ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও গেল না আঁধার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২০ আগস্ট ২০১৫

এখনও গেল না আঁধার

বিজ্ঞান ও সময়োপযোগী কারিকুলাম যেখানকার প্রাণ সেখানেই যদি পশ্চাৎপদতা, কূপম-ূকতা, মৌলবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান বিরাজ করে এর চেয়ে দুঃখ ও লজ্জাজনক আর কী হতে পারে! বিষয়টিকে কোনভাবেই শুধু একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব ব্যাপার হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বাস্তবতা এমনই যে, দেশবাসীর আবেগ, শ্রদ্ধা ও সংবিধান এর সঙ্গে জড়িত। অতীতে একসময় প্রয়োজনের তাগিদে ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সরকারী-বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র, আসবাবপত্রে ‘পাকিস্তান, ইস্ট পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব বাংলা’ ইত্যাকার শব্দ মুদ্রিত বা খোদাই ছিল। এখন স্বাধীনতা প্রাপ্তির চার দশকেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেছে। বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট হয়েছে পরিবর্তিত। এখন ওইসব শব্দ ব্যবহারের প্রশ্ন তোলাই অপরাধ। ভাবতে অবাক লাগে বুয়েটের মতো এমন স্বনামখ্যাত, ঐতিহ্যবাহী, সৃজনীশক্তিসম্পন্ন মেধাবী নাগরিক তৈরির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্রে এখনও ‘ইস্ট পাকিস্তান’ শব্দটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেন উপহাস করছে! এতে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের মানসিকতার বহির্প্রকাশ ঘটে। এই প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষণের কথা বেশ আগে থেকেই আলোচিত। বুয়েটের ভাবমূর্তিতে আরও নেতিবাচক ছাপ লাগে চলতি মাসে। বঙ্গবন্ধুর স্মরণ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে দায় সারে। যদিও কতিপয় ব্যক্তি ও একটি সংগঠন এবার উদ্যোক্তা হয়ে সম্মানজনক পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের আমরা সাধুবাদ জানাই। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই মহান নেতাকে এমনই দায়সারাগোছের স্মরণ করেছে। ন্যূনতম আলোচনা সভার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেনি বঙ্গবন্ধুকে। সবচেয়ে বড় অবজ্ঞা দেখিয়েছে সংবিধানের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন নিশ্চিত না করে। দেশের একটি অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে অবহিত নন এমনটা কেউ মানবে না তা নিশ্চিন্তেই বলা যায়। আরও পরিতাপের বিষয়, সরকারী সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও এ প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কোন ভাস্কর্য স্থাপিত হয়নি। দৃশ্যমান কোন অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জাতির চলার পথের মূলধারা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। এমন বাস্তবতা কারও কাম্য নয়। বুয়েটে যত দ্রুত দেশ-জাতির মূলধারা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে ততই মঙ্গল।
×