ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে স্বস্তির বৃষ্টিতে খুশি আমন ও পাট চাষীরা

টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২২ আগস্ট ২০১৫

টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ টানা খরার পর রংপুরে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রামে অবিরাম বর্ষণে ধরলার পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও জলাবদ্ধতায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গলাচিপা ও রাঙ্গাবালিতে আমন চাষ ব্যাহত হয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে টানা বর্ষণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। খবর স্টাফ রিপোর্টারদের পাঠানো রংপুর ॥ টানা খরা ও অনাবৃষ্টির পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পেয়েছে রংপুরবাসী। বহু প্রত্যাশিত ভাদ্রের এই বৃষ্টির কারণে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ। সবমিলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। টানা খরার পর রংপুর অঞ্চলে গত বুধবার থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দেখা মিললেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে নেমে আসে ভারি বৃষ্টি। এতে করে জমির রোপা আমন এবং পাট জাগ দেয়ার যে সমস্যা ছিল তা কেটে গেছে অনেকটাই। তবে ভারি এই বৃষ্টিপাতের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমজীবীদের কষ্ট বেড়েছে বেশ। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া দফতর। টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর মুলাটোল, গুরাতিপাড়া, বাবুখাঁ, গনেশপুর, তামপাট, বোতলা, জুম্মাপাড়াসহ বিভিন্ন নিম্নœাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে ওসব এলাকার মানুষজন। অন্যদিকে লাগাতার বৃষ্টির কারণে শুক্রবার ছুটির দিন হলেও নগর ছিল একেবারেই ফাঁকা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউই তেমন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়নি। অন্যদিকে খেটে খাওয়া মানুষ বিশেষ শ্রমজীবীদের বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় কাজের অভাবে অনেকটাই না খেয়ে থাকতে হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর পানি ফুলেফেঁপে উঠেছে। ধরলা নদের পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৪শ’ ৫টি দ্বীপচরে শতাধিক গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ঢুকে পড়ে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম কার্যালয়ে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ২৮.৮৯ ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৩.২৯, ধরলা নদীর সিএনবি ঘাট এলাকায় ২৬.৪৪, এবং দুধকুমার ২৫.৭৮ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী ব্রহ্মপুত্র পয়েন্টে ১৯৮ ও ধরলা পয়েন্টে ২০৭, তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্ট ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে গত রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে কুড়িগ্রাম শহরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, খাদ্য অফিস, আদর্শ জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা, খাদ্য গুদাম, মজিদা কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধা তৈরি হয়েছে। গলাচিপা ॥ অব্যাহত বর্ষণে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলার কৃষকরা রোপা আমন চাষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। এরই মধ্যে চারা লাগানোর মৌসুম অন্তত এক মাস পিছিয়ে গেছে। বীজতলা নষ্ট হয়েছে ব্যাপক। দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে চর-দ্বীপ ও নিচু গ্রামাঞ্চল। মাঠের পর মাঠ ডুবে আছে পানির নিচে। মাঝে মধ্যে একটু সূর্যের দেখা মিললেই কৃষকরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ক্ষেত-খামারে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার বাদ সাধছে প্রকৃতি। দুর্যোগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। ফলে বছরের একমাত্র প্রধান ফসলের চাষ ও ফলন নিয়ে এ অঞ্চলের লাখও কৃষক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সময় কাটাচ্ছে। সুনামগঞ্জ ॥ সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে হাওড় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় আজ বেলা ১২টায় সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা। পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম। নীলফামারী ॥ গত দুইদিন ধরে টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের নীলফামারীসহ আট জেলার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও টানা বর্ষণের কারণে এসব জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মাঠ-ঘাট ও আবাদী জমিগুলো তলিয়ে গেছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে কাঁচা সড়কগুলো ধসে পড়ছে।
×