ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ আগস্ট ২০১৫

অবশেষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি  স্থাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হলো। মহান এই নেতার প্রতিকৃতি স্থাপনের জন্য দীর্ঘকাল ধরে চেষ্টা করেও তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন প্রেসক্লাব স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দখল করে রেখেছিল। তাদের বাধার কারণে দীর্র্ঘ ৪৪ বছর জাতির পিতার প্রতিকৃতি প্রেসক্লাবে স্থান পায়নি। এবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও বিএনপির উদারমনা নেতৃবৃন্দ জাতির মহান নেতাকে মর্যাদার উচ্চ আসনে নিয়ে আসেন। জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন অনুষ্ঠানের পরই সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার জাতীয় শোক দিবসে সকাল ৯ টায় জাতির জনকের প্রতিকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা হয়। প্রতিকৃতি স্থাপনের পর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে এবং ডিইউজে নেতারা বঙ্গববন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন অনুষ্ঠানে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রতিকৃতি স্থাপন অনুষ্ঠানে বলেন, জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন করতে আমাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এটা আমাদের জন্য ছিল লজ্জার। কিন্তু আজ সব কিছু ছাপিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হলো। দীর্ঘদিন পরে হলেও গ্লানি আর লজ্জা মোচন করতে পারলাম। প্রেসক্লাবে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে প্রতিহত করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি অপশক্তি দীর্ঘদিন ধরে এখানে ঘাপটিমেরে বসেছিল। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি বরাবরই প্রেসক্লাবে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্য দিয়ে এদের প্রতিহত করা হবে। জাতির পিতার প্রতিকৃতি উন্মোচনকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মহান শোক দিবসকে শক্তিতে পরিণত করে আজ এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এই দিনটিও ঐতিহাসিক দিন হিসেবে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের ৪০ বছর পর জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন হয়েছে। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখানেও তৎপর থাকায় এতদিন তা পারা যায়নি। আজকে তারা পরাজিত। ইতিহাসের আঁস্তাকঁড়ে চলে গেছে। তারা প্রেসক্লাবকে তাদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছে। এখন থেকে প্রেসক্লাব হবে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের প্রাণকেন্দ্র। প্রেসক্লাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। কালোপতাকা উড়ছে প্রেসক্লাবের সামনে। এতদিন এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে প্রেসক্লাবের বিভিন্ন অংশে আমরা করে এলেও আজ প্রেসক্লাবের পুরো কমিটির পক্ষ থেকেই জাতীয় শোক দিবসের সব অনুষ্ঠান হয়েছে। জানা গেছে, গত ২৮ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় ক্লাব প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর আগে ২০১২ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের জন্য জোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে থাকায় জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ডিইউজের একাংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা মোল্লা জালাল, ইলিয়াস খান, আশরাফ আলী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, যুগান্তরের নির্বাহী সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকগণ । জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় ‘সাংবাদিক সমাজ’ আয়োজিত সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বধর্ম সভায় কোরান থেকে মাওলানা জিয়াউল আহসান, গীতা থেকে মানস মিত্র, বাইবেল থেকে ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, ত্রিপিটক থেকে ফলিত ভিক্ষু স্ব স্ব ধর্মের শান্তির বাণী পাঠ করেন। তারা সেখানে অন্যায়কারীদের ঘৃণা ও শান্তির বিষয় নিয়ে ধর্মের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সর্বধর্ম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চ্যানেল আই’র সংবাদ পাঠক সাইদুর রহমান। পরে সাংবাদিক সমাজের আহবায়ক আতাউর রহমান সর্বধর্ম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুল হক শাকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×