ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেবেলা বাদলবেলা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ আগস্ট ২০১৫

ছেলেবেলা বাদলবেলা

এক সময় বর্ষাকাল শব্দটি শুনলে অনেক আনন্দ পেতাম। ভাবতাম এ বুঝি ষড়ঋতুর বাংলাদেশ, ঋতুবর্ষার বাংলাদেশ। বর্ষা এলে দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম আগত নতুন পানিতে। বর্ষাঋতু তার স্নিগ্ধ সজল রূপ নিয়ে যেমন আসে, অন্য ঋতুর বেলায় তা দেখা যায় না। বর্ষার পানিতে ছেলে-মেয়েদের মিলেমিশে হৈ-চৈ করে ছুটে চলা ছিল আনন্দের। সে থেকে বর্ষাকে আমাদের আপন পরিবারের বন্ধনে রপ্ত করেছি। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বহু নদী-নালা, খাল-বিল কমে গেছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে অনেক কৃষি আবাদি জমি ভরাট করে বসতবাড়ি স্থাপন করা হয়েছে। এজন্য অনেক সময় বর্ষা এলে গ্রাম অঞ্চলগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। নৌকা ছাড়া কোথাও বের হওয়া যায় না। বর্ষা এলে যেমন অনেক সময় প্রকৃতি খুঁজে পাই, পাশাপাশি ক্ষতির দিকটাই বেশি হয়। অতিবৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হয়, ডুবে যায় রাস্তা-ঘাট ও ঘরবাড়ি। এ সময় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। জিনিসপত্রের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকাল একটা শিল্পীর আঁকা ছবি। মাঠে-ঘাটে পানির ঢেউ বিলে শাপলা ফুল, মাঝিদের পালতোলা নৌকা এই যেন শিল্পীর রং তুলিতে কোমল হাতের মধুর যতেœ আঁকা ছবি। ঋতুচক্রে বর্ষার স্থান দ্বিতীয়। প্রচ- উত্তাপ, অসহনীয় গরমের ঋতু গ্রীষ্মের পরেই বর্ষার স্থান। আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দু’মাস নিয়ে বর্ষাকাল হলেও বর্ষাকালের গ-ি শুধু এ দু’মাসে সীমাবদ্ধ নয়। বর্ষার উদ্দামতার হাত ধরেই আসে ভাদ্রের ভরা বর্ষণ, আর প্রকৃতিতে থৈ থৈ করে বন্যার পানি। মাঝখানে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বঙ্গ প্রকৃতি তার উন্মত্ত, প্রাণচঞ্চল রূপের বিচিত্র প্রকাশের বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। গ্রামাঞ্চলের পথঘাট কর্দমাক্ত হলেও বেশিরভাগ শহরের পথঘাটে চলাচল করতে কষ্ট হয়। নোংরা আবর্জনার দূষিত পানিতে চলাচল করতে হয় শহরবাসীকে। এতে করে নানা রকম অসুখে পড়তে হয়। এ সময় ডায়রিয়া এবং আমাশয়ে বহু লোকের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ে বেশি। সব মিলিয়ে বর্ষা যেন বাংলার অহঙ্কার মূর্তমূর্তি। বর্ষা আমাদের হৃদয়জুড়ে গেঁথে আছে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হয়ে। একালে এসে আগের মতো বর্ষার আমেজ চোখে পড়ে না। ছেলে-মেয়েদের ঝাঁক বাঁধা হৈহুল্লোড় পানিতে ভেলা ভাসানো এ যেন একেবারেই উঠে গেছে। যার কারণে বর্ষা এলে হারানো অতীতকে খুঁজে পেতে মন ছোটাছুটি করে। বর্ষা বাঙালীর মনভূমিকে করে সরস এবং কাব্যময়। বর্ষার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের মনকে বিমোহিত করে। বাংলাদেশের বহু কবির জীবনে বর্ষার প্রভাব সুস্পষ্ট। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাব্যে বর্ষা বিরাট স্থান দখল করে আছে। তাছাড়া গোবিন্দ দাস, অক্ষয় কুমার বড়াল, জসীমউদ্দীন প্রমুখ কবি বর্ষা সম্বন্ধে প্রচুর কবিতা লিখেছেন। বর্ষা এলে বিশেষ করে বর্ষার মেঘমেদুর আবহাওয়া বৃষ্টির অবিরল ধারা, টাপুর-টুপুর শব্দ মানুষের মনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এ সময় মানুষ হারানো অতীতকে রোমন্থর করে আনন্দ পায়। অতীত দিনের স্মৃতিগুলো একের পর এক ভেসে ওঠে তার মানসপটে। হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর থেকে
×