ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী অপহরণের হোতাসহ গ্রেফতার ৭

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ আগস্ট ২০১৫

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী অপহরণের হোতাসহ গ্রেফতার ৭

নিজস্ব সংবাদদাতা, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ২১ আগস্ট ॥ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ফয়েজ আহম্মেদকে অপহরণের ঘটনায় র‌্যাব-১১ সদস্যরা অপহরণের মূল হোতা লোকমানের স্ত্রীসহ ৭ জনকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণের আদায়কৃত ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৪ টাকা উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র‌্যাব-১১ এর সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ অপহরণের মূলহোতা লোকমানের স্ত্রী শাকিলা আক্তার (৩০), আরেক অপহরণকারী জনির মা মাহমুদা পারভীন (৫০), লোকমানের বোন আলেয়া বেগম (৪৫), লোকমানের ভগ্নিপতি আবুল কালাম আজাদ (৫২), লোকমানের ভাগ্নে আল-আমিন আসিক (২৬), আলেয়ার উকিল ভাই আব্দুল্লাহ (৩৬) ও হুন্ডি ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন (৩০)। প্রেস ব্রিফিংয়ে সিও জানান, গত ২৩ জুলাই ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকার ব্যবসায়ী ফয়েজ আহম্মেদ (৬৬) ব্যবসায়িক কাজে মালয়েশিয়া গমন করেন। ওই দিন সকালেই অজ্ঞাতনামা ৩Ñ৪ জন অপহরণকারী ফয়েজ আহম্মেদকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তারা দীর্ঘদিন ফয়েজ আহম্মেদকে আটক করে নানাভাবে নির্যাতন চালায়। অপহরণের মূলহোতা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ কাশিপুর বাংলাবাজার এলাকার খোকনের ভাইয়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও মৃত হাতেম আলীর ছেলে লোকমান হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার পশ্চিম কুট্টাপাড়া জোড়াসার বাসিন্দা মোঃ ইসহাকের ছেলে ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ জনি ও মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার পানিয়ার বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মান্নান শেখের ছেলে মোঃ শরিফ। তারা এখন মালয়েশিয়া প্রবাসী। তাদের সঙ্গে একজন মালয়েশিয়ানও জড়িত রয়েছে। এরপর অপহরণকারীরা বাংলাদেশে ফয়েজ আহম্মেদের পরিবারের কাছে তার মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করে। পরে ফয়েজ আহম্মেদের পরিবার বাধ্য হয়ে অপহরণকারীদের কথামতো মূলহোতা লোকমানের স্ত্রী শাকিলার কাছে তারা প্রথমে নগদে ১৩ লাখ টাকা পৌঁছে দেন। পরে অপহরণাকারীর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে দু’বারে ১৫ লাখ টাকাসহ মোট ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পর ফয়েজ আহম্মেদকে অপহরণকারীরা ছেড়ে দেয়। অপহরণকারীদের কবল থেকে ছাড়া পেয়ে গত ১৯ আগস্ট ফয়েজ আহম্মেদ বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। র‌্যাব আরও জানান, গত ১৬ আগস্ট অপহৃতের পরিবার র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে এসে অপহরণের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে। এরপর ব্যাব সদস্যরা কার্যক্রম শুরু করে। তারা গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি আসামিদের ব্যাপারে খোঁজখবর ও ব্যাংক লেনদেনের বিষয়গুলো নিশ্চিত হন। এরপর র‌্যাব-১১ সদস্যরা গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মুন্সীগঞ্জ থেকে অপহরণের মূলহোতা লোকমান হোসেনের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৪ টাকা উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতারকৃত শালিকার কাছ থেকে ৬টি পাসপোর্ট ও কিছু সার্টিফিকেট উদ্ধার করে। এর মধ্যে ২টি পাসপোর্ট লোকমানের, ১টি শাকিলার ও ৩টি অন্য ব্যক্তির। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল সেট, ১১টি সিম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকের চেক বইসহ অন্য কাগজপত্র উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, এটি একটি সুপরিকল্পিত অপহরণ। অপহৃত ফয়েজ আহমেদ ব্যবসায়ী কাজে ২ বছর ধরে নিয়মিত মায়েশিয়া যাতায়াত করত। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুসরণ করে এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে এ অপহরণটি করেছে। অপহরণকারী লোকমান হোসেন, ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ জনি ও মোঃ শরিফ এখন মায়েশিয়ায় পলাতক রয়েছে। তিনি আরও জানান, উল্লিখিত আসামিদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×