ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষা একটি আবেগের নাম

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ আগস্ট ২০১৫

বর্ষা  একটি আবেগের নাম

নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, পাহাড়-পর্বত, বন ও দ্বীপসহ নানান প্রাকৃতিক উপকরণে সুসজ্জিত সবুজে ঘেরা আমাদের বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ছয় ঋতুর ভিন্ন মাত্রা ও রূপ নিয়ে প্রকৃতি যেন হাজির হয় মহাপ্রসন্ন চিত্তে, উজাড় ভালবাসা নিয়ে এবং এ যেন শহরকে ছাপিয়ে- বাংলার গ্রামকে মুগ্ধ করা বৈচিত্র্যে চিত্রিত করে। যদিও বা সমতল, চরাঞ্চল ও পাহাড়ী অঞ্চলের দৃশ্যপট ভিন্নতর। বর্ষা সজীবতার নাম, একটি আবেগের নাম। তাই তো বিশেষ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখায় বর্ষা ও আবেগের মহাসম্মিলন বার্তা বিশেষ উপভোগ্য। জলবায়ুর প্রভাবে ঋতুচক্রের কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয়, তবে বৈচিত্র্য বর্তমান। বর্ষা-অনুভূতি গ্রাম বাংলায় বেশ স্পষ্ট। প্রচ- গরমে বর্ষা শান্তির ও স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। সমস্ত গাছ-গাছালি প্রাণ ফিরে পায়, স্বচ্ছ ও ঘন সবুজে ভরে ওঠে তাদের দেহ। রোমান্টিক মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ উপভোগ করে। টিনের চালে বৃষ্টির মনভুলানো শব্দ বিশেষ আচ্ছন্ন করে মনকে। দেখা যায়- একদল শিশু-কিশোর-তরুণ ভিজে ভিজে খেলছে, পুকুরে/বিলে/নদীতে সমস্ত শরীর ডুবিয়ে মুখম-লে পড়া বৃষ্টির ফোটা উপভোগ করছে। বিলে কলাগাছের ভেলা বা ছোট্ট নৌকায় চরে শাপলা আহরণ, পদ্মফোটার আগমনী রূপ অনুভব করা, ঝুমকো জবা, মাধবীলতা, কদম আর বকুল গাছটির ফুলে ফুলে ভরে যাওয়া আর বকুল ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা যেন বর্ষার অনন্যরূপ। কৃষক দলের একাংশ দেশীয় আমন সুগন্ধি- কালিজিরা, খিরশা, কাটারিভোগ রোপণ করে। পাটচাষী ভিজে ভিজে পাট কেটে জাক দিয়ে রাখে ডোবায়, পাটকাঠি গুছিয়ে বিশেষ ভঙ্গিতে রাখে। বর্ষায় গ্রাম বাংলার প্রতি ঘরে নানান প্রজাতির দেশীয় মাছের পর্যাপ্ততা লক্ষণীয়। ঘরে ঘরে মানুষ ঝাঁকিজাল, চটকাজাল, ফাঁসিজাল, হ্যাংলাজাল, পোলো ও ডারকি পেতে মাছ ধরে। রাতে হ্যাজাক বা চার্জার লাইট জ¦ালিয়ে খোঁচা দিয়ে মাছ ধরে। বড়শীরও কমতি নেই। গরু-ছাগল-মুরগিকে মাঠে দেখা না গেলেও হাঁসের চঞ্চলতা বিশেষ উল্লেখ করার মতো। বর্ষার অলস দিনে দাদু-দিদাকে কিচ্ছা-কাহিনী শোনাতে দেখা যায়, টান টান উত্তেজনা নিয়ে শিশুরা বসে থাকে চারদিক ঘিরে। দু-তিন বাড়ির নারীরা একসঙ্গে বসে গল্প, কাঁথা সেলাই কেউবা লুডু খেলে এবং তরুণরা/পুরুষেরা ছোট্ট চায়ের দোকানে গল্প-গুজবে মেতে ওঠে, দাবা, আটকোটা, ক্যারামবোর্ড খেলে। খুব কম হলেও কোথাও কোথাও গানের আসর জমতে দেখা যায়। গ্রামের মূল রাস্তাটি পাকা হলেও ভেতরের রাস্তা কাঁচা। বর্ষায় রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়। ছাতা/ঝাঁপি মাথায় এক-পা ভর্তি কাদা নিয়ে চলতে দেখা যায় মানুষকে। খলিলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম থেকে
×