ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দেখা সেলিম আল দীন

চলে গেলে কেউ আর ফেরে না কখনো...

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ আগস্ট ২০১৫

চলে গেলে কেউ আর ফেরে না কখনো...

মোরসালিন মিজান স্বল্পায়ুর সেলিম আল দীন। সামান্যই সময় পেয়েছিলেন। তবে যেটুকু সময়, বাংলা নাট্যের শেকড় সন্ধান করে কাটিয়েছেন। হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। নিজেদের নাটকের মৌল উপাদানগুলো খুঁজেছেন। সযত্নে কুড়িয়ে নিয়েছেন। এভাবে বাংলা নাট্যের তাত্ত্বিক ভূমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা। সাহসী ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে নিজস্ব নাট্যাঙ্গিক নির্মাণ। সেলিম আল দীনের ছোট গল্পের জীবনটি যারপর নাই সার্থক হয়ে ওঠে। গত কয়েকদিন ধরে সেই সার্থক জীবনের কথা হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমিতে। এখানে শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণ করা হচ্ছে প্রিয় নাট্যকারকে। হ্যাঁ, মঙ্গলবার ছিল সেলিম আল দীনের জন্মদিন। প্রতিবারের মতো এবারও নানা আয়োজনে দিবসটি উদ্যাপন করছেন নাট্যকর্মীরা। জীবদ্দশায় সমালোচনা কম সইতে হয়নি সেলিমকে। আর এখন তাঁকে আবিষ্কারের আনন্দ। ঢাকা থিয়েটারের পাশাপাশি আছে স্বপ্নদল। আলোচনা ও নাটকের ভাষায় তুলে ধরা হচ্ছে প্রিয় নাট্যকারকে। চলছে নানা বিশ্লেষণ। খ্যাতিমান নাট্যকার স্মরণে চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার। শুরুটা ছিল মঙ্গলবার। বুধবার দ্বিতীয় দিনে নাট্যজন ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা সুহৃদরা একত্রিত হয়েছিলেন পরীক্ষণ থিয়েটার হলের সামনে। এখানে ‘অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়াপথ’ সেলিম আল দীনের প্রতিকৃতি। ফুলের পাপড়ি দিয়ে বিশেষ সাজানো সন্ধ্যায় এখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে আনুষ্ঠানের সূচনা করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। এ সময় পাশে ছিলেন সেলিম আল দীনের পতœী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা ও শিল্পসহচর নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। ছোট্ট করে সেলিম আল দীনের কথা বলেন তাঁরা। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এরপর পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ফুটিয়ে তোলা হয় প্রিয় নাট্যকারকে। ছিল ঢাকা থিয়েটারের ব্যতিক্রমী পরিবেশনা। সেলিম আল দীন রচিত বিভিন্ন নাট্যচরিত্রের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিমূল ইউসুফ। বিশাল মঞ্চে একলাটি তিনি। তবে অভিনয় দিয়ে ভরিয়ে রাখেন। সেলিম আল দীনের বিখ্যাত কয়েকটি নাটক থেকে নিয়ে চমৎকার একটি মালা গাঁথেন শিল্পী। ঢাকা মঞ্চের বিখ্যাত প্রযোজনা ধাবমান দিয়ে শুরু। এ পর্বটি শেষ করে তিনি চলে যান বিনোদিনী যৈবতী কন্যার মন নাটকে। এভাবে হাত-হদাই, চাকা, প্রাচ্য, বনপাংশুল, হরগজ। শুরুর মতো শেষটাও করেন ‘ধাবমান’ দিয়ে। নাটকের স্বস্তিবচনে সেলিম আল দীনকে হারানোর ব্যথাটুকু ভীষণভাবে বোধ হয়। এখানে সুরে সুরে বলাটি এরকম- ঊষর যাত্রা জেনে মৃত্যুকে দুই হাতে মৃতের শরীর/উচ্চে আগুনে তুলে ধরে, তৎপর/নিয়ে চলে যায় বুদ্ধের কুটির থেকে/দূরের প্রান্তরে। বুদ্ধ তাকিয়ে থাকেন/চন্দ্রের উত্থান দিগন্তের দিকে/ সেই দিকে চলে গেলে কেউ আর ফেরে না কখনো। দর্শকদের বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে শেষ হয় একক এই পরিবেশনা। আয়োজক সূত্র জানায়, তৃতীয় দিনে আজ বৃহস্পতিবার একই মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে সেলিম আল দীনের নাটক ‘স্বর্ণবোয়াল’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রযোজনার নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ। চতুর্থ দিন শুক্রবার বাড়তি থাকছে সেলিম আল দীন স্মারক বক্তৃতা। বিষয়- দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব ও শিল্প সৃজন বিষয়ক অপরাপর মতবাদ। একাডেমির সেমিনার কক্ষে বিকেল ৪টায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় নাটক ছাড়াও, প্রদান করা হবে সেলিম আল দীন পদক ২০১৫। সেলিম আল দীনের আলোচিত নাটক ‘নিমজ্জন’ দিয়ে শেষ হবে ঢাকা থিয়েটারের সেলিম আল দীন স্মরণানুষ্ঠান। ঢাকা থিয়েটারের আয়োজনের সঙ্গে আরও রয়েছে শিল্পকলা একাডেমি গ্রাম থিয়েটার ও সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন। একই সময় শিল্পকলা একাডেমিতে সেলিম আল দীন স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বপ্নদল। রবীন্দ্রনাথকেও আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস এখানে। সেøাগানটি তাই- ‘নিকষ আঁধারে সদা জাজ্বল্যমান, ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথ সেলিম আল দীন’। অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন বিকেলে ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন : নবীন দর্শকের দৃষ্টিতে’ শীর্ষক সেমিনার। সন্ধ্যায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে জাহিদ রিপনের নির্দেশনায় স্বপ্নদল পরিবেশন করে সেলিম আল দীনের নাটক ‘হরগজ’। বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় স্টুডিও থিয়েটার হলে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র মঞ্চায়ন।
×