ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জলরংয়ে আঁকা হেলালের ক্যানভাসে নিসর্গের নৈবেদ্য

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২১ আগস্ট ২০১৫

জলরংয়ে আঁকা হেলালের ক্যানভাসে নিসর্গের নৈবেদ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়কের দুই পাশজুড়ে কচি ধানের সবুজ ফসলী প্রান্তর। আর সেই ধানী জমিকে চিড়ে যেন কয়েক ফুট উপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে মেঠোপথ। সে পথ ধরে এগিয়ে চলেছে ছাগলের পাল। পেছন থেকে লাঠি হাতে প্রাণীগুলোকে তাড়িয়ে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে মাথায় গামছাবাঁধা রাখাল ছেলে। নিসর্গের নৈবেদ্যময় আবহমান গ্রাম বাংলার এই চিরচেনা দৃশ্যের দেখা মিলল ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে। সবুজ-শ্যামল গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত জীবন, নদীর বহমানতা, বন বা হৃদের নির্জনতা কিংবা নিসর্গের নিমগ্নতার নানা দৃশ্যের বৈভব ছড়িয়ে রয়েছে প্রদর্শনালয়টির দেয়ালজুড়ে। প্রতিটি চিত্রকর্মই চিত্রিত হয়েছে জলরংয়ের আশ্রয়ে। ছবিগুলো এঁকেছেন কানাডা প্রবাসী চিত্রশিল্পী এস হেলাল উদ্দিন। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে চিত্রকে চলছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ভয়েজ অব নেচার বা প্রকৃতির অভিযাত্রা। বৃহস্পতিবার শরতের বৃষ্টিভেজা বিকেলে পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা নাসির আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। রং আর রেখার গতিময় আঁচড়ে নিসর্গের নির্যাসকে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন শিল্পী হেলাল। তাই বলে শুধু প্রকৃতিকে উপজীব্য করেই সব ছবি আঁকেননি। নিসর্গকে মুখ্য করে চিত্রিত করে তাঁর চারপাশের দেখা জগতকে। আর সেই শিল্পীত অবলোকনের সূত্র ধরে আবহমান গ্রাম বাংলার সঙ্গে চিত্রপটে উদ্ভাসিত হয়েছে কর্মব্যস্ত শহুরে জীবন কিংবা রিকশাচালকের মতো শ্রমজীবীর যাপিত জীবন। তেমনই একটি চিত্রকর্মের শিরোনাম রিকশাচালক। ছবিতে যাত্রীর পরিবর্তে বাহারি রঙের হুড তোলা রিকশার আসনে উপবিষ্ট রিকশাচালক। বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে একটি পা রেখেছেন পাদানিতে আর অপরটি তুলে দিয়েছেন নিজের আসনে। অনেকটা পথচলার ক্লান্তি দূর করতে যেন টান লাগিয়েছেন সিগারেটে। পুড়ছে বাঁ হাতে চেপে ধরা সিগারেটটি। এই ছবির ঠিক উল্টো পাশের দেয়ালে স্থাপিত তৃণভূমির শিরোনামের ছবিটি দর্শকের চোখ ফিরিয়ে নিয়ে যায় প্রকৃতির রাজ্যে। বিশাল চিত্রপটজুড়ে দৃশ্যমান সবুজ ঘাসে আবৃত দিগন্ত বিস্তৃত একটি মাঠ। খাদ্যের জোগান মেটাতে মাঠের চারপাশে জড়ো হয়েছে একঝাঁক ছাগল। মাঠটির ঠিক সামনেই আপন অস্তিত্বে উজ্জ্বল এক জলাশয়। নীলাভ জলের বুকে ভাসমান একরাশ লাল পদ্মফুলের ছবিটিতে প্রকৃতি যেন মেলে ধরেছে আপন রূপে বিভা। ঢেউ তোলা পানিতে মাছ শিকারী জেলের চিত্রকর্মটি বলে যায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের কথা। এছাড়াও পাপড়ি বিকশিত হওয়া এক গুচ্ছ গোলাপ, কাঁটাতারের বেড়ায় বসে শালিকের অবকাশ যাপন, বৃষ্টিভেজা মহাসড়ক, থইথই জলে ছুটে চলা নৌকাবাহী কাপ্তাই হৃদের অনাবিল সৌন্দর্য, নগরের ব্যস্ত শ্রমিকের কর্মপ্রবাহ, কানাডার টরেন্টো শহরের রাস্তা পারাপার, পুরনো ঢাকার রিকশাযাত্রাসহ বৈচিত্র্যময় নানা বিষয় উঠে এসেছে শিল্পীর বর্ণময় সব ছবিতে। জলরংয়ে আঁকা ৬৩টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ১৫ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আইজিসিসিতে টেগোর ইন সুফিয়ানা ॥ কট্টর মতবাদকে দূরে ঠেলে সহজিয়া পথকে অবলম্বন করেছে সুফি মতবাদ। এই মতবাদের অনুসারীরাই সঙ্গীতে সুফিধারার সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব সংস্কৃতিতেই তাই সুফি গানের ধারাটি স্বমহিমায় উজ্জ্বল অবস্থানে বিরাজ করছে। সুফি গানের চর্চা হয় এমন দেশগুলোর সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতাকে উপজীব্য করে এগিয়েছে এই বিশেষ সঙ্গীত ধারার সুর, কথা ও আবেগের প্রকাশ। আধ্যাত্মবাদ বা ভক্তিমূলক এই গানের চর্চায় অনেক কবি-সাহিত্যিক প্রভাবিত হয়েছেন সুফিবাদের ধারায়। আর সেই সূত্রে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির সঙ্গে সুফি সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে কলকাতার দল শ্রুতিবৃত্ত। বৃহস্পতিবার বৃষ্টিভেজা শরৎ সন্ধ্যায় গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আইজিসিসি) পরিবেশিত হলো দলটির অনবদ্য পরিবেশনা ‘টেগোর ইন সুফিয়ানা’। বিশ্বকবির ছন্দোময় কবিতা ও শান্তির বার্তাবহ বাণীর সঙ্গে উপস্থাপিত হলো সুফি গান। সুরের সঙ্গে কাব্যমালার শিল্পীত উচ্চারণ ও বাদ্যযন্ত্রের সমন্বিত পরিবেশনায় সিক্ত হলো শ্রোতার হৃদয়। শ্রোতার অন্তরে প্রশান্তির পরশ ছড়ানোর আয়োজনটি পরিকল্পনার পাশাপাশি কবিতার শিল্পীত উচ্চারণে আবৃত্তি করেন শুভদ্বীপ চক্রবর্তী। সুরেলা শব্দধ্বনির মায়াজাল বিস্তার করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শম্বুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে সেতারে স্নিগ্ধ শব্দ তোলেন দীপশঙ্কর ভট্টাচার্য আর তবলায় সঙ্গত করেন নবারুন দত্ত। অন্তরস্পর্শী পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এক সুতোয় মিলে যায় সুফি দর্শন ও রবীন্দ্র ভাবনা। সুর, বাণী ও ছন্দে প্রকাশিত হয় শিল্পীত শান্তির বাণী। আজ শুক্রবার চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমীতে টেগোর ইন সুফিয়ানা শীর্ষক পরিবেশনাটি উপস্থাপন করবে শ্রুতিবৃত্ত। আলোকচিত্র প্রদর্শনী গ্রিন ডেল্টা এরিয়েলস ॥ বার্ডস আই ভিউ বা ক্যামেরাকে পাখির চোখে রূপ দিয়ে আকাশ থেকে ছবি তোলেন রুম্মান মাহমুদ। সেনারবাহিনীর কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে এই আলোকচিত্রী ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের নানা প্রান্তে। হেলিকপ্টার কিংবা উড়োজাহাজে চেপে উড়ে চলার সময় ফ্রেমবন্দী করেছেন নানা বিষয়কে। আর সেসব ছবি নিয়েই বৃহস্পতিবার থেকে ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে শুরু হলো এই আলোকচিত্রীর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম গ্রিন ডেল্টা এরিয়েলস। বৃষ্টিভেজা বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এসময় অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন রুম্মান মাহমুদ। আকাশ থেকে ধারণকৃত প্রতিটি ছবি ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপিত হয়েছে দর্শনার্থীদের কাছে। নান্দনিক উপস্থাপনার পাশাপাশি প্রতিটি ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আলোকচিত্রের বিষয়ের বিবরণ। সেই সূত্রে তুলে ধরা হয়েছে ছবিগুলোর স্থানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও গুরুত্ব। এছাড়া প্রদর্শনীতে চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙা শিল্পকে বিষয় করে ৭টি ছবির মাধ্যমে একটি সিরিজ তুলে ধরা হয়েছে। আর এই সিরিজের সব ছবিই সাদা-কালো মাধ্যমে আলো-ছায়ার খেলায় বর্ণিত হয়েছে। পাখির চোখে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে ভাষা শহীদদের স্মৃতির স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মোগল আমলের স্মৃতির নিদর্শন লালবাগের কেল্লা ও ঢাকার নবাবদের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি আহসান মঞ্জিল। ৩৫টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনীটি। তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২২ আগস্ট। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×