ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক লাখ গরু মালয়েশিয়ায় রফতানি হবে

এই প্রথম গরু রফতানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৯ আগস্ট ২০১৫

এই প্রথম গরু রফতানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

সমুদ্র হক ॥ যমুনার চরে বিশেষ প্রজনন পরিকল্পনায় উন্নতজাতের গরু উৎপাদন হচ্ছে। এসব গরু দেশে প্রথমবারের মতো রফতানির খাতে উঠছে। প্রথম পর্যায়ে অন্তত এক লাখ গরু মালয়েশিয়ায় রফতানির ব্যবস্থা হয়েছে। একই সঙ্গে এবার কোরবানি ঈদে চাহিদা পূরণে গরুর একটি অংশ হাটেও যাচ্ছে। হাট বসবে রাজধানীর অভিজাত এলাকায়। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) জানায়, এবারের ঈদে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় গুলশানে গরুর হাট বসানো হবে। নদী ও সড়ক পথে বিশেষ ব্যবস্থায় পরিবহন করে গরু দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানো হবে। গ্রাম ও চরের কিছু এলাকাতেও বসবে এমন হাট। প্রত্যেক হাটেই থাকবে উন্নতমানের গরু। দাম ধরা হবে সাধারণের নাগালের মধ্যে। বগুড়া আরডিএর তত্ত্বাবধানে চর জীবিকায়ন প্রকল্পের (সিএলপি) আওতায় চরাঞ্চলে এবং কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আরডিএতে যে গরু উৎপাদিত হচ্ছে তা মালয়েশিয়া রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরই অন্তত এক লাখ গরু রফতানি হবে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বগুড়া আরডিএতে গরু উৎপাদনকারীদের নিয়ে মতবিনিময় ও আন্তর্জাতিক কর্মশালা হয়েছে। আরডিএ ও তার আওতাধীন সিএলপি, মেকিং মার্কেটস ওয়ার্কস ফর দ্য চর (এমফোরসি), কমিউনিটি বায়োগ্যাস প্রজেক্টের সঙ্গে মালয়েশিয়ার গেটকো-ইনফিনিটি লিমিটিডের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। গবাদি পশুর বাজার উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের এই বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনায় ধারা তৈরি করা হয়েছে। আরডিএর মহাপরিচালক এম এ মতিন ও কৃষি বিজ্ঞানের পরিচালক ড. এ কে এম জাকারিয়া জানালেন, সিএলপি ও এমফোরসি প্রকল্পের আওতায় চরের বাজার ব্যবস্থাপনায় ক্যাটেল ডেভলপমেন্টে বড় সাফল্য এসেছে। এই সাফল্য ধরে রেখে চলমান প্রক্রিয়ার আওতায় এই মুহূর্র্তে চরের খামারগুলো থেকে এক লাখ গরু সংগ্রহ করা হবে। দ্রুতই তা পৌঁছানো হবে দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর খুলনার চালনায়। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ চালনা বন্দর দিয়ে জাহাজে করে কুয়ালালামপুরে গরু রফতানিতে আগ্রহী। এতে সময় ও খরচ দুইই কমবে। তিনদিনের মধ্যে জাহাজ মালয়েশিয়ায় পৌঁছবে। ড. জাকারিয়া বললেন, আরডিএর বিশেষায়িত গবেষণাগারে গরুর জাত উন্নয়নে যে সাফল্য এসেছে তার ধারাবাহিকতায় পশু ও দুধের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিমুখী করার উদ্যোগ এটাই প্রথম। বিদেশী ষাঁড়ের শুক্রাণু কৃত্রিমভাবে দেশী গাভীতে প্রয়োগ করায় গাভীর দুধ বহুগুণ বেড়ে যায়। গাভী ও বাছুর হয় বিদেশী জাতের মতো হৃষ্টপুষ্ট। গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। পশু রফতানি ও বাজারজাতকরণ নিয়ে আরডিএর স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। পরের পদক্ষেপে গবাদি পশুর জাত উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ করা। এই লক্ষ্যে চর, বাজার প্রতিনিধি ও বিদেশী প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার পর আশা করা হচ্ছে আগামীতে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ও ইউরোপের দেশের প্রতিনিধিগণের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। আরডিএর ক্যাটেল গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক সেখ ফজলুল বারী জানান, দুধ ও মাংসের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় আগ্রহী খামারিদের গবাদি পশুপালন ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখ এবং ছাগলের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এই তথ্য প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের। দেশে বছরে গরু জবাই হয় ৭২ লাখ, যার অর্ধেক জবাই হয় কোরবানি ঈদে। দেশে যত গরু আছে তার সবই কোরবানি উপযুক্ত নয়। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে এবার গরু কম উঠবে। তবে আরডিএর চলমান ফাইন্ডিং থেকে কৃষি বিজ্ঞান পরিচালক ড. জাকারিয়া জানালেন সিএলপি ও এমফোরসির আওতায় যত গরু আছে তা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এবারের ঈদেই ঢাকায় নেয়া যাবে। মালয়েশিয়ার গেটকো-ইনফিনিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সার্বিক বিষয় দেখে ও জেনে আশ্বস্ত হয়েছেন বাংলাদেশ গরু রফতানি করলে উভয় দেশই লাভবান হবে। মহাপরিচালক এম এ মতিনের কথাÑ বাংলাদেশ চাইছে গরুর সøটারিং হয়ে (জবাই হয়ে) মাংস রফতানি হোক। তাতে দেশের লাভ- ব্লাড মিল, চামড়া ও হাড় হাড্ডি সংরক্ষণ করে দেশের কাজে যা লাগে তা রেখে রফতানি করা যাবে। মালয়েশিয়া চাইছে তারা জাহাজ বোঝাই করে গরু নিয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের পর উভয়পক্ষের মধ্যে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (এমওইউ) মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
×