হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বর্ষার ক্ষতি পোষাতে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এ অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন করা হবে। ফলে নাগরিকদের চলাচলের সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূর এবং দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আশা করা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুমোদন পেলে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন করে যানবাহন ও পথচারীদের নিরাপদ চলাচল ও জলাবদ্ধতা হ্রাস করে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তাই এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর নামে বিভক্ত হয়। বিভক্তির আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলে মোট ৯০টি ওয়ার্ড ছিল। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতায় পাঁচটি অঞ্চলে ৫৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। এলাকার প্রায় ৯৫৫ দশমিক ৬২ কিলোমিটার রাস্তা, ৪৫৯ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার নর্দমা, ৪৬৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার পাইপ নর্দমা এবং ২১৭ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ফুটপাথ রয়েছে। প্রতিবছর অপরিকল্পিত নগর সম্প্রসারণ, বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিস লাইন পরিবর্তন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির কারণে এসব রাস্তা, নর্দমান ও ফুটপাথের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় তুলনামূলক কম হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয়ে প্রকল্পভুক্ত এলাকার রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্তির পর সরকারী তহবিলের অর্থায়নের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় কোন বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণের আওতাভুক্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ পূর্ণ নির্মাণ বা উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৫টি অঞ্চলের প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত সিসি সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটির ওপর গত ৬ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭৫ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির তহবিল থেকে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ১৬৯ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন, ১৮৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ এবং ২৫ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ফুটপাথ উন্নয়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ২০১১-২০১৫ অর্থবছরে এক্সিলারিং গ্রোথ এ্যান্ড রিডিউসিং পোভার্টি পার্ট-২ সেক্টরাল স্ট্রাটেজিস প্রোগ্রাম এ্যান্ড পলিসিসের চ্যাপ্টার-৫ এর ম্যানেজিং দি আরবার ট্রানজিশান, আরবানাইজেশন স্ট্রাটিজি আন্ডার দি সিক্সস ফাইভ ইয়ার প্লানের সিটি গবর্নেন্সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পরিকল্পনার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে মন্ত্রণালয় থেকে ৩০৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উল্লিখিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি প্রতিনিধি দল গত ১০ জুলাই প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে অপেক্ষাকৃত ভাল রাস্তাগুলো বাদ দিয়ে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়ে দেয়ার সুপারিশ করে। ফলে প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় দাঁড়ায় ২৫০ কোটি টাকা।
এর আগে গত জুন মাসে রাজধানীতে পরিকল্পিত সড়ক সংস্কারের অংশ হিসেবে কোল্ড রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট ও ইকুপমেন্ট সংগ্রহ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৫১ কোটি ৮২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। সে সময় বলা হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভিআইপি রোডসহ অন্যান্য রোডে যানবাহনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হচ্ছে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার কারণে প্রতিবছরই রাস্তা মেরামত কার্যক্রম করতে হচ্ছে। ফলে রাস্তার উচ্চতা দিন দিন বাড়ছে। পানি নিষ্কাশনের সমস্যায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবন্ধতার। এ পরিপ্রক্ষিতে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির মাধ্যমে কোল্ড রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা গেলে রাস্তার পুরনো ব্যবহৃত উপাদানগুলোর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। রাস্তার উচ্চতা আর বাড়বে না। এতে রাস্তাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।