ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের নাটক মঞ্চায়ন করব ॥ নূনা আফরোজ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২২ আগস্ট ২০১৫

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের নাটক মঞ্চায়ন করব ॥ নূনা আফরোজ

নূনা আফরোজ। একাধারে অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার ও নির্দেশক। হৃদয়ের টানে থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরে আছেন দীর্ঘদিন। নতুন নতুন নাটকের মাধ্যমে দেশের মঞ্চকে আলোকিত করার পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের সিনিয়র সদস্য তিনি। এসংগঠনটি শুরু থেকেই রবীন্দ্রনাথের নাটককে প্রাধান্য দিয়ে দেশের নাট্য আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মঞ্চায়ন হবে রবীন্দ্রনাথের শ্যামা নৃত্যনাট্য অবলম্বনে দলটির প্রযোজিত নাটক ‘শ্যামা প্রেম’। নাটকটির প্রধান চরিত্র শ্যামার ভূমিকায় অভিনয় করবেন নূনা । সাম্প্রতিক সময়ে মঞ্চ নাটক ও আজকের পরিবেশনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ‘শ্যামা প্রেম’ নাটক সম্পর্কে কিছু বলুন নূনা আফরোজ : ‘শ্যামা প্রেম’ নাটকটির মূল উপজীব্য ভালবাসা, স্বাধীনতা ও মানবতার চিরায়ত আকাক্সক্ষা। রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’ অবলন্বনে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন চিত্তরঞ্জন ঘোষ, নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হীরা। নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র শ্যামা এক রাজ নর্তকী। ভাগ্যচক্রে রাজ নর্তকী হয়ে উৎকোচ আর বশীকরণের বাঁকা পথে অভ্যস্ত শ্যামার প্রায় মরে যাওয়া স্বপ্নগুলো আরেকবার বেঁচে ওঠে যাঁর সান্নিধ্যে, সে এক বিদেশী বণিক-প্রেমময় শৌর্যবান পুরুষ বজ্রসেন। অন্যদিকে ছেলেবেলার হল্লাহাটির সাথী অভিমানী বিপ্লবী উত্তীয় প্রাণ দিয়ে ভালবাসে শ্যামাকে। কিন্তু তার কাছে ধরা দেয়াটা হয়ে ওঠে না শ্যামার। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। দলের প্রযোজনায় নতুন নাটক সম্পর্কে বলুন নূনা আফরোজ : খুব শীঘ্রই নতুন একটি নাটক মঞ্চে আনার প্রস্তুতি চলছে। ‘আমি এবং রবীন্দ্রনাথ’ নামের এ নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা আমার নিজের। একটা ফ্যান্টাসি থেকে নাটকটি লেখা হয়েছে। আমি ২০১৪ সালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি যাই। সেখানে পা রাখার পর নাটকটির একটা ফিলিং আমার মধ্যে কাজ করে, সেখান থেকেই কাজ শুরু করি। এখানে নাটকটিতে আমি বলতে পাঠক, যার রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রেম আছে। সে যখন শিলাইদহে যায়, তখন সে যা অনুভব করে সেটা নিয়েই এ নাটক। আমরা দলের প্রায় ৫০ জন সদস্য গত ১২ জুন কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে ‘প্রাঙ্গণেমোর প্রাণের মেলা’ শিরোনামের এক অনন্য আয়োজন করি। সেখানে নাটকটির প্রথম রিডিং রিহার্সেল হয়। আগামী অক্টোবর অথবা নবেম্বরে নাটকটি মঞ্চে আনতে পারব আশা করছি। সম্প্রতি ওপার বাংলার নাট্যোৎসবে দলের অংশগ্রহণ নিয়ে বলুন নূনা আফরোজ : কলকাতার বিখ্যাত নাট্যদল পূর্ব-পশ্চিম আয়োজিত নাট্যোৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে যায় আমাদের নাট্যদল। সেখানে দলের প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথের ‘রক্ত করবী’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। সেখানে নাটক মঞ্চায়ন করতে গিয়ে এটাই মনে হয়েছে যে, ‘প্রাঙ্গণেমোর’ ওপার বাংলায় দর্শক তৈরি করতে পেরেছে। আমাদের নাটকের দিন ওখানে প্রচ- বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অসংখ্য দর্শক আমাদের নাটক দেখতে এসেছে, এটা সত্যি অন্য রকম এক অনুভূতির ব্যাপার। বাংলাদেশের মতো ওপার বাংলায়ও আমাদের দর্শক তৈরি করতে পেরেছি ভেবে খুবই ভাল লাগছে। আমাদের দেশের মঞ্চ নাটকের অগ্রগতি সম্পর্কে বলুন নূনা আফরোজ : মঞ্চ নাটকে আমরা যে খুব বেশি এগোতে পেরেছি তা কিন্তু নয়। নব্বইয়ের দশকে যেসব নাটক মঞ্চায়ন হতো, মানের দিক থেকে তার থেকে যে উত্তীর্ণ হতে পেরেছি এটা বলতে পারব না। তবে মঞ্চে কিছু নতুন নাটক আসছে সেগুলো সময়ের সঙ্গে তার মিলিয়ে এগোচ্ছে। মঞ্চ নাটক এগিয়ে নিতে প্রতিবন্ধকতা কী? নূনা আফরোজ : শুধু শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক মঞ্চায়ন করলে নাটক এগোবে না। নাটককে এগিয়ে নিতে মঞ্চ সঙ্কট সব চেয়ে আমাদের দেশে বড় সমস্যা। দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত মঞ্চ থাকলে নাটকের অগ্রগতি হবে। পাশাপাশি দলগুলোকে মানসম্মত নাটকও তৈরি করতে হবে। প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের আগামী পরিকল্পনা কী? নূনা আফরোজ : প্রাঙ্গণেমোর চায় সারাদেশে নাটক ছড়িয়ে দিতে। এ লক্ষ্যে নিজেদের আয়োজনে আমরা নাট্যোৎসব করি। এছাড়া নাটককে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে আরও কিছু কার্যক্রম রয়েছে। প্রাঙ্গণেমোর যাত্রার শুরু থেকেই রবীন্দ্রনাথের নাটককে প্রাধান্য দিয়ে দেশের নাট্য আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত দশ বছরের পথ পরিক্রমায় ইতোমধ্যে ৪টি রবীন্দ্রনাট্যসহ মোট ৮টি প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে দলটি। যেগুলোর নাট্য নির্মাণের আঙ্গিক ও অভিনয়শৈলী দেশে এবং দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে নিয়মিত রবীন্দ্রনাট্য চর্চাকারী একমাত্র দল হিসেবে প্রাঙ্গণেমোর প্রশংসিত। রবীন্দ্র নাট্যচর্চার প্রসারে প্রাঙ্গণেমোর শুধু রবীন্দ্রনাথের নাটক নিয়ে দুই বাংলার রবীন্দ্র নাট্যমেলার আয়োজন করে থাকে। যেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের নাট্যদলগুলোও রবীন্দ্র প্রযোজনা মঞ্চায়ন করে। আমাদের ইচ্ছে আছে শান্তিনিকেতনে দলের প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথের সবক’টা নাটক মঞ্চায়ন করব। Ñগৌতম পা-ে
×