ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেদ্দায় বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইটের নিরাপদ অবতরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ আগস্ট ২০১৫

জেদ্দায় বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইটের নিরাপদ অবতরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট নির্ধারিত সময়েই নিরাপদে জেদ্দা অবতরণ করেছে। রবিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ৪১৯ যাত্রী নিয়ে উদ্বোধনী ফ্লাইটটি জেদ্দায় অবতরণ করে। রবিবার সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে বিজি-১০১১ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। একই দিন আরও দুুটো ডেডিকেটেড ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যায় এবং নির্ধারিত সময়েই জেদ্দায় পৌঁছে। এ ছাড়া মধ্যরাতে আরও একটি সিডিউল ফ্লাইটে কিছু হজযাত্রীকে পাঠানোর সিডিউল ছিল। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে উদ্বোধনী হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের বিদায় জানান। রবিবারই হজ ফ্লাইট বিজি-৩০১১ দুপুর আড়াইটায় ৪১৯ জন, বিজি-৫০১১ রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ৪১৯ জন ঢাকা ছেড়ে যায়। সিডিউল ফ্লাইট বিজি-০০৩৫ রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন, পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ বিমানবন্দরে হজযাত্রীদের বিদায় জানান। এ সময় বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করছি প্রতিবছরের মতো এ বছরও হজ ফ্লাইট নির্বিঘেœই শেষ হবে। তিনটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হজ ফ্লাইটের জন্য ডেডিকেটেড করে রাখা হয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজ করতে সৌদি আরবে যাবেন। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৬০০ এবং ৯৯ হাজার ১৫৮ জন যাবেন বেসরকারী ব্যবস্থাপনায়। বাংলাদেশ ও সৌদি আরব সরকারের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে অন্যান্য বছরের মতো অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করবে বিমান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে হজ নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। কয়েক হজযাত্রীর ভিসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপে প্রথম ফ্লাইটের সকলেই রওয়ানা হতে পেরেছেন। এরপরও যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। হজযাত্রী পরিবহনে বিমানের অংশীদার সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স চুক্তিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। পেলে অবশ্যই এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান বলেন, আমরা যে কোন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। এবার চট্টগ্রাম থেকে ১৬টি এবং সিলেট থেকে তিনটি ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা হবে বলে বিমানমন্ত্রী জানান। সোমবার থেকে চট্টগ্রাম এবং আগামী ৩১ আগস্ট থেকে সিলেটের হজ ফ্লাইট শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ে নির্বিঘেœ হজ ফ্লাইট পরিচালনার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আশকোনায় হজ-ক্যাম্পে হজ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ বছর হজ-ফ্লাইট ও সিডিউল ফ্লাইটে মোট ৫১ হাজার মুসলমান হজ পালনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সৌদি যাবেন। এসব হজযাত্রীকে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে পারাপারের জন্য বিমান ইতোমধ্যেই নিজস্ব সুপরিসর বোয়িং ট্রিপল সেভেন উড়োজাহাজ প্রস্তুত রেখেছে। ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটেও কিছু হজযাত্রী পবিত্র ভূমিতে যাবেন। এ বিষয়ে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার এক বার্তায় বলেন, পবিত্র হজের গুরুত্ব ও ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিমান বাংলাদেশ একটি সর্বাঙ্গ-সুন্দর হজ কার্যক্রম পরিচালনায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন পবিত্র হজব্রত পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় যাবেন মোট দুই হাজার ৬০০ জন। অবশিষ্ট ৯৯ হাজার ১৫৮ জন যাবেন বেসরকারী ব্যবস্থাপনায়। সরকারী ব্যবস্থাপনায় এ বছর বিমানে যাবেন মোট ২ হাজার ৫৭৫ জন হজযাত্রী, অবশিষ্ট ৪৮ হাজার ৪২৫ জন যাবেন বেসরকারী ব্যবস্থাপনায়। খান মোশাররফ হোসেন জানান, দুইমাসব্যাপী হজ-ফ্লাইট পরিচালনায় সিডিউল ফ্লাইটসহ মোট ২৮৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে, যার মধ্যে ২২৪টি ‘ডেডিকেটেড’ এবং ৬১টি সিডিউল ফ্লাইট। ১৬ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘প্রি-হজ’-এ (হজের আগে) মোট ১৪৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে (ডেডিকেটেড-১১৫ এবং সিডিউল-৩০)। ‘পোস্ট-হজ’-এ (হজের পর) ১৪০টি ফ্লাইট চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত (ডেডিকেটেড-১০৯ এবং সিডিউল-৩১)। সরকারী ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৫৭৫ যাত্রীসহ মোট ৫১ হাজার যাত্রী হজ পালনের জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে বিমানকে ব্যবহার করবেন। হজ-ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-জেদ্দা উভয় স্থানেই বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করেছে। প্রত্যেক হজযাত্রী বিনামূল্যে সর্বাধিক দুই পিস করে ৩২ কেজি মালামাল বিমানে ও বিজনেস ক্লাসের জন্য সর্বাধিক দুই পিস ৪২ কেজি এবং কেবিন ব্যাগেজে সাত কেজি মালামাল সঙ্গে নিতে পারবেন। কোন অবস্থাতেই প্রতি প্রিস ব্যাগেজের ওজন ২৫ কেজির বেশি হতে পারবে না। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য ৫ লিটার জমজমের পানি ঢাকায় নিয়ে আসা হবে এবং হাজীরা ঢাকা ফেরত আসার পর তাদের তা দেয়া হবে। হাজীরা সঙ্গে করে বিমানে পানি বহন করতে পারবেন না। যে কোন ধারালো বস্তু যেমনÑ ছুরি, কাঁচি, নেইল কাটার, ধাতব নির্মিত দাঁত খিলন, কান পরিষ্কারক, তাবিজ ও গ্যাস জাতীয় বস্তু যেমনÑ এ্যারোসল এবং ১০০ (এমএল)-এর বেশি তরল পদার্থ হ্যান্ড ব্যাগেজে বহন করা যাবে না। নতুন নিয়মানুযায়ী হাজীদের কষ্ট লাঘব করার উদ্দেশ্যে ফিরতি ফ্লাইটের (জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ) ব্যাগেজ জেদ্দা এয়ারপোর্টে চেক্-ইনের সময় বিমানে গ্রহণ করা হবে না। পরিবর্তে এই ব্যাগেজ আগেই মক্কা ও মদিনায় বিমান নির্ধারিত স্থানে ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে, যা বিমানের ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট হাজীদের বহনকারী ফ্লাইটেই পরিবহন করা হবে।
×