ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাফ অনুর্ধ ১৬ ফুটবল ফাইনালে টাইব্রেকারে জয়ের নায়ক বাংলাদেশের গোলরক্ষক ফয়ছল আহমেদ

‘সাফল্যের নেপথ্যে ছিল আমাদের কৌশল’

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২১ আগস্ট ২০১৫

‘সাফল্যের নেপথ্যে ছিল আমাদের কৌশল’

রুমেল খান ॥ ‘ফাইনালে ভারতের সাকলাইনের শটটা ঠেকানোর পর অনেকেই জানতে চেয়েছে কিভাবে শটটা আটকে দিলাম। এমনিতেই আগেভাগেই ডাইভ দিয়ে ভাগ্যক্রমে সফল হয়েছি কিনা। আসলে তা নয়। টাইব্রেকারে শট ফেরানো নিয়ে অনেক অনুশীলন করেছি। তাছাড়া আমার কিছু টেকনিক আছে, যা একান্তই নিজস্ব। ফাইনালে সেটাই কাজে লেগেছে।’ কথাগুলো ফয়ছল আহমেদের। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক। এই অতন্দ্র প্রহরীর বদৌলতেই ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ‘সাফ অনুর্ধÑ১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর শিরোপা প্রথমবারের মতো করায়ত্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ দল। সিলেটে অনুষ্ঠিত এই ফুটবল আসরে ট্রফি জয় করে কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর কিশোর শিষ্যরা ঢাকায় ফেরে বুধবার রাতে। রাতেই বাফুফে ভবনে তাদের ফুল দিয়ে সাদরে বরণ করে নেন বাফুফের কর্মকর্তারা। রাজধানীতে পৌঁছুলেও বিশ্রাম নেয়ার তেমন কোন অবকাশ পাচ্ছে না কিশোর ফুটবলাররা। কারণ তাদের সামনে আছে আরও একটি অগ্নিপরীক্ষা। তার নাম ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাই পর্ব।’ যা অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বরে, ঢাকাতেই। এই আসরে ‘ডি’ গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে আছে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। পাকিস্তান তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে তিন দল নিয়েই ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ‘ডি’ গ্রুপের খেলা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ওইদিন ফয়ছলদের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। ১৮ সেপ্টেম্বর আরেক প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত। এএফসি বাছাইপর্ব উপলক্ষে আপাতত বাফুফে ভবনেই রেখে দেয়া হবে কিশোর ফুটবলারদের। যেখানে তাদের প্রস্তুতির বিষয়টি ভালভাবে দেখভাল করবেন উজ্জীবিত বাফুফের কর্মকর্তারা। ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাই পর্ব’ নিয়ে ফয়ছলের ভাবনা, ‘সৌদি আরব ও আরব আমিরাত অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। তারপরও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব ভাল ফল করতে।’ সুনামগঞ্জের কিশোর ছেলের বড় কীর্তিতে সুনাম বাড়ল বাংলাদেশের ফুটবলের। সেই কীর্তিধারী কিশোর ফয়ছল আহমেদ। চার বোন, তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ফয়ছল। বাবা মৎস্যজীবী কিরণ মিয়া। মা গৃহিণী সাফিয়া বেগম। বলতে গেলে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানই ফয়ছল। এমন পরিবারে থেকে ফুটবল খেলায় কিভাবে এলো সে? ‘ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে ভাল লাগত। বড়দের সঙ্গে খেলতে যেতাম। ইচ্ছা করত স্ট্রাইকার পজিশনে খেলার। কিন্তু বড়রা বলত তুমি গোলপোস্ট সামলাও। এভাবেই গোলকিপার হয়ে ওঠা।’ প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলা শুরু কবে থেকে? ‘২০০৯ সালে বাফুফের একটি ট্যালেন্ট হান্ট ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। আমি সুনামগঞ্জ অনুর্ধ-১৩ দলে সুযোগ পাই। আমাদের দল খেলতে যায় কুমিল্লায়। ফাইনালে আমরা নারায়ণগঞ্জের কাছে হেরে যাই। এরপর ২০১২ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত একই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলে বেড়াই পর্যায়ক্রমে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, ঢাকা, মৌলভীবাজার ও সিলেটে গিয়ে।’ ২০১২ সালেই জীবনের ফয়ছলের খেলোয়াড়ী জীবনের মোড় ঘুরে যায় একটি ঘটনায়। ফয়ছলের ভাষ্যমতে, ‘নবেম্বরে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সহায়তায় আয়োজিত হয়েছিল ‘এয়ারটেল রাইজিং স্টারস’। বাংলাদেশে থেকে বিভিন্ন ধাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে বাছাই করা হয়েছিল ১২ ফুটবলারকে। তাদের ম্যানইউ ক্লাবে নিয়ে সাত দিনের ট্রেনিং দেয়া হয়। আমি ছিলাম সেই প্রথম ব্যাচের ১২ জনের একজন। ওখানে গিয়ে যে প্রশিক্ষণ পেয়েছি, তা পরে অনেক কাজে লেগেছে।’ যেখানে একজন গোলরক্ষকের উচ্চতা হওয়া উচিত কমপক্ষে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ফয়ছলের উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চি। এ প্রসঙ্গে তার অভিমত, ‘মেক্সিকোর জর্জ ক্যাম্পোস ও বাংলাদেশের মোহসীনসহ বিশ্বের অনেক খ্যাতিমান গোলরক্ষক আছেন, যাদের উচ্চতা আমারই মতো। কাজেই উচ্চতা কোন বিষয় নয় বরং মনোবল ও কৌশলই হলো আসল।’ ফয়ছলের আদর্শ গোলরক্ষক তিনজনÑ বাংলাদেশের আমিনুল হক, শহীদুল আলম সোহেল এবং জার্মানির ম্যানুয়েল নিউয়ের। গত ১৮ আগস্ট সিলেটের ফাইনাল খেলা দেখতে সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য, ফয়ছলের পুরো পরিবার, এলাকার বেশকিছু মানুষ গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন। তবে এজন্য আমি মোটেও নার্ভাস হইনি। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো, তাই একটু চাপে ছিলাম। যত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব, ততই চাপ কাটিয়ে উঠতে পারব।’ ফয়ছল আরও বলে, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরো দল আমাকে আলাদাভাবে নিয়ে উল্লাস করেছে। এটা খুব ভাল লেগেছে। আমার মা-বাবা খুশিতে কেঁদেছেন।’ সিলেটের ক্যানারি ওয়ার্ফ ফুটবলের সঙ্গেও বর্তমানে সম্পৃক্ত আছে ফয়ছল। নিজের বর্তমান ফর্ম-ফিটনেস ধরে রেখে দীর্ঘদিন খেলা, মোহামেডান বা শেখ জামালের মতো শীর্ষ ক্লাবে খেলা এবং জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখে সে। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে, সেটাই ফুটবলপ্রেমীদের নিগূঢ় প্রত্যাশা।
×