ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নবেম্বরে বৈঠকের সম্ভাবনা

ফের পেছাল উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৮ আগস্ট ২০১৫

ফের পেছাল উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ফের পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক। চার বছর ধরে ঝুলে থাকার পর আগামী অক্টোবর মাসে বিডিএফ অনুষ্ঠানের জন্য তাগিদ দিয়েছিল দাতারা। এ নিয়ে প্রস্তুতিও নেয়া শুরু করেছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। অক্টোবরে হওয়ার কথা থাকলেও তার আর হচ্ছে না। তবে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আলাপ-আলোচনা চলছে। অক্টোবরে সম্ভব না হলেও নবেম্বর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার আগে বেশ কয়েকবার প্রস্তুতিও নিয়েও নানা কারণে পিছিয়ে যায় এ বৈঠক। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে এ বৈঠকটি জরুরী। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে সাধারণত দাতা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। ফলে সেখানে উভয় পক্ষের আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সমন্বিত সহায়তার পথ প্রশস্ত হয়। গত কয়েক বছর ধরে এ বৈঠক না হওয়ায় এ ধরনের সমন্বিত সহায়তা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিডিএফ না হওয়ায় সমন্বিত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত কয়েক বছরে একেবারেই যে দাতাদের সমন্বিত সহায়তা থেকে বাদ পড়েছি সেটি বলা যাবে না। কেননা বিডিএফ না হলেও নিয়মিতভাবে ইআরডি লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠকের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলতাও এসেছে। উদাহরণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ব্যাপক টানাপোড়েনের সময় ইআরডি বিশেষ এলসিজি বৈঠক করেছে। তারপর ঘন ঘন এলসিজি বৈঠক করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে গত বছরগুলো ব্যাপক বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর কারণে যে ভয়টি ছিল সেটি কেটে গিয়ে বিশ্বব্যাংক সেই প্রতিশ্রুত অর্থ অন্য তিন প্রকল্পে দিয়েছে। এটি অবশ্যই ইারডির সাফল্য। সূত্র জানায়, সর্বশেষ দাতাদের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ার পর গত বছরের নবেম্বর অথবা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিএফ বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। তবে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য তখন দিন ক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি। পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে হতে এক সময় জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ বৈঠক পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে যায়। ইআরডি জানায়, প্রতি বছর দাতাদের সঙ্গে বিডিএফ বৈঠকের কথা থাকলেও গত চার বছর সেটি হয়নি। এ বছর বিডিএফ বৈঠকের বিষয়ে দাতাদের জানানো হয়েছিল। ইআরডির দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, পলিসি গত নানা বিষয় এবং বৈদেশিক অর্থছাড় বাড়ানোসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিডিএফ বৈঠক হওয়া জরুরী। এ বিবেচনায় গত বছর ১৪ জুন অনুষ্ঠিত লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠকে দাতাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সামনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিডিএফ বৈঠকের প্রস্তাব করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর দাতারা একমত হয়ে সম্মতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল তাদের কেন্দ্রীয় অফিসের সঙ্গে কথা বলে কবে এ বৈঠক অনুষ্ঠান করা যায় সে বিষয়ে ইআরডিকে শীঘ্রই জাবাবে। কিন্তু তারপর আর জানায়নি। সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় বিডিএফ বৈঠক। সেখানে সাতটি খাতে ২৫টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। এর জন্য সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই বছরের ৭ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিডিএফ মূল্যায়ন বৈঠক। এতে উপস্থাপিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা গেছে, ২০১০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি বিশ্লেষণে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জ্বালানি খাত। দাতাদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনাগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। বিডিএফ ও জাতীয় কৌশল, যৌথ সহায়তা কৌশল ও বিদেশী সহায়তার কার্যকারিতা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা অগ্রগতি ছিল ধীর। তবে ওই মূল্যায়ন বৈঠকে কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোন মূল্যায়ন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০২ সালে প্যারিসে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয় এর পর প্যারিসে নয় উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়।
×