ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল বসানো শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২২ আগস্ট ২০১৫

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল বসানো শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপনের কাজ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। দেশী-বিদেশী প্রকৌশলীরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই কাজ শুরু করে দেয়। এই ট্রায়াল পাইলটি স্থাপনে তিন হাজার টন ওজনের জার্মানি হ্যামার ইনস্টল করা হয়েছে। শনিবার থেকে এটি ড্রাইভ করে ১২০ মিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার ব্যাসের বিশাল হ্যামারটি স্থাপন হবে। মাওয়া সাইডের নদীর ৭ নম্বর পিলারে এটি বসছে। এর আগে টেস্ট পাইল স্থাপন কাজ শুরু হলেও কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন এই প্রথম। পদ্মা সেতুতে মোট দু’টি কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন হবে। আর টেস্ট পাইল স্থাপন হবে মোট ১০টি। এরই মধ্যে ৩টি টেস্ট পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। পাইল স্থাপনের কাজ প্রত্যক্ষ শেষে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেছেন, এটি স্থাপনের সময় লাগবে ১৫ দিন। তিনি মনে করেনÑ এই কনস্ট্রাকশন ট্রয়াল পাইল স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ স্থাপন শুরুর মাধ্যমে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। ইতোমধ্যেই মূল সেতুর ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। প্রকল্প এলাকায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বৃষ্টি-বর্ষার মধ্যেও উত্তাল পদ্মায় সেতুর কাজ চলছে পুরোদমে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নদী ভাঙন দেখা দিলেও তা প্রতিরোধ করা হয়েছে। এখন সব কিছুই পদ্মা সেতুর অনুকূলে। নদী শাসন, দু’পারের এ্যাপ্রোচ সবই চলছে এখন পুরোদমে। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদী শাসনের ড্রেজিং করা বিপুল পরিমাণ বালু ফেলার স্থান নির্ধারণ নিয়ে রয়েছে কিছুটা সমস্যা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তবে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে হংকং ও সিঙ্গাপুরের ন্যায় যে শহর গড়ে তোলা বা পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেখানে এই বালু ব্যবহার করলে বিপুল অর্থের সাশ্রয় ছাড়াও ড্রেজিংয়ের এই বালু রাখার সঙ্কটের সমাধান হতে পারে। এ ব্যাপারে শীর্ষ পর্যায়ের ত্বরিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতুটি নির্মিত হবে। ১৫০ মিটার পর পর বসবে এই পিলার। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পারে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরও ২৪টি পিলার হবে। মূল সেতুর ৪০টি পিলারে ৬টি করে ২৪০ এবং দু’পারের ১২টিতে দু’টি করে ২৪টি অর্থ্যাৎ সর্বমোট ২৬৪টি পাইল বসাতে হবে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, পদ্মা সেতুর কাজ নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলেছে। স্থানীয় প্রশাসন এই কর্মযজ্ঞ সচল রাখতে সব রকমের সহায়তা দিচ্ছে। দ্বিতল পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপরের তলায় থাকবে চার লেনের মহাসড়ক। নিচে রেল লাইন। ট্রেনের গতিসীমা হবে ১৬০ কিলোমিটার। থাকবে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম গ্যাস সরবরাহের জন্য থাকবে হাই প্রেসার গ্যাস পাইপ লাইন। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর মঙ্গলা সমুদ্রবন্দরের ব্যবহার বাড়বে। পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়ন ও বিনিযোগ বাড়বে। বাড়বে জীনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয়। নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থে সেই সেতুর দ্রুত গতির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দেখে তাই আনন্দে উদ্বেল এই অঞ্চলের মানুষ। কাওড়াকান্দিঘাটে নৌমন্ত্রী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, পদ্মা নদীতে প্রচ- স্রোতের কারণে খনন কাজ চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটের চ্যানেলমুখে নাব্য সঙ্কটের কারণে ফেরি চলাচল সচল রাখতে নৌ-চ্যানেলগুলো খনন কাজ অব্যাহত থাকলেও বর্তমানে প্রচ- স্রোতের কারণে সমস্যা হচ্ছে। শুক্রবার মাদারীপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাটে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ কথা বলেন। পরে দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটে নৌরুটের অচলাবস্থা নিরসনকল্পে এক সভা করেন। সভায় বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানসহ বিআইডব্লিউটিএর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা থাকায় খনন যন্ত্রগুলো এক জায়গায় রাখা যাচ্ছে না। এমনকি আইটি জাহাজ দিয়েও আমরা চেষ্টা করে দেখেছি। তাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খননকাজ তীব্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া স্রোতের কারণে খুব দ্রুত খনন স্থানে পুনরায় পলি এসে জমা হয়ে যাচ্ছে। তবে এর মধ্যেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মন্ত্রী, কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়ায় ফেরি চলাচলের জন্য বিকল্প রুট তৈরি করার জন্য সার্ভে করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এতে পদ্মা পার হতে সময় বেশি লাগলেও ফেরি চলাচল সচল রাখার জন্য প্রয়োজনে এ ব্যবস্থা করা হবে।
×