ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওলামা লীগের নেতা হেলালী ছুরিকাহত ॥ আনসারুল্লাহ সদস্য আটক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২২ আগস্ট ২০১৫

ওলামা লীগের নেতা হেলালী ছুরিকাহত ॥  আনসারুল্লাহ সদস্য  আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভক্ত আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালীকে (৫০) কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে হেলালীর ওপর হামলা করা হয়। তাকে পেছন থেকে ছুরি দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করা হয়। তার পিঠে ও পেটেও জখম হয়েছে। আহত হেলালীকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মুসল্লিরা মুজাহিদ (২১) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। আটক মুজাহিদ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে পরিচয় মিলেছে। সে হেফাজতের কর্মী বলেও স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওলামা লীগের এ অংশটি ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে। জানা গেছে, সরকার সমর্থক এ সংগঠনটির গ্রুপিং ও জঙ্গীদের আক্রমণ এ দুটি বিষয়কেই সন্দেহে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আহত হোসাইন বিন হেলালীর নেতৃত্বাধীন অংশটি দীর্ঘদিন ধরে অপর অংশটিকে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের চর হিসেবে অভিযোগ করে আসছে। হেফাজতের ভাষায় অপর অংশ নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি তুলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলেও অভিযোগ করে আসছিলেন সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী। শুক্রবার বায়তুল মোকাররম এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ ও নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা জানিয়েছেন, জুমার নামাজ পড়ে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত সভায় যাওয়ার সময় ওলামা লীগের সভাপতির ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন একজনকে মুসল্লিরা ধরে পুলিশে দেয়। আহত হেলালীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শরীফ জানান, এ ঘটনার পরপরই একজনকে আটক করা হয়েছে। হেলালীর রাজনৈতিক সহকর্মী আবুল আজিজ খান জানান, তিনি ডেমরার নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মসজিদের দক্ষিণ গেট দিয়ে বেরিয়ে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। হেলালীর গাড়িচালক রুবেল জানান, হুজুরকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করি। নামাজ শেষে দক্ষিণ গেট দিয়ে নেমে জুতা পরার সময় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। খবর পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে যাই। আওয়ামী ওলামা লীগের একই অংশের সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসাইন বলেছেন, জুমার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তবে কে বা কারা হেলালীকে ছুরিকাঘাত করেছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে এ ঘটনার পেছনে জামায়াত-শিবিরের হাত থাকার সন্দেহ তার। সংগঠনের দফতর সম্পাদক মোয়াজ ইবনে মোসাদ্দেক বলেছেন, হুজুরের প্রাণনাশের হুমকি ছিল। তাকে অনুষ্ঠানে যোগ না করার জন্য বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি দেয়া হতো। আজকে এ হামলা চালানো হলো। এদিকে হেলালীর ওপর হামলায় ঘটনায় আটক যুবক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসান। ঘটনার পর বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেলালীকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আটক মুজাহিদের পরিচয় দেন মারুফ হাসান। তিনি জানান, মুজাহিদুল হাজারীবাগের একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। এর আগে তিনি পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের একটি মাদ্রাসায়। বর্তমানে আনসারুল্লাহর এই সদস্য এক সময় হেফাজতে ইসলামের সদস্য ছিলেন বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, মুজাহিদের বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। আওয়ামী ওলামা লীগের দুটি অংশ দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে আলাদাভাবে দলের বিভিন্ন কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এর একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন। অন্য অংশটি চলছে আক্তার হোসেন ও আবুল হাসানের নেতৃত্বে। মৌলবাদীদের পক্ষে বক্তব্য রাখার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই আক্তার হোসেন ও আবুল হাসানের অংশের নেতাদের পেছনে হেফাজত ও জামায়াতের মদদ থাকার অভিযোগ করে আসছিল হেলালীর অংশ। গেল মাসে একাধিক সমাবেশেও হেলালী বলেছেন, আওয়ামী ওলামা লীগকে হেয় করতে দলের নাম ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলামের অনুপ্রবেশকারী দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এরা মূলত জঙ্গী, এরা হেফাজতের টাকায় সরকারবিরোধী কমর্কা- চালিয়ে যাচ্ছে। আক্তার হোসেন ও আবুল হাসানের নেতৃত্বাধীন অংশকে তেমন কোন কর্মসূচীতে দেখা না গেলেও কয়েক মাস ধরে তথাকথিত ইসলাম অবমাননাকারী ব্লগারদের মৃত্যুদ- দাবি করে আইন চেয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তাদের দাবিগুলোর অধিকাংশই ছিল হেফাজতে ইসলামীর ১৩ দফার অনুরূপ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সরকার সমর্থক সংগঠনের মৌলবাদী কর্মকা-ের সমালোচনার প্রেক্ষাপটে হেলালী অভিযোগ করেন, ওরা সাম্প্রদায়িক অংশ, যারা এদের মদদ দিচ্ছে তারা যত বড় নেতা হোক না কেন তাদের দেখে নেয়া হবে। সরকারের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের নেতা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। আক্তার-আবুল হাসান অংশকে কারা মদদ দিচ্ছে জানতে চাওয়া হলে হেলালী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ তাদের মদদ দিচ্ছেন।
×