ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীর সিকদারের জামিন হয়নি, ৩ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৯ আগস্ট ২০১৫

প্রবীর সিকদারের জামিন হয়নি, ৩ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ১৮ আগস্ট ॥ ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে ৩ দিনের পুলিশী রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মঙ্গলবার দীর্ঘ শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলী আদালতের বিচারিক হাকিম হামিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। প্রবীর সিকদার দৈনিক বাংলা ৭১, উত্তরাধিকার-৭১ নিউজ অনলাইন পত্রিকা ও উত্তরাধিকার নামের এক ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি ফরিদপুর সদরের কানাইপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারের সন্তান। এর আগে তিনি জনকণ্ঠের ফরিদপুর জেলার নিজস্ব সংবাদদাতা ও পরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি কানাইপুরে বেগম রোকেয়া বালিকা বিদ্যালয় ও কিশলয় বিদ্যানিকেতন নামে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে তিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। বেলা ১১টা ২৬ মিনিটের দিকে প্রবীর সিকদারকে প্রিজন ভ্যানে করে ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে সরাসরি আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। রিমান্ড শুনানিকালে প্রথমে জিআরও সুবীর দে রিমান্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরে পুলিশের বক্তব্য উপস্থাপন করে। পরে রিমান্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন বাদী স্বপন কুমার পালের পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট অনিমেষ রায়, জাহিদ ব্যাপারী, বদিউজ্জামান বাবুল, গোলাম রব্বানী বাবু মৃধা। আদালতে উপস্থিত অর্ধশতাধিক আইনজীবী তাদের পক্ষে দাঁড়ান। তারা বলেন, ফেসবুকে এ স্টাটাস দিয়ে প্রবীর সিকদার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। এ ঘটনার পিছনে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য এ রিমান্ড প্রয়োজন। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের পক্ষে আইনজীবী এ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু ও মাসুদ রানা এ রিমান্ডে যৌক্তিকতার বিরোধিতা করে বলেন, প্রবীর সিকদার ফেসবুকে যে স্টাটাস দিয়েছেন তা প্রকাশিত। এ মামলায় তাকে ছাড়া অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি বা অজ্ঞাতনামা কাউকে আসামি করা হয়নি। তাই এ রিমান্ডের কোন যুক্তি নেই। তারা প্রবীর সিকদারের জামিন দাবি করেন। এক পর্যায়ে কাঠগড়ায় উপস্থিত সাংবাদিক প্রবীর সিকদার হাত তুলের আদালতের কাছে কিছু বলার জন্য অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। প্রবীর সিকদার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমাকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে আগে কিন্তু ফরিদপুরে মামলা হয়েছে পরে। তিনি বলেন, তিনি শেরেবাংরা নগর থানায় হুমকির ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু থানা তা গ্রহণ করেনি। প্রবীর সিকদার বলেন, থানায় আমার সঙ্গে কারও দেখা করতে দেয়া হয়নি। তিনি নিজে পঙ্গু এবং হৃদরোগী উল্লেখ করে প্রবীর সিকদার রিমান্ড মঞ্জুর করা হলে তা জেল গেটে করার জন্য আবেদন জানান। শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৫০টার দিকে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন। আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। দুপুর ১২টা ২ মিনিটের দিকে প্রবীর সিকদারকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তুলে সরাসরি ফরিদপুর জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় বলেন, আমরা প্রবীর সিকদারের ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত আমাদের দাবি যৌক্তিকতা মেনে তিন দিনের পুলিশী রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু বলেন, এ অভিযোগে রিমান্ডের প্রয়োজন ছিল না। কেন না এটি একটি কমপ্লিট এজাহার। এ মামলার একমাত্র আসামি প্রবীর সিকদার। তিনি বলেন, আদালত প্রবীর সিকদারের তিন দিনের পুলিশী রিমান্ড দিয়েছেন। আদালত প্রাঙ্গণে প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার বলেন, আমার স্বামী সাংবাদিকতার জন্য এক পা হারিয়েছেন, তার এক হাত অচল। এছাড়া তিনি হৃদরোগী। প্রতিদিন তাকে ৮-১০ ধরনের ওষুধ খেতে হয়। তিনি সকলের দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, আপনারা দোয়া করবেন যাতে আমার স্বামী ন্যায় বিচার পায়। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আটক করা হয়। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তার নামে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতার করে সোমবার ভোরে তাকে ফরিদপুর নিয়ে আসা হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে প্রবীর সিকদারকে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। বিচারিক হাকিম মোঃ হামিদুল ইসলাম মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে প্রবীর সিকদারকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। রবিবার রাতে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ওরফে সুজনের নামে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আইসিটি আইনে এ মামলাটি করেন আওয়ামী লীগ নেতা, জেলা পুজো উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল। স্বপন পাল জেলা জজকোর্টের এপিপির দায়িত্বে রয়েছেন।
×