ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দিনেই কেজিতে দাম বেড়েছে দশ টাকা

পেঁয়াজ মজুদ করা হচ্ছে ॥ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করল সরকার

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২১ আগস্ট ২০১৫

পেঁয়াজ মজুদ করা হচ্ছে ॥ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করল সরকার

এম শাহজাহান ॥ দেশী পেঁয়াজ মজুদ করার প্রমাণ পেয়েছে সরকারের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত পূর্বাভাস সেল। অভিযোগ রয়েছে, মজুদ বাড়িয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে পেঁয়াজের আমদানিকারক, আড়তমালিক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আর তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে এবার আমদানিকারক ও আড়তমালিকদের সতর্ক করা হলো। গত দু’দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা দাম বেড়ে দেশী পেঁয়াজ ফের বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা আমদানি করা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা না গেলে আগামী কোরবানি ঈদের আগে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠতে পারে মসলা জাতীয় এ পণ্যটির। তাই মজুদ করে দাম বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্রমতে, পেঁয়াজের বর্তমান মজুদ ও আমদানির যে হিসাব সরকারের কাছে রয়েছে তাতে এই পণ্যটির দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত পূর্বাভাস সেল। ওই তথ্যমতে, এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। এছাড়া মিয়ানমার ও ভারত থেকে আরও ৫ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আর বছরে চাহিদা রয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ২৩ থেকে ২৪ লাখ টনের। কিন্তু কোরবানি ঈদ সামনে রেখে বেড়েই যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া ভারতের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়া এবং উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। যদিও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে ওই পেঁয়াজের দাম পড়েছে ২৩-২৫ টাকা। তাই সব খরচ মিলিয়ে কোনভাবেই আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দেশে ৩৫-৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। গত সপ্তায় দেশী পেঁয়াজ ৫৫ এবং আমদানিকৃতটি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে অভ্যন্তরীণ মার্কেটে। কিন্তু গত দু’দিনে আবার লাগামহীন বেড়ে চলছে দাম। দাম বৃদ্ধির এই কারসাজির মূলে রয়েছে ব্যবসায়ীরা। কোরবানি ঈদের আগে অতি মুনাফা হাতিয়ে নেয়াই তাদের লক্ষ্য। দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বাজার মনিটরিং টিম, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত পূর্বাভাস সেল বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে দেশে পেঁয়াজের কোন ঘাটতি নেই। মজুদ এবং আমদানি পরিস্থিতি যে অবস্থায় রয়েছে তাতে দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়েছিল সতর্ক করার জন্য। আমদানিকারক, আড়তমালিক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বেশি নিচ্ছেন এই প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাদের ডেকে এনে এবার সতর্ক করে দেয়া হলো। যদি সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম স্বাভাবিক না হয়ে আসে তাহলে এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে কোন অবস্থাতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতার কারসাজিকে প্রশ্রয় দেবে না সরকার। জানা গেছে, ঢাকা আমদানিকারক সমিতির সদস্য ও শ্যাম বাজারের পেঁয়াজের আমদানিকারক হাজী মোঃ রফিক, হাজী হাফিজুর রহমান, হাজী মোঃ মাজেদ, আড়তমালিক শামসুল আলম ও হাজী মোঃ মতিন গাজীকে ডেকে আনা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ওই সময় সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা করা হয়। সেই সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারাও যোগদেন। পর্যাপ্ত মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি ভাল থাকার পরও কেন দাম বাড়ছে সচিব জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে ওই সভায় ব্যবসায়ীদের কড়া ভাষায় সতর্ক করে দেন বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। পেঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক না হলে তাদের আইনের আওতায় আনার কথাও জানিয়ে দেয়া হয়। সচিব জানান, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি ও চক্রান্ত করা হলে তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। তবে সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনে আমদানি প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা আমদানিকারক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোঃ মাজেদ জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দামটাম নিয়ে জানতে সচিব আমাদের ডেকেছিলেন। মজুদ না করতে দেশের সব ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, মজুদ ভাল তারপরও কেন দাম বাড়ছে? আমরা বলেছি, ভারতে দাম বৃদ্ধি তাই আমাদের বাজারেও দাম বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, খুচরা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরকারকে এই দিকটায় খেয়াল রাখতে হবে।
×