ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠ মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৬ আগস্ট ২০১৫

জনকণ্ঠ মামলা

দেশে প্রথম কোন আদালত অবমাননার মামলায় কনটেস্ট হলো। সকল প্রকার ঝুঁকিকে সামনে রেখে জনকণ্ঠ এ কাজটি করেছে। আদালতের রায়ে দেয়া সাজাও মেনে নিয়েছেÑ কিন্তু অবিচল থেকেছে সত্য প্রকাশে। সাংবাদিকতার জন্য সত্য প্রকাশের এ ঝুঁকি চিরন্তন। জনকণ্ঠ শুধু কনটেম্পট মামলায় নয়, ইতোপূর্বে মুক্তিযুদ্ধের ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় রাজাকারদের বিরুদ্ধে অনেক ঝুঁকিও নিয়েছে। জনকণ্ঠের ভূমিকা সম্পর্কে তার অগণিত পাঠক তথা দেশবাসী জানেন। এর সম্পাদকীয় নীতি স্বচ্ছ, সত্য প্রকাশে আপোষহীন, গণমুখী ও দায়িত্বশীল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জনকণ্ঠ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ এবং লালন করে আসছে। প্রায় দুই যুগ ধরে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এবং তথ্যসেবার মাধ্যমে জনকণ্ঠ সত্যিকারার্থেই জনতার কণ্ঠ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনকন্ঠ শুরু থেকেই সোচ্চার। চিহ্নিত আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর যথোচিত বিচার চায় বলেই শুধু নয়, সকল ধরনের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে জনকন্ঠ সব সময়ই সতর্ক। ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর চূড়ান্ত রায়ের আগে জনকণ্ঠে প্রকাশিত উক্ত উপসম্পাদকীয়টি যথারীতি সত্য তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই লেখা হয়েছিল। বস্তুনিষ্ঠ ওই নিবন্ধটি আদালতের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। আদালতে তথ্য প্রমাণ উপস্থিত হলে প্রধান বিচারপতি তা স্বীকার করে নেন। সে সব তথ্য টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে। জনকণ্ঠের আইনজীবীর মতে এই তথ্য প্রমাণ উপস্থিত করার পরে তিনি আশা করেছিলেন, রায় ভিন্ন হবে। এটা আদালত অবমাননা নয়। সত্য তথ্যের ভিত্তিতে লেখাটি নিয়ে প্রদত্ত রায়ে জনকণ্ঠের আইনজীবীর আশা পূরণ হয়নি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনকণ্ঠ সে রায় মেনে নিয়েছে। পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়ার জন্য এখন অপেক্ষা। তবে ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যমসহ সকল পেশার মানুষ জনকণ্ঠকে অভিনন্দন জানিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে লাখো পাঠক ও সাধারণ মানুষÑ সত্যের প্রতি অবিচল থাকার জন্য। জনকণ্ঠ মনে করে মিডিয়ার মর্যাদা রক্ষার জন্য, সত্য তথ্যকে উর্ধে তুলে ধরার জন্য জনকণ্ঠ এ ক্ষেত্রে সকল ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে লড়াই করেছে। এই লড়াইকে একটি পত্রিকা হিসেবে জনকণ্ঠ সামগ্রিক পেশার জন্যই নৈতিক দায়িত্ব মনে করেছে। মিডিয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এই স্তম্ভে যারা কাজ করেন তাদের ঝুঁকি সব থেকে বেশি। জনকণ্ঠ এ ক্ষেত্রে শুধু নিজের কথা বিবেচনা করে এ ঝুঁকি নেয়নি। সমগ্র মিডিয়ার একটি অংশ হিসেবেই এ লড়াই। জনকণ্ঠের এ লড়াই যদি ভবিষ্যতে মিডিয়ার মাথা উঁচু করতে এবং যে কোন সত্য প্রকাশে বিন্দুমাত্র কোন অবদান রেখে থাকেÑ তাহলে তা হবে সমগ্র মিডিয়ার কপালে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘মাটির ফোঁটার একটি তিলক।’
×