে না, রোগী মারার ডাক্তার হবে। সারা দেশে যত্রতত্র, মানহীন বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ গড়ে ওঠার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, রোগী মারার ডাক্তার যেন না হয়, সেদিকে দেখতে হবে। এই যে যত্রতত্র মেডিক্যাল কলেজ করা এটা যেন না হয়। মেডিক্যাল কলেজগুলো যেন মানসম্পন্ন হয় সেভাবে তৈরি করতে হবে। হুজুগে মাতলে চলবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা এ সময় তুলে ধরেন তিনি। আরও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আমরা আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পদক্ষেপ নিয়েছি, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামে। ভবিষ্যতে আমরা প্রতিটি ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব।’
×