বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় সংযোজিত হলো সাফ অনুর্ধ-১৬ ফুটবলে চ্যাম্পিয়নশিপের মাধ্যমে। এদেশের একদল দামাল কিশোর এ গৌরব ছিনিয়ে এনেছে। ফুটবলে দীর্ঘ বন্ধ্যাত্ম কাটিয়ে একঝলক আশার আলো দেখানো এই কৃতী কিশোরদের বিজয়কে আমরা অভিনন্দন জানাই। ছোটদের মাধ্যমে এ বিজয়প্রাপ্তি হলেও এটাকে ‘ছোট’ করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কেননা এ বিজয় আগামী দিনে প্রেরণাসহ ফুটবলের ক্ষেত্রে খুলে দিল এক নতুন দিগন্ত।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফুটবল হয়ে পড়ে এক সোনালি অতীত। ফুটবলকে নিয়ে পুরনো স্মৃতি হাতড়ানো ছাড়া যেন গত্যন্তর ছিল না। গত কয়েক দশক ধরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবল নিয়ে এ দেশের কোন বড় অর্জন না থাকায় যেন দর্শক ও পৃষ্ঠপোষকরা অনেকটাই হতাশ। দিনে দিনে ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেটের প্রতাপ বাড়তে থাকে। তবে এই ক্রিকেট এমন এক উচ্চতায় আসীন হলোÑ বিশ্বে দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে হয় উজ্জ্বলতর। বৈশ্বিক পরিম-লে যেসব বিষয় নিয়ে গর্ব করা যায় ক্রিকেট এর মধ্যে প্রথম দিকে। ক্রিকেট ও ফুটবল হাডুডু বা দাঁড়িয়াবান্ধার মতো দেশজ খেলা না হলেও দুটি খেলাই এখন এদেশে বহুল পরিচিত ও সমাদৃত।
অনেক আগে থেকেই এ দেশে ফুটবল জনপ্রিয় হতে থাকে। মানুষের মনে এতটাই এর নান্দনিক ক্রীড়া নৈপুণ্য জায়গা করে নেয় যে, এটা যেন এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিভুক্ত খেলা। গ্রামেগঞ্জে এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে, ফুটবল উন্মাদনা পেয়ে বসে নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনপ্রিয়তার স্রোত এতটাই বেগ পায় যে, ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল করে নেয় একচ্ছত্র আধিপত্য।
ফুটবল এদেশে জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু, ভূমি ও মানুষের সাংস্কৃতিক মনোজগত। যে কোন ঋতুতেই এ দেশে ফুটবল খেলা যায়। ফুটবল খেলার অনুকূল পরিবেশ প্রায় সারাবছরই থাকে। এদেশে বিস্তীর্ণ ও সহজলভ্য সমভূমি ফুটবল খেলার উপযোগী। এদেশের মানুষ নির্মল আনন্দই বেশি পছন্দ করে। ফুটবলের মতো নির্মল ও কম সময়ের খেলা তাই আদৃত হয় দ্রুত। এই জনপ্রিয় খেলার স্মৃতি এখন যারা মধ্যবয়সী তাদের অনেকেরই শৈশব-কৈশোরের প্রিয় স্মৃতির অনুষঙ্গ। বড় বাতাবি লেবু, খড় বা ন্যাকড়া গোল করে ফুটবলসদৃশ করে শৈশব-কৈশোরে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে এ খেলা খেলেছেন অনেকেই। ফুটবল ঠিক এতটাই স্থান করে নিয়েছিল এ দেশের মানুষের মনেÑ তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে ক্লাবে, জেলা, বিভাগীয় পর্যায় প্রতিযোগিতা দেখতে। শেষ পর্যন্ত আবাহনী-মোহামেডানের খেলা উপভোগ করত। রেডিও-টেলিভিশনে হুমড়ি খেয়ে পড়ত ধারাবিবরণী শুনতে বা সরাসরি সম্প্রচার দেখতে। আফসোস হয়, সেই ফুটবলের সোনালি দিন আগের মতো নেই।
তবে নতুন করে আশার সঞ্চার হলো সাফ অনুর্ধ-১৬ ফুটবলে বাংলাদেশের কিশোরদের অর্জনের মধ্য দিয়ে। আবার সেই সোনালি দিন ফিরে আসার সম্ভাবনা দিচ্ছে উঁকি। মেয়েরাও এগিয়ে এসেছে ফুটবলে। বড়-ছোট এবং মহিলা সবার ক্রীড়া নৈপুণ্যে আগামীতে দেশের গ-ি পেরিয়ে বিশ্ব পরিম-লে ফুটবল জায়গা করে নেবে এমন প্রত্যাশা পূরণ করার সামর্থ্য এদেশের ছেলেমেয়ে, তরুণ-তরুণীদের অবশ্যই আছে। শুধু প্রয়োজন প্রেরণা আর পৃষ্ঠপোষকতা। সরকার, বাফুফে আর সমাজের বিত্তবানরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
শীর্ষ সংবাদ: