ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীর সিকদার জামিনে মুক্ত ॥ দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ আগস্ট ২০১৫

প্রবীর সিকদার জামিনে মুক্ত ॥ দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ১৯ আগস্ট ॥ রিমান্ডের সময় শেষ না হওয়ার পরও দ্রুততার সঙ্গে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। বুধবার দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে ফরিদপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পেয়ে জেলগেটে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রবীর সিকদার বলেন, দেশবাসীকে স্যালুট জানাই। ফরিদপুরের সাংবাদিকরা আমার মুক্তির জন্য যে ভূমিকা রেখেছেন এজন্য ফরিদপুরের সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সারাদেশের সাংবাদিক কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন, গণজাগরণ মঞ্চ আমার জন্য যে ভূমিকা রেখেছিল তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে যারা আমার মুক্তির ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সাংবাদিকসহ মুক্তমনের মানুষের অন্তরের যে ব্যথা সেটা প্রতিফলিত হয়েছে আমার মুক্তির মাধ্যমে। জেলগেটে প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার, ছেলে পুলক সিকদার, বোন দীপ্তি সিকদার, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অলোক সেন, তার জন্মস্থান কানাইপুরের বাজার নেতা আরিফ হোসেন মুন্নাসহ নেতৃবৃন্দ আত্মীয়-স্বজন, মিডিয়াকর্মীসহ বহু উৎসুক জনতা ভিড় করে। প্রবীর সিকদার জেলগেট থেকে সরাসরি ফরিদপুর প্রেসক্লাবে হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় যান তার দুটি মুঠোফোন আনার জন্য। সেখান থেকে তিনি কানাইপুরে নিজের প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কিশলয় বিদ্যানিকেতনে যান। বিদ্যালয় দুটির বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী এ সময় তাদের প্রিয় শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করেন। দুটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চঞ্চল দত্ত ও জাহিদুর রহমান প্রবীর সিকদারকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রবীর সিকদার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রবীর সিকদারের জামিন মঞ্জুর করে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালত। আদালতে প্রবীর সিকদারকে হাজির করে জামিনের আবেদন করা হলে ওই আদালতের বিচারিক হাকিম মোঃ হামিদুল ইসলাম আবেদন মঞ্জুর করে তাকে জামিনের আদেশ দেন। প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু বলেন, আদালত মঙ্গলবার প্রবীর সিকদারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন প্রবীর সিকদারকে হেফাজতে নেয়ার পর বুধবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করেন। এ খবর শোনার পরই আমরা আদালতের নথি তলব করে জামিন চেয়ে আবেদন জানলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে প্রবীর সিকদারের জামিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতে প্রবীর সিকদারের জামিন চাওয়া হলে বাদী এবং রাষ্ট্রপক্ষের কোন আইনজীবী তার বিরোধিতা করেনি। পরে আদালত পাঁচ হাজার টাকার জামিননামায় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত প্রবীর সিকদারের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের আবেদন জানিয়ে এ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু বলেন, প্রবীর সিকদার শহীদ পরিবারের সন্তান। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার শরীরের মধ্যে শতাধিক স্পিøন্টার রয়েছে, ওনার এক পা নেই। তিনি হৃদরোগী। প্রতিদিন তাকে ২০ ধরনের ওষুধ খেতে হয়। এ রকম একজন ব্যক্তিকে জামিন দেয়া হলে তিনি আদালতের আদেশের বরখেলাপ করবেন না। এ সময় আদালতে বাদী স্বপন পাল, বাদীপক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় ও জাহিদ ব্যাপারী উপস্থিত ছিলেন। তারা জামিনের এ আবেদনের বিরোধিতা করেনি। বাদীপক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় বলেন, প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদন জানালে আমরা কেউ তার বিরোধিতা করিনি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আমাদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বলেন, প্রবীর সিকদারের তিনদিনের রিমান্ডের শুনানি একদিনে শেষ করে বুধবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। প্রবীর সিকদার একটি শহীদ পরিবারের সন্তান। দৈনিক বাংলা ৭১, উত্তরাধিকার-৭১ নিউজ অনলাইন পত্রিকা ও উত্তরাধিকার নামের এক ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক। তাঁর বাড়ি ফরিদপুর সদরের কানাইপুরে। এর আগে তিনি জনকণ্ঠের ফরিদপুর জেলার নিজস্ব সংবাদদাতা ও পরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে তিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। সাংবাদিক প্রবীর সিকদার মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান। তার বাবাসহ পরিবারের ১৪ জন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শহীদ হয়েছিলেন। দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুরের নিজস্ব সংবাদদাতা থাকাকালে পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। এরপর ২০০১ সালের ২০ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন। বর্তমানে একটি পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি। প্রসঙ্গত সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গত রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আটক করা হয়। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তার নামে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলাটি করেন আওয়ামী লীগ নেতা, ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা জজকোর্টের এপিপি এ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতার করে সোমবার ভোরে তাকে ফরিদপুর নিয়ে আসা হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে প্রবীর সিকদারকে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ভুল করিনি ॥ জীবনের হুমকির জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় আটকের তিনদিনের মাথায় মুক্তি পাওয়া সাংবাদিক প্রবীর সিকদার বিবিসিকে বলছেন, তিনি কোন ভুল করেননি। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই ফেসবুকে কাউকে মানহানি করা নিয়ে তার কোন অনুশোচনা হচ্ছে কিনা- এই প্রশ্নে প্রবীর সিকদার বলেন, প্রশ্নই আসে না, একজনের মানহানির চেয়ে আমার জীবনের শঙ্কা অনেক জরুরী। গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে প্রবীর সিকদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু জামিনের পর তিনি দাবি করেন, তাকে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
×