ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলিদের উদ্দেশে সুনীল গাভাস্কার, ভাল অবস্থায় থেকেও শেষ পর্যন্ত গল টেস্টে হারের জন্য ভারতীয়দের আগ্রাসী নীতিকেই দায়ী করছেন এই কিংবদন্তি

‘আগে ক্রিকেট শেখো, তারপর আগ্রাসী মনোভাব’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ আগস্ট ২০১৫

‘আগে ক্রিকেট শেখো, তারপর আগ্রাসী মনোভাব’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিরাট কোহলিকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়ার পর আগ্রাসী ক্রিকেট নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে হুট করে টেস্ট থেকে অবসর নেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কোহলির প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট ছিল বাংলাদেশ সফর। ফতুল্লার একমাত্র টেস্টটি বৃষ্টিতে ড্র হয়। সে অর্থে চলতি শ্রীলঙ্কা সফর ভারত অধিনায়কের প্রথম চ্যালেঞ্জ। যেখানে শুরু থেকে কোহলি নিজেও বলে আসছেন, ফল যাই হোক মাঠে আগ্রাসী মনোভাব দেখাবেন তিনি। এ্যাটাকিং ক্রিকেটের পসার সাজাবে তরুণ্য নির্ভর ভারত। এক পর্যায়ে দুইদিনেই জয় দেখা গল টেস্টে শেষ পর্যন্ত হেরে বসে সফরকারীরা! ১৭৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রানে অলআউট হয় কোহলির দল। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গ্রেট সুনীল গাভাস্কার অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই বলছেন, ‘আগে ক্রিকেট শেখো, তারপর আগ্রাসী মনোভাব দেখাও।’ ইন্ডিয়ান (বিসিসিআই) টিম ম্যানেজমেন্টেরও সমালোচনা করেন তিনি। ‘মুখে বড় বড় কথা বাদ দিয়ে ভারতীয়দের মাঠে ভাল ক্রিকেট খেলার দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।’ গলে ৬৩ রানের হেরে তিন টেস্টের সিরিজে ১-০তে পিছিয়ে পড়ার পর স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন ক্ষুব্ধ গাভাস্কার। ৬৬ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার আরও যোগ করেন, ‘বেছে বেছে দলে এমন ক্রিকেটার নিতে হবে, যারা কন্ডিশনের বিচারে পুরো দলের সঙ্গে যায়। টেস্ট এমন ধরনের ক্রিকেট যেখানে অবশ্যই আপনাকে প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ করে খেলতে হবে। সেটা না পারলে শুধু আগ্রাসন দেখিয়ে লাভ নেই। দিন শেষে ওটা হাস্যকর বলে প্রতীয়মান হয়, ভারতের ক্ষেত্রে গলে যেমনটা হলো!’ গাভাস্কারের মতে এই হার ভয়াবহ। আগ্রাসী ক্রিকেটের দুয়ো তুলে এভাবে লজ্জায় ডোবার কোন অর্থই খুঁজে পান না তিনি। এ্যাটাকিং, পরীক্ষামূলক এই বিষয়গুলো বাদ দিয়ে কোহলিদের সত্যিকারের খেলায় ফিরে আসা উচিত বলেও মনে করেন গাভাস্কার। শ্রীলঙ্কাকে ১৮৩ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর প্রথম ইনিংসে ৩৭৫ রান করে ১৯২ রানে এগিয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে এক পর্যায়ে ৯৫ রানে লঙ্কানদের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আশা জাগায় অতিথিরা। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ৩৬৭ রান করে উল্টো ১৭৫ রানের লিড পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা! জবাবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রানে অলআউট হয়ে ৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হারে কোহলির দল। ব্যাট হাতে চরম ভরাডুবি হয় ক্রিকেটের মোড়লদের। রঙ্গনা হেরাথের ঘূর্ণি বিষে নীল হয়ে একে একে মাথা নিচু করে সাজঘরে ফেরেন শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানেরা। যেটিকে ‘ভয়াবহ বিপর্যয়’ বলে অভিহীত করেন গাভাস্কার। ‘আগেই বলেছিলাম, এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে দেড় শ’ বা তার বেশি রান তাড়া করে জয় পাওয়া কঠিনই হবে। কোহলিরা অহেতুক আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাতে গিয়ে সেটিকে অসম্ভব বানিয়ে ফেলেছে।’ ভারতীয় ম্যানেজমেন্টকে অতিআক্রমণাত্মক এবং পরীক্ষামূলক এই দুটি বিষয়ই পরিহার করতে বলেন দেশটির ক্রিকেটের প্রথম লিটল মাস্টার। গাভাস্কার বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতীয় ম্যানেজমেন্টের আক্রমণাত্মক, পরীক্ষামূলক বা অন্য যে কোন ধরনের বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এসব বাদ দিয়ে কেবল ভাল ক্রিকেট খেলার দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। টেস্টে ভাল খেলার কোন বিকল্প নেই। উইকেট-কন্ডিশনের চরিত্র বুঝে দল গড়তে হবে। প্রথম টেস্টে এভাবে হারাটা আমাদের কারও কাম্য ছিল না।’ তিনি আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘১৭৬ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে দুই দিনেরও বেশি সময় হাতে ছিল। আক্রমণাত্মক হয়ে হারার চেয়ে ডিফেন্সিভ হয়ে জয় ভাল নয় কী? দেখে শুনে ব্যাটিং করলে অবশ্যই জয় পাওয়া সম্ভব ছিল। আর বড় দলের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে যাওয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা পরের ম্যাচগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।’ অবশ্য কোহিলির ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশা তার, ‘ভারতীয়দের মনোবল খুবই শক্ত। প্রথম ম্যাচের এই হার ওদের আরও তাতিয়ে দেবে। আমার বিশ্বাস কলম্বোর দ্বিতীয় টেস্ট জিতে কোহলিরা ঘুরে দাঁড়াবে।’
×