ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চরাঞ্চলে কাজ করলে বাড়তি সুবিধা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৩ আগস্ট ২০১৫

চরাঞ্চলে কাজ করলে বাড়তি সুবিধা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চর অঞ্চলগুলোতে ব্যাংক বা অন্য কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান কাজ করলে তাদের বাড়তি সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। তাদের কৃষি ঋণ তহবিল, চ্যালেঞ্জ ফান্ড ও সিএসআর-এর জন্য গঠিত পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অস্ট্রেলিয়ান এইড, ইউকে এইড-এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মকা-ে অংশগ্রহণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গবর্নর বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা, জীবন-জীবিকা, অন্যান্য সেবা ও সুযোগ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চরের লাখো মানুষ। কঠিন তাদের জীবন সংগ্রাম। এমন অনেক চর আছে যেখানে বংশানুক্রমে অনেক পরিবার শিক্ষার আলো থেকে একেবারেই বঞ্চিত। মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চর এলাকার স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও খুব করুণ। চরে কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎসও সীমাবদ্ধ। তবে সুচিন্তিত কৌশল গ্রহণ করা গেলে চরেও আয় বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই এসব অঞ্চলে টেকসই দারিদ্র্য নিরসনের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং একইসঙ্গে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করার সময় কিছু বিশেষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখাও জরুরী। এসব মানুষের জীবন মান উন্নত করতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শুরু করে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সিএসআর কর্মকা-ের মাধ্যমে এসব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ফান্ড হতে চরবাসী দরখাস্তকারীর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান আতিউর রহমান। এছাড়া চরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ দেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করতে বলেন। আজকে বাজার ভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রাণ, এসিআই-এর মতো যেসকল প্রতিষ্ঠান সিএসআর কার্যক্রমে এগিয়ে আসছে, তাদের তিনি সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের অবশ্যই সমাজকে কিছু দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হয়েছে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। লাইভ স্টকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন স্কিম খুলেছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নির্বাহীদের বলব, এ তহবিলের বেশিরভাগ যেন চরের মানুষ পায়। আমি দেখতে চাই চর হবে বাংলাদেশের সবুজ ক্ষেত্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে এই চরের কমিউনিটি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছি উল্লেখ করে গবর্নর বলেন, আমরা দ্রুত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবার পথে এগুচ্ছি। এ পথে যদি কোন জনগোষ্ঠী পেছনে পড়ে থাকে তাদের টেনে নিতে হবে। এ জন্য আমাদের সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই দারিদ্র্য কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি। ২০১৪ সালের সিএসআর ব্যয় নিয়ে একটি বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার বিশ্বাস। তিনি উপস্থাপনায় বলেন, ২০১৪ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট সিএসআর ব্যয় ছিল ৫১৬ কোটি টাকার উপরে। যেখানে সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ দেয়া হয়েছে শিক্ষাখাতে। ২৭ দশমিক ১ শতাংশ স্বাস্থ্য, মানবিক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এসময় তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে কোন কোন খাতে সিএসআরের কত টাকা খরচ করবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী চৌধুরী। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সওয়েল স্টাম্প, অস্ট্রেলিয়ান এইড, ইউকেএইড, সিএলপি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
×