ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মরতে বসেছে যমুনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২০ আগস্ট ২০১৫

মরতে বসেছে যমুনা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষাকালে এবার স্মরণকালের লাগাতার প্রবল বর্ষণ সত্ত্বে¡ও পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত হলোনা নওগাঁর ছোট যমুনা নদী। অতীতে বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হলেও এবার প্রাণপণ চেষ্টা করেও বিপদসীমার নাগালের মধ্যে পৌঁছতে পারেনি পানির লেভেল। নদী তীরবর্তী মানুষ এবার দেখতে পেলনা ছোট যমুনার উত্তাল উগ্র রূপ। এক সময় বর্ষায় পূর্ণযৌবনা স্র্রোতস্বিনী নদীটি আজ ভরা মৌসুমেও পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদীর সেই দেশী প্রজাতির সুস্বাদু মাছও আর মিলছে না। এমন বিরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়েছে, নদী ভরাটের পাশাপাশি উজানে দিনাজপুর এলাকায় এই যমুনা নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার জন্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছোট যমুনা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর হয়ে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলির ওপর দিয়ে জয়পুরহাট জেলা অতিক্রম করে ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের পোড়ানগরে নওগাঁ জেলায় প্রবেশ করেছে। ইসবপুর পালপাড়ার কাছে এসে যমুনা চকইলাম ও শৈলপী হয়ে আগত ‘শ্রী’ বা চিরি নদীর প্রবাহ গ্রহণ করেছে। পরে ক্রমশ দক্ষিণবাহী হয়ে পতœীতলা উপজেলার পূর্বপ্রান্তবর্তী ত্রিমোহানীতে ‘ঘুকশী’র প্রবাহ নিয়ে বদলগাছী উপজেলা সদরের পূর্বকোল ঘেঁষে নওগাঁর কাছে মোক্তারপাড়ায় এসে কাটাখালের মাধ্যমে ‘তুলশীগঙ্গা’ নদীর প্রবাহ গ্রহণ করেছে। নওগাঁ শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে আরও দক্ষিণে নওগাঁ ও রানীনগর উপজেলা অতিক্রম করে আত্রাই উপজেলায় ‘আত্রাই’ নদীর প্রবাহের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীগুলো বর্ষায় স্ফীত হয়ে নৌ-চলাচলের উপযোগী পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত হয়। স্র্রোতস্বিনী হয়ে নদী ফিরে পায় তার নাব্য। এই নদী জেলায় প্রচুর পরিমাণ দেশী প্রজাতির মাছের জোগান দেয়। নদীতীরবর্তী এলাকার জমি পলি পড়ে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। নদীর পানিতে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাও পাওয়া যায়। কিন্তু এবার নদীর রূপ পাল্টে গেছে। উজানে দিনাজপুর এলাকায় নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার কারণে আজ মৃতপ্রায় বলে নদী সংশ্লিষ্ট সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। ফলে এই ভরা মৌসুমেও নদীর পানি যেন তলাতেই পড়ে রয়েছে। নদীতে এবার তেমন নৌকাও চোখে পড়েনি। নাব্য সঙ্কটে নৌ-চলাচলও তেমন একটা নেই। নদীতে পানি বৃদ্ধি না হওয়ায় মাছের আকাল লেগেই আছে। এ অবস্থায় ছোট যমুনাসহ নওগাঁর নদীগুলো পুনর্খনন এবং ছোট যমুনার উজানের বাঁধ অপসারণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে নওগাঁবাসী। বরগুনায় জলাবদ্ধতা নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা থেকে জানান, সদর উপজেলার পরিত্যক্ত ছোট বড় একশ’ ৭৭টি খাল খনন না করার কারণে বর্তমানে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমন বীজতলা দিনের পর দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় অধিকাংশই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ বছরের আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তাদের দাবি এ পতিত খালগুলো খননের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। একাধিক কৃষক ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগর উপকূলীয় বরগুনা জেলার মানুষ সিডর, আইলা, মহাসেনসহ একাধিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। অতিখরা, অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা এখানকার মানুষের নিত্য সঙ্গি। এখানকার জনসংখ্যার ৭০ ভাগ মানুষ কৃষিজীবী এবং ৩০ ভাগ মানুষ মৎস্যজীবী।
×