ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবহাওয়ার তেলেসমাতি

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৮ আগস্ট ২০১৫

আবহাওয়ার তেলেসমাতি

টানাবর্ষণ আর উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা দেখা দিলেও অনাবৃষ্টির কারণে উত্তরের বেশিরভাগ জেলার অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলে তীব্র খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকরা দিশাহারা। ভরা বর্ষা মৌসুমেও অনাবৃষ্টির কারণে এসব এলাকার খাল, বিল ও নালা পানিশূন্য। এতে কৃষকের উৎপাদিত পাট পচানোসহ আমন চারা রোপণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমের মতো সেচ দিয়ে আমন চারা লাগানোর পাশাপাশি খাল বিলে পানি তুলে পাট পচাতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচের বোঝা যেন কৃষকের মাথায় বজ্রপাত। একদিকে বন্যা অন্যদিকে খরা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উভয় এলাকার মানুষকে। প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেয়াল যেন খেলা করছে এই বদ্বীপে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বন্যা, খরা, পানিশূন্যতা, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ী ঢল, বন্যার দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের একটা আলাদা পরিচিতি রয়েছে। জলবায়ুর অস্থির ও বিরূপ পরিবর্তন জীবন ও প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। নানামাত্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টিও হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বায়ুম-লে অতিমাত্রায় গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ। আর এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সচেতন মানুষকে বিশ্বব্যাপী সোচ্চার হতে দেখা যায়। পরিবেশের এই ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকির বিষয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট সচেতন ও সক্রিয়। কিন্তু বাস্তবে এই সচেতনতার কারণে সতর্ক থাকা ছাড়া আমাদের যেন কিছু করার নেই। নদীবিধৌত বাংলাদেশ। ছোট-বড় মিলে অনেক নদী রয়েছে আমাদের। আর বর্ষাকাল বলতেই বন্যার পদধ্বনি এদেশের নিয়তি। ব্যত্যয় খুব একটা ঘটেনি। এখন ভরা বর্ষা। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রায়ই নানারকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়তে হয় আমাদের। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো বন্যা। অবশ্য বন্যা, প্লাবন, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করার সহজাত দক্ষতা আমাদের রয়েছে। স্মরণকালের ইতিহাসে বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্ষতিকর বন্যা হয়েছিল ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালে। এসব দুর্যোগ খুব সহজভাবে কাটিয়ে উঠার অভিজ্ঞতা আজ দৃষ্টান্ত। আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের বন্যা হয়ে থাকে। মৌসুমী বন্যা, আকস্মিক বন্যা ও জোয়ারভাটায় বন্যা। এছাড়া প্রায়শই উপকূল অঞ্চলে অনিয়মিত ও আকস্মিক জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিবছর ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড বন্যায় ডুবে যায় এবং ৫৫ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। তবে বর্ষাকালে খরার বিষয়টি ভাবনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির বিপরীতমুখী এই প্রভাব থেকে উত্তরণের উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
×