ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকের বাসায় কাজের মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ আগস্ট ২০১৫

বিচারকের বাসায় কাজের মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি থেকে নির্যাতিত শিশু বিথীকে (১০) উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিচারক নুরুল ইসলামের বাসা থেকে উদ্ধার করার সময় শিশুটির হাত-পা বাঁধা, চুল কাটা, হাত, পিঠ ও নিতম্বে পোড়া দাগ দেখা গেছে। তার শরীরে ছোট বড় ৩০টি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশু বিথী ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের বড় আমিনীয়া গ্রামের গোলাম রসুলের মেয়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অমানবিক নির্যাতনের শিকার এই শিশুটি বুধবার দুপুর ১টা থেকে বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ‘পানি দাও, পানি খাব’ বলে আকুতি জানালে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ বিকেলে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, দুপুরের পরে শিশুটিকে উদ্ধার করতে গেলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পুলিশকে ঘরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নম্বর-১ শিমুল কুমার বিশ্বাস, এএসপি সার্কেল আনোয়ার সাঈদসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা এলে ঘরের দরজা খুলে দেয়া হয়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। তার গায়ে পোড়া, ছ্যাঁকা এবং আঘাতের ৩০টিরও বেশি চিহ্ন রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা জানান। তবে কাজের মেয়ে বীথি (১০) তার ওপর কোন ধরনের নির্যাতনের কথা বলতে অস্বীকার করে। এমনকি দগদগে ক্ষতচিহ্নগুলো দেখাতেও আপত্তি জানায় সে। তার চোখেমুখে ছিল ভয়ার্ত আতঙ্ক। সাতক্ষীরা শহরের টাউনবাজার ব্রিজের বিপরীতে পলাশপোল মহল্লায় মোঃ আকরাম হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন বিচারক নূরুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রায়ই শিশুটির আর্তচিৎকার তারা শুনতেন। প্রতিবেশীরা মেয়েটির চিৎকার শুনে এগিয়ে এলেও তার সঙ্গে তারা কথা বলতে দিতেন না। দিনভর ঘরের দরজা বন্ধ থাকত। বুধবার বেলা একটার দিকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলাম আদালতে থাকাকালীন কাজের মেয়ে বীথি বাসার ব্যালকনিতে আটক অবস্থায় বারবার পানি চায়। প্রতিবেশীরা জানান, তাকে দিনে রাতে কাজের সময় ব্যতীত অন্য সব সময় ওই ব্যালকনিতে কাটাতে হয়। মেয়েটির আকুতির খবর প্রথমে থানায় পৌঁছালে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ একদল পুলিশ নিয়ে সেখানে চলে আসেন। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এ সময় সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার সাঈদ এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ আব্দুল সাদী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা ও তার সহকর্মী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল কুমার বিশ্বাস সেখানে পৌঁছান। তাদের সঙ্গে ছিলেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলাম। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দরজা খুলে দেয়া হয়। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার বড় আমিয়ান গ্রামে বাড়ি শিশু বীথির। সাতক্ষীরা আদালতের কর্মচারী সোহরাব হোসেন তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে এনে দেন। এদিকে আতঙ্কিত শিশুটি তার শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখাতে বার বার অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি ওড়না সরিয়ে মাথা ছাড়াও পিঠ, হাত দেখাতেও অস্বীকৃতি জানায়। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম ও নারী নেত্রী নাসরিন খান লিপির অনুরোধে সে ক্ষতচিহ্ন দেখায়। মেয়েটির চুল সদ্য কাটা অবস্থায় দেখা যায়। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা বীথির শরীরের এই ক্ষত ও নির্যাতনের চিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলাম এ সময় সেখানে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি সাংবাদিকদের বার বার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এদিকে বিচারক নুরুল ইসলাম মেয়েটিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ২৪ মে তার ছেলে তানজিম আহমেদ (৩) নিজ ঘরে রাখা টেলিভিশনের ট্রলিতে চাপা পড়ে মারা যায়। তার কিছুদিন পর বীথিকে কাজের মেয়ে হিসেবে তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সম্প্রতি তাকে এই বাড়িতে আনা হয়েছে। তবে এসব ঘটনা নিয়ে নুরুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে তার স্ত্রী নাতাশা বাড়ির মধ্যে একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। সাতক্ষীরার সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার সাঈদ জানান, তাদের কাছে খবর আসে যে, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলাম তার ভাড়া বাড়িতে কাজের মেয়েকে নির্যাতন করেছেন। মেয়েটির আকুতির কথা তাদের কাছে পৌঁছানো মাত্রই পুলিশ আসে। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তারা দরজা খোলেন। তিনি জানান, মেয়েটির দেহে অনেক ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত করে বলা যাবে। সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের জানান, ‘অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, মেয়েটিকে আপাতত চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
×