ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে ট্রেনের সঙ্গে পুলিশের পিকআপের সংঘর্ষ ॥ নিহত ৪ ওসিসহ আহত ৭

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৬ আগস্ট ২০১৫

নীলফামারীতে ট্রেনের সঙ্গে পুলিশের পিকআপের সংঘর্ষ ॥ নিহত ৪ ওসিসহ আহত ৭

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী/ রংপুর ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরের ঢেলাপীর রেলক্রসিংয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে ঢাকাগামী ট্রেনের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সৈয়দপুর থানার ওসিসহ সাতজন। শুক্রবার রাত বারোটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ অভিযানে একটি ডাকাত দল ধরতে যাওয়ার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন। এ দুর্ঘটনায় কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে পাকশী বিভাগের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাকে। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কনস্টেবল শামসুল হক, কনস্টেবল মাইদুল ইসলাম, কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম ও কনস্টেবল ফারুক হোসেন। আহতদের মধ্যে শনিবার দুপুরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সৈয়দপুর থানার এসআই নাজমুল হোসেন, এএসআই আব্দুল আজিজ, এসএএফ কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন, এসএএফ কনস্টেবল রিপন চন্দ্র চৌধুরীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সৈয়দপুর থানার ওসি ইসমাইল হোসেন, গাড়িচালক কনস্টেবল মোকছেদ আলী, কনস্টেবল কবির হোসেনসহ তিনজন। জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ঢেলাপীর রেলক্রসিং সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা আকা মিয়া জানান, ডোমার উপজেলার চিলাহাটি থেকে নীলফামারী হয়ে প্রতিদিনের ন্যায় আন্তঃনগর নীলসাগর ট্রেনটি ঢাকা যাচ্ছিল। ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা বিলম্বে রাত ১২টায় রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় বিকট শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি, রেলক্রসিংয়ের ধারে ১৫ ফুট গভীর গর্তে গাড়ির লাইট জ্বলছে। কাছে গিয়ে দেখি পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে মোটর সাইকেলে দু’জন পুলিশ সদস্য আসেন। তারা বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি জানায়। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ ও সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা বিধ্বস্ত গাড়ির ভেতর থেকে আহতদের উদ্ধার করে। এদের একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। তিনি আরও বলেন, ঢেলাপীর রেলক্রসিংয়ে কোন গেট বা গেটম্যান নেই। এখানে রেলক্রসিংয়ের উভয় পাশে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ জন্য একটি নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে। সৈয়দপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এএমএস সাজেদুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের একটি ডাকাত দলকে ধরতে বিশেষ অভিযানে সৈয়দপুর থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের ১৩ সদস্যের একটি দল শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। এদের মধ্যে পুলিশের পিকআপে ওসিসহ ১১ জন ও একটি মোটর সাইকেলে দু’জন ছিল। পথে ঢেলাপীর রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে পুলিশের পিকআপের সংঘর্ষ হয়। তবে মোটরসাইকেলে থাকা দুই পুলিশ সদস্য এই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হাসান, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলেই কনস্টেবল শামসুল হক (৪৭) মারা যান। আহতদের প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় পথে কনস্টেবল মাইদুল ইসলাম (৩০) ও শরিফুল ইসলাম (৩৪) এবং রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে কনস্টেবল ফারুক হোসেন (৫০) মারা যান। নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হাসান জানান, রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন চারজনের আশঙ্কাজনক হওয়ায় শনিবার দুপুরে তাদের ঢাকা পাঠানো হয়। এছাড়া সৈয়দপুর থানার ওসিসহ তিনজন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে জিআরপি জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ওই অরক্ষিত রেলগেটে গেটম্যান না থাকায় এবং লেভেলক্রসিংয়ের আগে বাঁক থাকায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এদিকে শনিবার বাদ জোহর নীলফামারী পুলিশ লাইনে নিহতদের জানাজা শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। জানাজায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রশিদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, ইএনও সাবেত আলী, পুলিশ সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এর আগে পুলিশ লাইন চত্বরে এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি আর সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের কান্না আকাশ-বাতাস ভারি করে তোলে। পুলিশ লাইনের আরআই আনোয়ার হোসেন জানান, নিহত কনস্টেবল শামসুল হকের লাশ তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাওয়ার হাজি কলোনি গ্রামে, কনস্টেবল মাইদুল ইসলামের লাশ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর নেওয়াশী হাতিরভিটা গ্রামে, কনস্টেবল শরিফুল ইসলামের লাশ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামে ও কনস্টেবল ফারুক হোসেনের লাশ বরিশালের বাবুগঞ্জের বীরপাশা গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিজ নিজ গ্রামে তাদের দাফন করা হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়। এজন্য নীলফামারী পুলিশের পক্ষে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছে।
×