ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত ২৫০ পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ আগস্ট ২০১৫

ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত ২৫০ পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা পাওয়ার পর ইসির মনোযোগ এখন পৌরসভা নির্বাচনের দিকে। এ লক্ষ্যে তারা আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌরসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দিয়ে দেশের ৩২৩টি পৌরসভার তালিকা ইসির কাছে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে আসার কারণে ২৪০টি এবং সীমানা ও আইনী জটিলতা নিষ্পত্তি হওয়া আরও ১৩টি পৌরসভার ইসির নির্বাচনের তালিকায় রয়েছে। বাকি পৌরসভাগুলো মেয়াদ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে নির্বাচনের চিন্তাভাবনা রয়েছে ইসির। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন (পৌরসভা) আইনানুযায়ী একটি নির্বাচিত পৌরসভার মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী ম্যানুয়েল ছাপানোর কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া খাতভিত্তিক বাজেট চূড়ান্তকরণের কাজও প্রায় শেষ। এ বিষয়ে ইসির উপ সচিব সামসুল আলম জানিয়েছেন তিন দফা চিঠি ও এক দফা তাগাদা দেয়ার পর সম্প্রতি তালিকা পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী, প্রায় ২৫০টির মতো পৌরসভায় নির্বাচন করা যাবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো তালিকায় পৌরসভাগুলো আলাদা তালিকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যথাসময়ে উপযোগী পৌরসভায় নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব কিছু পর্যালোচনা করে বিবেচনার জন্য কমিশন উপস্থাপন করা হবে। তিনি জানান, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব পৌরসভার ভোট করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে ইসি সচিবালয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে। একদিনে ভোট হবে নাকি একাধিক দিনে হবে তফসিল ঘোষণার বিষয়ে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত ইসি। কমিশন জানিয়েছে, গত ১৭ জুন পৌরসভার তালিকা চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয় ইসির পক্ষ থেকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোঃ খলিলুর রহমান কমিশন সচিবের কাছে তালিকা পাঠান। সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দিয়ে দেশের ৩২৩টি পৌরসভার তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে নির্বাচন উপযোগী আড়াই শ’ পৌরসভার মধ্যে রয়েছে ২০১১ সালে ভোট হয়েছে এমন ২৪০টি এবং সীমানা এবং আইনী জটিলতা নিষ্পত্তি হওয়া আরও ১৩টি। তবে সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম চলমান ও মামলা অনিষ্পন্ন থাকায় ৩০টি পৌরসভা নির্বাচন অনুপযোগী বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে বাকিগুলোয় বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন হয়েছে। দেশে সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন হয় গত ২০১১ সালে। ওই বছর ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট চার ধাপে ২৬৯টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে আসার কারণে নির্বাচন উপযোগী হিসেব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইসিতে পাঠানো হয়েছে। আর এ তালিকা ধরেই পৌরসভা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ইসি। বর্তমান কমিশনের সামনে আর কোন বড় নির্বাচন বাকি নেই। ফলে যথাসময়ে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় বর্তমান ইসি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০১৭ সালের প্রথম দিকে। জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনের পরই শুরু হতে পারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দেশের বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদও শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে। ফলে আগামী বছরের শুরু পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মিলে প্রায় সারাবছর ধরেই চলবে এ নির্বাচন। জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ মার্চ থেকে জুলাই মাসে শেষ হয়ে আসার কারণে জানুয়ারি মাসের দিকেই তফসিলও ঘোষণা করতে হবে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে বলা আছে, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করে। ওই বছরের ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে ২৬৯টি পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একই বছরের ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল উপকূলীয় ২৪ উপজেলার প্রায় ৬শ’ ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই দেশের বাকি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারের এসব পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা আইনানুযায়ী ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৩ মাসের মধ্যে পৌরসভায় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
×