ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ১৯ আগস্ট

পাইপ লাইন প্রকল্পে বড় সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৭ আগস্ট ২০১৫

পাইপ লাইন প্রকল্পে বড় সহায়তা  দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বিশ্বব্যাংকের পাইপ লাইনে থাকা প্রকল্প নিয়ে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে বড় অঙ্কের ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে সংস্থাটি। ১১টি প্রকল্পের বিপরীতে সংস্থাটির আর্থিক সহায়তা দাঁড়াবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। স্থানীয় বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে চুক্তিসহ যাবতীয় কার্যক্রম দ্রুত করতে এ বৈঠকের আয়োজন করেছে ইআরডি। এতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষে সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডাইরেক্টর ইউহানেস জাটনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রতিনধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। আগামী ১৯ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংক উইংয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিশ্রুতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইআরডি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে চলতি অর্থবছরের পাইপ লাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকেও এ বৈঠকে ডাকা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাইপ লাইনে থাকা মোট ১৩টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। এর থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ৬ থেকে ৭টি প্রকল্প নেয়া সম্ভব হবে। কেননা চলতি বছর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে যে পরিমাণ সহায়তা দেয়া লক্ষ্য রয়েছে তার পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই রিভার ব্যাংক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের জন্য ৬০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের এবং ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রজেক্ট ফেজ-২ এর জন্য ১৮ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের বিষয়ে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। বিশ^ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর বাঁধ রক্ষায় ৬০ কোটি ডলার, দক্ষতা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অতিরিক্ত ১০ কোটি ডলার, নির্বাচিত কলেজের উন্নয়নে ১০ কোটি ডলার, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে অতিরিক্ত ১৮ কোটি ডলার, ঘোড়াশালের চতুর্থ ইউনিট বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কারে ২৫ কোটি ডলার, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ১৫ কোটি ডলার, আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিতে ১৫ কোটি ডলার দেবে বিশ^ব্যাংক। অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নদীতে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২১ কোটি ডলার, জলবায়ু এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা আধুনিকায়নে ৭ কোটি ডলার, বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে ৫ কোটি ডলার, বীমা খাতের উন্নয়নে ৫ কোটি ডলার। এ ঋণের বিপরীতে বিশ^ব্যাংককে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরের মধ্যে ঋণটি পরিশোধ করতে হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর অংশ হিসেবে পাইপ লাইনের এ সব প্রকল্পের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আজম বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। এ সংস্থাটির কাছ যে পরিমাণ সহজ শর্তে ঋণ (ঋণের সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ) পাওয়া যায়, অন্য কোন দাতা বাংলাদেশকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে না। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি বড় ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই রাজধানীর যানজট নিরসন ও গণপরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে বিমানবন্দর সড়ক থেকে কেরাণীগঞ্জ পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে সংস্থাটি। বিমানবন্দর সড়ক থেকে কেরাণীগঞ্জ পর্যন্ত প্রস্তাবিত বাসের জন্য পৃথক লেনের এ প্রকল্পটি বিআরটি-৩ নামে পরিচিত। ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) ভিত্তিতে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে উত্তরার বিমানবন্দর সড়ক থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত বিআরটি-৩ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। এখন প্রকল্পটির নক্সা প্রণয়নের কাজ চলছে, যা আগামী বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নক্সা প্রণয়নেও ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ২০২০ সালে বিআরটি-৩ নির্মাণ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরার বিমানবন্দর সড়ক ধরে কুড়িল ইন্টারচেঞ্জের নিচ দিয়ে ও বনানী রেল ওভারপাসের ওপর দিয়ে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, নয়াবাজার, বাবুবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি-৩ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৬টি বাস স্টপেজ, ২টি বাস ডিপো ও ২টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। বাস স্টপেজে প্রবেশ-বাহির ও পথচারীদের পারাপারের জন্য ৩০টি আন্ডারপাস তৈরি করা হবে। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বিআরটির মাধ্যমে ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী কেরানীগঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন। বাসগুলোতে ভাড়া আদায়ের জন্য থাকবে ইলেকট্রনিক স্মার্ট কার্ড সিস্টেম, যা যে কোন সময় সুবিধাজনক স্টোর থেকে রিচার্জ করা যাবে।
×