ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিধ্বস্ত বার্সিলোনার ছয় শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৯ আগস্ট ২০১৫

বিধ্বস্ত বার্সিলোনার ছয় শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটা সময় স্বর্ণালী সময় কাটিয়েছে এ্যাথলেটিক বিলবাও। বিশেষ করে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম। সেবার তারা জিতেছিল স্প্যানিশ লা লিগা, স্প্যানিশ কোপা ডেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা। তারপর থেকেই যেন হারিয়ে যাওয়ার শুরু! যুগ যুগ ধরে শুধু হতাশই হতে হয়েছে ক্লাবটির সমর্থকদের। তিন বছর আগে অবশ্য শিরোপার কাছাকাছি পৌঁছেছিল বাস্ক কাউন্টির দল। কিন্তু উয়েফা ইউরোপা লীগের ফাইনালে উঠেও হার মানতে হয়েছিল স্বদেশী ক্লাব এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে। অবশেষে দীর্ঘ সংগ্রাম ও অধ্যবসায়ের ফসল পেয়েছে দলটি। পরাশক্তি ও ফেবারিট বার্সিলোনাকে উড়িয়ে দিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা জিতেছে এ্যাথলেটিক বিলবাও। নিজেদের মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচে কাতালানদের ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শিরোপা একপ্রকার নিশ্চিত করে রেখেছিলেন আদুরিজ, কার্লোসরা। সোমবার রাতে ন্যুক্যাম্পে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি ড্র হয় ১-১ গোলে। এই ম্যাচেও গোল করেন আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা আদুরিজ। আসরের ১১ বারের শিরোপাজয়ী বার্সার হয়ে গোলটি করেন লিওনেল মেসি। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের জয় নিয়ে ৩১ বছর পর শিরোপা জয়ের উল্লাস করেছে বিলবাও। প্রথম লেগে পরাশক্তি বার্সার জালে এক হালি গোল দিয়ে উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বিলবাও। চার গোলে পিছিয়ে থেকে শিরোপা জয় যে সহজ হবে না সেটা মাথাই রেখেই দ্বিতীয় লেগ খেলতে নেমেছিল বার্সিলোনা। অলৌকিক কিছু করে বিলবাওকে দ্বিতীয় লেগে উড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যও ছিল। ম্যাচের আগে এমনই আভাস দিয়েছিলেন কোচ লুইস এনরিকে, অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাসহ অন্যরা। কিন্তু ময়দানী লড়াইয়েরও শুরু থেকেই দেখা যায়, ভাবনা আর কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক। মেসি যদিও প্রথমার্ধের শেষ দিকের গোলে আশা জাগিয়েছিলেন বার্সা সমর্থকদের, কিন্তু আকাশছোঁয়া লক্ষ্যটা শেষ অবধি পূরণ হয়নি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে আরিজ আদুরিজের গোল বিলবাওয়ের সুপার কাপ জয়ের স্বপ্ন উজ্জ্বল করে। এই আদুরিজই প্রথম লেগে হ্যাটট্রিক করে বার্সাকে তলানিতে ফেলে দেন। ম্যাচের শুরু থেকে অবশ্য দুর্ভাগ্য ভর করতে থাকে বার্সা শিবিরে। ষষ্ঠ মিনিটে পেড্রোর শট বিলবাওয়ের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। জেরার্ড পিকের একটি শট ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হয়। ৩৮ মিনিটে গোল পেয়ে যেতে পারত বিলবাও। জ্যাভিয়ের এরাসো গোলে শট না নিয়ে আদুরিজকে বাড়িয়ে দিলেই গোলটি পেয়ে যেত বিলবাও। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে ইভান রাকিটিচের বাড়ানো বল বুক দিয়ে নামিয়ে মেসির দিকে বাড়ান সুয়ারেজ। পোস্টের কাছাকাছি জায়গা থেকে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বিরতির পর ৫৬ মিনিটে জেরার্ড পিকে লালকার্ড দেখলে দশজনের দলে পরিণত হয় বার্সিলোনা। যে কারণে তাদের ফিরে আসার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। পাশাপাশি বিলবাও কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে গেলে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়ে বার্সিলোনার জন্য। ৭৫ মিনিটে আদুরিজ গোল করে বার্সার আশায় জল ঢেলে দেন। ম্যাচের ৮১ মিনিটে নায়ক আদুরিজের পরিবর্তে মাঠে নেমে ৮৫ মিনিটেই লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বিলবাওয়ের স্ট্রাইকার কিকে সোলা। মজার বিষয় হচ্ছে, দু’দলের দু’জন লালকার্ডধারীর নাম পিকে ও কিকে। বিলবাওয়ের চ্যাম্পিয়ন করার নায়ক আদুরিজ সুপার কাপের এই শিরোপাকে তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্প্যানিশ টিভি টেলেসিনকোকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, শিরোপা জয় দারুণ একটা বিষয়। আমাদের সবার জীবনেরই অন্যতম সেরা ঘটনা এটি। আমার মেয়ের জন্মের পর এই শিরোপাই আমার জীবনের সেরা ঘটনা, আমার সবচেয়ে খুশির দিন। বার্সিলোনা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা বলেন, আমরা ম্যাচে সবকিছুই চেষ্টা করছিলাম। তবে পিকেকে লালকার্ড দেখানোয় আমাদের জন্য সবকিছু আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রেফারির এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছি না। তিনি অন্য কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। একটি লালকার্ডের জন্য আমরা পিছিয়ে পড়ি। শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার জন্য এটা বড় কারণ। বার্সিলোনাকে অবশ্য ‘প্রতিশোধ’ নেয়ার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ২৩ আগস্ট বিলবাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে বার্সার লা লিগার শিরোপা ধরে রাখার মিশন।
×