ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জহির রায়হানের জন্মদিনে শিল্পকলায় নানা অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২০ আগস্ট ২০১৫

জহির রায়হানের জন্মদিনে শিল্পকলায় নানা অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ছবি, তার সম্মুখভাগে আশিটি ছোট ছোট প্রদীপ দিয়ে রচনা করা হয়েছে জন্মদিনের বিশেষ আবহ। শিল্পকলার জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের প্রবেশ দ্বারে বুধবার সন্ধ্যায় বিরাজ করছিল এমনই এক মোহময় পরিবেশ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন জহির রায়হান। সেলুলয়েডের ফিতাকে তিনি বানিয়েছিলেন লড়াইয়ের অস্ত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধে যখন বন্দুক হাতে লড়েছে মুক্তিবাহিনী, জহির রায়হান তখন চলচ্চিত্রের ফ্রেমে করেছেন অন্যরকম যুদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশের আবির্ভাবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার ওই সমস্ত চলচ্চিত্র। বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা জহির রায়হানের চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকারের কথা, সংগ্রামের কথা। মুক্তিযুদ্ধে তার চলচ্চিত্র ছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালীর প্রেরণার উৎস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নিয়ে ষাটের দশকেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সাহসিকতার পরিচয় দেন জহির রায়হান। এমন সাহসী মানুষটি হারিয়ে যান দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দেড় মাস পরে, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে মিরপুর গিয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। জহির রায়হানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদের চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জহির রায়হানের জন্মদিনের এ অনুষ্ঠানে জহির রায়হানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী, সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের ও জহির রায়হানের পুত্র অনল রায়হান। প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অতিথিরা। সঙ্গে সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়ে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি সম্মেলক পরিবেশন করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীরা। এরপর সংগঠনের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীষের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জহির রায়হান বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একটি উজ্জ্বলতম নাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ববর্তী পর্যায়ে এবং স্বাধীনতার পরও অসামান্য দক্ষতায় একের পর এক চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তিনি দেশের চলচ্চিত্র প্রেমীদের মাঝে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর মাজুপুর গ্রামে জন্ম নেয়া জহির রায়হান চলচ্চিত্র ছাড়া সাহিত্য জগতেও অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানী আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। মিরপুর ছিল বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন। আলোচনা শেষে ‘শিল্পে যুদ্ধে জহির রায়হান’ শীর্ষক গীতি আলেখ্য পরিবেশন করে সংগঠনের মিরপুর শাখার শিল্পীরা। এরপর দেখানো হয় জহির রায়হান নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’। সবশেষে দেখানো হয় সেন্টু রায় নির্মিত ‘জহির রায়হান’ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। গানে গানে আব্দুর রহমান বয়াতীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন : দেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আব্দুর রহমান বয়াতীয় দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ছিল বুধবার। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ এক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে একতা বাউল শিল্পীগোষ্ঠী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এদিন সন্ধ্যায় শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশের বরেণ্য বাউল শিল্পীরা। অনুষ্ঠান সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে সেমিনার : বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস ২০১৫ উপলক্ষে এক সেমিনার হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা সেমিনার কক্ষে বুধবার বিকেলে। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি আয়োজিত এ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন আলোকচিত্রী রফিকুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ মিঠু, আনোয়ার হোসেন, নাসির মাহমুদ প্রমুখ। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে সংগঠনের নেতৃত্বে এক শোভাযাত্রা বের হয়ে শিল্পকলায় এসে শেষ হয়। সেমিনারে আনোয়ার হোসেনের তোলা মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত এক ডকুমেন্টারির প্রদর্শনী হয়। এছাড়া রফিকুল ইসলামের নির্মিত ‘জোন সিস্টেম’ নামের এক আলোকচিত্রের প্রদর্শনী হয়।
×