ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘরে এলো স্বপ্নের শিরোপা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৯ আগস্ট ২০১৫

ঘরে এলো স্বপ্নের শিরোপা

রুমেল খান, সিলেট থেকে ॥ টান টান উত্তেজনা। শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিটি মুহূর্ত। মনে ডাকছে কু-ডাক। সবার মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, কি হয়, কি হয়! না, শেষ পর্যন্ত জয়ী বাংলাদেশই। সাফ অনুর্ধ ১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরে অশ্রুজলে বুক ভাসাতে হয়নি স্বাগতিক দলের ফুটবলারদের এবং কোটি কোটি বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীকে। বরং জিতে ভেসেছে আনন্দের জোয়ারে। তবে জয়টা এত সহজে আসেনি। অপরাজিত শিরোপা জেতার জন্য বাংলাদেশকে আশ্রয় নিতে হয় টাইব্রেকার নামের ভাগ্যপরীক্ষায়। আর তাতে ৪-২ গোলে জয়ী সৈয়দ গোলাম জিলানীর কিশোর শিষ্যরাই। মঙ্গলবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলাটি ড্র হয় ১-১ গোলে। নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত আরও ৩০ মিনিটের খেলা অনুষ্ঠিত না হয়ে সরাসরি টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হয়। আর তাতে ভাগ্য ও স্নায়ুর লড়াইয়ে বিজয়ীর শেষ হাসি হাসে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ দলের দুরন্ত কিশোররাই। টানা তিন আসরে অংশ নিয়ে এই প্রথম ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করল নিপু-শাওন-সাদরা। ৯০ মিনিটের ম্যাচে বাংলাদেশ ৪৬ মিনিটে প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায়। মিডফিল্ডার মোহাম্মদ শাওন দুই ভারতীয় ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বক্সে ক্রস করে। বল পেয়ে যায় আরেক মিডফিল্ডার ফাহিম মুর্শেদ। দ্রুততার সঙ্গে বাঁ পার্য়ের গড়ানো শটে গোল করে সে (১-০)। তবে বাংলাদেশ দলের এই গোল-আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে স্টেডিয়াম স্তব্ধ করে দেয় ভারতের মিডফিল্ডার অময় অবিনাশ মরাজকার। প্রায় ৪০ মিটার দূর থেকে আচমকা এক শটে গোল করে ভারতকে সময়তায় ফেরায় সে (১-১)। উভয়দলই গোল করার একাধিক সুযোগ নষ্ট করে। এরপর খেলা গড়ায় ‘মহা টেনশন’-এর টাইব্রেকারে। তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে বিদ্যুত বিভ্রাটে ম্যাচ বন্ধ থাকে প্রায় ৮ মিনিট। পরে বিদ্যুত এলে খেলা শুরু হতে না হতেই রেফারির বাঁশি। অতিরিক্ত সময়ে না গিয়ে সরাসরি ট্রাইব্রেকারে চলে যায় ম্যাচ। টান টান উত্তেজনা। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। বাংলাদেশ প্রথমে শট নেয়। ফাহিম মুর্শেদ ভারতীয় গোলকিপারকে পরাস্ত করতে ভুল করেনি (১-০)। গোল করে সমতা আনে ভারতের সৌরভ মেহের (১-১)। শট নেয় বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম সজীব। গোল (২-১)! ভারতের মোহাম্মদ রাকিপ গোল করে (২-২)। বাংলাদেশের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান গোল করে আবারও এগিয়ে রাখে বাংলাদেশকে (৩-২)। কিন্তু ফিরতি শটে ভারতের অভিজিৎ সরকার মিস করে বসেন! বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এগিয়ে যায় বাংলাদেশ! পরের শটে গোল করেন বাংলাদেশের সাদ উদ্দিন (৪-২)। কিন্তু ফিরতি শটে ভারতের সাকলাইন খান মিস করে বসেন আবারও! তার শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরে ফেলে বাংলাদেশের গোলরক্ষক ফয়সল আহমেদ। জয়! বাংলাদেশের! ভারত এ নিয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো ফাইনালে ওঠে। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতার সুযোগ ছিল তাদের। বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি বাদল রায়, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, মহিলা ফুটবল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, সদস্য সত্যজিৎ দাস রূপুসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় এই টুর্নামেন্ট। একে স্মরণীয় করে রাখার উপায় একটাইÑ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তাহলেই গড়া হবে নয়া ইতিহাস। আর সেটাই হয়। ফাইনালের আগে মুখোমুখি পরিসংখ্যানে দু’দলই ছিল সমান অবস্থানে। দুটি ম্যাচে প্রত্যেক দলই জিতে একটি করে ম্যাচ। ২০১৩ সালে নেপালের কাঠমান্ডুর আর্মি গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আসরে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে এ আসরে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয় বাংলাদেশ। এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ হারায় শ্রীলঙ্কাকে ৪-০ এবং ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়। সেমিতে আফগানিস্তানকে হারায় ১-০ গোলে। আর ভারত শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ গোলে হারায় এবং বাংলদেশের কাছে ১-২ গোলে হেরে গ্রুপ রানার্সআপ হয়। সেমিতে তারা ১-০ গোলে হারায় নেপালকে। বাংলাদেশ দল ॥ ফয়সল আহমেদ (গোলরক্ষক), শাওন হোসাইন (অধিনায়ক), ফাহিম মোর্শেদ, মোহাম্মদ হৃদয়, মোহাম্মদ শাওন, সাদ উদ্দিন, মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম সজিব, খলিল ভুঁইয়া, মোস্তাজিব খান, ইমন খান। ভারত দল ॥ সাকলাইন খান, অজিন টম, মোহাম্মদ রাকিপ, মোহাম্মদ শাহজাহান, অময় অবিনাশ মরাজকার, রাহিম আলী, জেরেমি লালদিনপুইয়া, আয়মল চংগমপিপা, অভিজিৎ সরকার, জিয়ানচুন রংমেই, প্রভুষ্কান সিং গিল (অধিনায়ক ও গোলরক্ষক)।
×