ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেতু উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া, মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন আমার লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২১ আগস্ট ২০১৫

দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া, মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন আমার লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ছয় জেলায় ছয়টি মূল সেতুসহ নয়টি সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে এসব সেতু উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই তার সরকার সারাদেশে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন করছে। উদ্বোধনের সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথাও বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে একটা যোগাযোগের নেটওয়ার্ক আমরা তৈরি করছি, যাতে যোগাযোগটা আরও সহজ হয়, মানুষের জন্য যাতায়াত সুবিধা হয়। যোগাযোগ যত উন্নত হবে, অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগও তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এ কারণে সড়ক, রেল ও নৌপথের পাশাপাশি বিমানবন্দরের সুবিধা বাড়াতে সরকার কাজ করেছে বলে জানান তিনি। সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ মাদারীপুর (মোস্তফাপুর)-শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর নির্মিত সপ্তম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতুসহ (আচমত আলী খান সেতু) আরও তিনটি সেতু, ঢাকা দক্ষিণ-চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার সড়কে চন্দরপুর সেতু, চকোরিয়া-বদরখালী সড়কে নির্মিত বাটাখালী সেতু, গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বড়দহ সেতু, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কে নির্মিত শেখ রাসেল সেতু এবং সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর উপর নির্মিত আব্দুজ জহুর সেতু। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই আমার লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্যে শোকগাথা বুকে সয়ে কাজ করে যাচ্ছি শুধু একটা কারণে; আমার বাবা বাংলাদেশের মানুষকে খুব ভালবাসতেন। সেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার লক্ষ্য। এটুকু বলব যে, আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেভাবেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত করতে চাই, সমৃদ্ধশালী করতে চাই। বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে যেন বাঙালী জাতি অধিষ্ঠিত হতে পারেÑ সেটাই আমরা করতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। এরকম বন্ধ হয়ে যাওয়া ৪৮টি সেতুর কাজ ২০০৯ সালে আবার শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন কাজ বন্ধ করার জন্য বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরাতো উন্নয়ন চায় না। নিজের ভাগ্য গড়তে আসে। আমরা আসি জাতির ভাগ্য গড়তে। এসময় অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক সচিব এম এন সিদ্দিক গণভবনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেতু মন্ত্রণালয় জানায়, আচমত আলী খান সেতুর মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যার মধ্যে চীন সরকার দেয় ২০০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় ৯৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের ৩০৬ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত সেতুগুলোর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ-সুনামপুর-চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার সড়কে কুশিয়ারা নদীর উপর ২৪৯ দশমিক ৩৭ মিটার দীর্ঘ চন্দরপুর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। আর চকোরিয়া-বদরখালী সড়কে মাতামুহুরী নদীর উপর ৩০৬ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭০ দশমিক ৭৮ মিটার বাটাখালী সেতুটি নির্মাণ করা হয়। গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ২৫৩ দশমিক ৫৬ মিটার দীর্ঘ বড়দহ সেতুটির অনুমোদিত ডিপিপি ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ২২৬ দশমিক ৭৯৯ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়ন ব্যয় ১ হাজার ৫৮৫ দশমিক ৬৮ ছিল লাখ টাকা। ১৯৯৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বড়দহ সেতুর প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২৮ নবেম্বর ফের কাজ শুরু হয়ে ২০১৫ সালের ২৮ মে শেষ হয়। বাংলাদেশ সরকার ও জেডিসিএফ’র অর্থায়নে শেখ কামাল সেতু, শেখ জামাল সেতু ও শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের মহিপুর ও আলীপুরের মধ্যবর্তী খাপড়াভাঙ্গা নদীর উপর ২৪ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০৮ দশমিক ৩৬ মিটার দীর্ঘ নির্মিত শেখ রাসেল সেতুটি নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ও জেডিসিএফ’র অর্থায়নে সুনামগঞ্জ-কাঁচিরগাতি-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৭১ দশমিক ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০২ দশমিক ৬১ মিটার আব্দুজ জহুর সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
×