ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাড়ে ৮ লাখ ছাড়িয়েছে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২১ আগস্ট ২০১৫

সাড়ে ৮ লাখ ছাড়িয়েছে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব

রহিম শেখ ॥ সঞ্চয়ের মনোভাব নিয়ে বড়দের সঙ্গে, স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম। ২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। ওই বছরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন শেষে ক্ষুদে সঞ্চয়ীদের ব্যাংকে জমা পড়েছে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা। স্কুল ব্যাংকিং যাত্রা শুরুর প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০ শিক্ষার্থী ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলে। গেল জুন শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার। জানা গেছে, ২০১০ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিংয়ের জন্য নিয়মাবলী জানিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল সঞ্চয়ের মাধ্যমে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। এর পরের চার বছরে এর বিস্তৃতি রীতিমতো বিস্ময়কর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ছাত্রছাত্রীদের হিসাব খুলতে একটা নীতিমালাও তৈরি করে দেয়। শুরুতে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব খোলা হলেও পরে এই হিসাব খুলতে ১০০ টাকা জমা রাখতে বলা হয়। এসব হিসাব সাধারণ চলতি হিসাবেও রূপান্তরের সুযোগ আছে। কোন কোন ব্যাংক আলাদা কাউন্টার বা ডেস্ক খুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য এখন এ সেবা দিচ্ছে। এমনকি ব্যাংকগুলো কোন এক নির্ধারিত দিনে স্কুলে গিয়েও শিক্ষার্থীদের হিসাব খুলে দিচ্ছে। স্কুল ব্যাংকিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ক্যাম্পেইন করেছে রাজধানীর বেশ কিছু স্কুল ও বেসরকারী ব্যাংক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে স্কুল ব্যাংকিং সেমিনার ও ব্যাংক হিসাব খোলার মেলা আয়োজন করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাসে উৎসাহিত করতে আমরা বিশেষ এই ব্যাংকিং-সেবা চালু করেছিলাম। প্রথম দিকে কিছুটা কম থাকলেও ক্রমান্বয়ে এই কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে? তিনি বলেন, দেশের সাড়ে ৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ব্যাংকে হিসাব (এ্যাকাউন্ড) খুলেছে। তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণ সাড়ে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকার বেশি, যা দিয়ে নতুন দুটি ব্যাংক খোলা সম্ভব। জানা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশ স্কুল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতেই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কুল ব্যাংকিং বা স্টুডেন্ট ব্যাংকিং-এর আওতায় ‘ইয়ং স্টার’ ‘ফিউচার স্টার’... ইত্যাদি উদ্দীপনাসূচক নামে ব্যাংকগুলো চালু করে আকর্ষণীয় স্কিম। অত্যন্ত সহজ শর্তে ওপেন করা শুরু হয় শিক্ষার্থীদের নিজের নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট। এই স্কিমের আওতায় যে কোন শিক্ষার্থী এক কপি ছবি, স্কুলের আইডি কার্ড ও নামমাত্র টাকা দিয়ে যে কোন ব্যাংকের যে কোন শাখায় ওপেন করতে পারে সেভিংস ব্যাংক এ্যাকাউন্ট বা সঞ্চয়ী হিসাব। ছয় থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে পারবে। ছাত্রছাত্রীর পক্ষে পিতা-মাতা বা আইনগত অভিভাবক হিসাবটি পরিচালনা করবেন। সাধারণ হিসাব খুলতে যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো ফরম রয়েছে, সঙ্গে আছে একটি গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) ফরম। সেগুলো পূরণ করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে। স্কুল শিক্ষার্থীদের এসব হিসাবে যে কেউ টাকা জমা রাখতে পারে। কিন্তু টাকা তুলতে পারবে নমিনি হিসাবে থাকা বাবা অথবা মা। তবে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটেট টেলার মেশিন) লেনদেনের জন্য এটিএম কার্ডও নিতে পারে শিক্ষার্থী। তার জন্য অবশ্য নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় রাখতে হবে শিক্ষার্থীকে। আর ১৮ বছর বয়স হলে সব শিক্ষার্থীই টাকা তুলতে পারবে। হিসাবগুলোয় সরকারী ফি ছাড়া অন্য কোন সেবা মাশুল ব্যাংকগুলো নেয় না। স্কুল ব্যাংকিংয়ে রয়েছে নানা সুবিধা। স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাব থেকে বেতন-ফি পরিশোধও হচ্ছে। যেসব ব্যাংকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং আছে, অভিভাবকরা সেসব ব্যাংকে অনলাইনেই এসব হিসাব থেকে বেতন-ফি পরিশোধ করতে পারছেন। এটিএম কার্ডেও এটা পরিশোধ করা যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে অভিভাবকদের স্কুলে বেতন-ফি দিতে হচ্ছে না। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরানের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। ইমরানের বাবা হাবিবুর রহমান জানান, ছোটবেলায় বাবাকে দেখতাম বাঁশের খুঁটিতে টাকা জমাতে। আমি নিজেও মাটির ব্যাংকে টাকা জমিয়েছি। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার জন্যও একটি হিসাব খুলে দিয়েছি। রাজধানীতে ইমরানের মতো এমন ক্ষুধে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই তাদের ব্যাংক হিসাব খোলাকে মূল ব্যাংকিং কার্যক্রম বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সম্প্রতি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা এবং তাতে অর্থ জমা করার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার। মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৮। ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার। চলতি বছরের জুন শেষে ক্ষুদে সঞ্চয়ীদের ব্যাংকে জমা পড়েছে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা । মার্চ পর্যন্ত ক্ষুদে সঞ্চয়ীদের ব্যাংকে জমা ছিল ৭৫৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব হিসাবে জমা ছিল ৭১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা ও জমার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে নতুন ব্যাংকগুলোও এখন এগিয়ে আসছে।
×