ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাঙ্গাকারার বিদায়ের মঞ্চ প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৯ আগস্ট ২০১৫

সাঙ্গাকারার বিদায়ের মঞ্চ প্রস্তুত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সমাপ্তির পথে লঙ্কান ক্রিকেটের আরও এক ঐতিহাসিক যুগ। সনাথ জয়সুরিয়া-মুত্তিয়া মুরলিধরনোত্তর সময়ে দিকপাল হয়ে ছিলেন যে দুজন কুমার সাঙ্গাকারা তাদের অন্যতম। অপর জন বন্ধু মাহেলা ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছেন। এবার সাঙ্গার পালা। কলম্বোয় বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া ভারত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানাবেন তিনি। একটি মাত্র ম্যাচ, পাঁচটি দিন, তারপরই সমাপ্তি ঘটবে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের আরও এক দিকপালের। পি সারা ওভাল, রাজধানী কলম্বো, তথা গোটা দ্বীপদেশই প্রস্তুত। ম্যাচ জিতে সাঙ্গাকে বিদায় বেলায় সিরিজ উপহার দিতে মরিয়া বর্তমান অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। অন্যদিকে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রামের মাঝেও আধুনিক ক্রিকেটে ভদ্রলোকের প্রতিমূর্ত এই কিংবদন্তিকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাচ্ছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়াবর্ধনের আগমন এক যুগসন্ধিক্ষণে। ১৯৯৬Ñ এ একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ে দ্বীপ দেশটিকে ‘জিরো থেকে হিরো’ তে রূপান্তর করে অর্জনা রানতুঙ্গার দল। যেখানে মুখ্য ভূমিকা সনাথ জয়সুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা, চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরলিধরনদের। যারা ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে বিদায় নেন। সাঙ্গার আগমন ২০০০Ñএ। বলতে গেলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশটির ক্রিকেটকে টেনে এনেছেন দুই বন্ধু। অর্জনে, রেকর্ড-পরিসংখ্যানে হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি। আজ তার নামের পাশে ১২ হাজারের ওপরে টেস্ট এবং ১৪ হাজারের বেশি ওয়ানডে রান। দুই ভার্সন মিলিয়ে ৬৩ সেঞ্চুরি! অধিনায়ক ম্যাথুস বলেন ‘সাঙ্গাকারার সঙ্গে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। সিরিজ জয়ই হতে পারে ওর মতো গ্রেটের বিদায়ের সেরা উপহার। গলে প্রথম টেস্ট জিতে আমরা সেই পথে রয়েছি। কলম্বো টেস্ট জিতে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ নিশ্চিত করতে চাই। সাঙ্গাকে জয় উপহার দিতে প্রস্তুত সবাই।’ আবেগ ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক কোহলিকেও, ‘কেউ যখন অবসর নেয়, আমি তখন কিছুতেই নিজেকে মেলাতে পারি না। আমি আবেগটা কল্পনা করতে পারি। গত বিশ বছর প্রতিদিন কী করেছে, বিদায় বেলায় সাঙ্গা হয়ত সেটাই ভাবছে। কলম্বো টেস্টের পর আর ওকে মাঠে দেখা যাবে না, এটা অনেকের কাছে শকের মতো মনে হবে। সত্যি বলতে, সাঙ্গা শ্রীলঙ্কার একজন অসাধারণ ক্রিকেটার। বিশ্বের তাবত বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ওকে ফলো করে, ও কিভাবে এত এত রান করেছে। নিজের টেকনিক দিয়ে মাঠে যার করেছে, সেটি মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো। সাঙ্গার অর্জনই ওর হয়ে কথা বলবে।’ ব্যক্তি সাঙ্গাকারাকে নিয়েও কোহলির মুগ্ধতার শেষ নেই। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ব্যক্তি সাঙ্গাকারা দারুণ এক মানুষ। আমি ওর সঙ্গে মাঠ ও মাঠের বাইরে অনেক কথা বলেছি। এটা ভেবে ভাল লাগছে যে, বিদায় বেলায় শেষ দুটি ম্যাচে মাঠে ওর পাশে থাকতে পারছি।’ সাঙ্গাকারাকে পাশে থেকে বিদায় জানানোর সুযোগ পাওয়া দল হিসেবে ভারতের জন্যে প্রাপ্তি বলেও মনে করেন কোহলি ‘সাঙ্গাকারা কেবল অসাধারণ ক্রিকেটারই নয়, একজন অসাধারণ মানুষও। দারুণ একটা বিদায়ী সংবর্ধনা তার পাওনা। ওর মতো কিংবদন্তির বিদায়ী ম্যাচে সাক্ষী হতে পারাটা আমাদের জন্যেও গর্বের বিষয়। মাঠে আমরা ওর কাছ থেকে দুটো দিন বেশি হলেও শেখার সুযোগ পাচ্ছি। এটা দল হিসেবে ভারতীয়দের জন্য বড় প্রাপ্তি।’ ১৩৩ টেস্টে ৫৮ গড়ে মোট রান ১২,৩৫০ সেঞ্চুরি ৩৮। ৪০৪ ওয়ানডেতে ৪২ গড়ে রান ১৪,২৩৪ সেঞ্চুরি ২৫। অর্থাৎ দুই ভার্সনে সেঞ্চুরি সংখ্যা ৬৩। সাঙ্গাকারা কেন গ্রেট? সেটি পরিসংখ্যান দেখার পর বোধ হয় ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই! টেস্টে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় পঞ্চমস্থানে সাঙ্গাকারা। ১৫,৯২১ রান ও ৫১ সেঞ্চুরি নিয়ে যে তালিকায় সবার ওপরে শচীন টেন্ডুলকর। ভারতীয় গ্রেটকে হয়ত ছাড়িয়ে যাওয়া সুযোগ হয়ত ছিল না। তবে ১১ ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এ তালিকায় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে (১২) পেছনে ফেলার সুযোগ ঠিকই ছিল। বয়স ৩৭। ব্যাট হাতে ভাল অবস্থায় ছিলেন। বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার ম্যাচে হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তরুণদের জায়গা করে দিতে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সাঙ্গাকারার।
×