ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষে ৫ জেএসএস ক্যাডার নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৬ আগস্ট ২০১৫

রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষে  ৫ জেএসএস  ক্যাডার নিহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি, ১৫ আগস্ট ॥ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ির রূপকারি ইউনিয়নের দুর্গম বড়াদম এলাকায় শনিবার ভোরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জেএসএস সংস্কারপন্থী ক্যাডারদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও সেনাবাহিনীর এক কর্পোরাল আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুর পরিমাণ ভারি অস্ত্র এবং অস্ত্রের নানা সরমঞ্জাম। আহত সেনাসদস্যের নাম কর্পোরাল লিয়াকত। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, এসএলআর তিনটি, চাইনিজ রাইফেল দুটি, এসএসজি একটি, ৯ এমএম বোরের পিস্তল একটি, ১৬টি গুলির ম্যাগজিন, ১২টি তাজা কার্তুজ, ৫১৩ রাউন্ড গুলি, গুলি রাখার সরমঞ্জাম, সেনাবাহিনীর পোশাকের মতো বহু পোশাক ও মোবাইল ফোন। উদ্ধার করা মালামাল বাঘাইছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। যৌথবাহিনী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাঘাইহাট সেনা জোন করেঙ্গাতলী বাজারের নিচে একদল সন্ত্রাসী ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি ঘাঁটি গেড়েছে। দলটিতে ২০ জন সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আলী হায়দার সিদ্দিকী ও মেজর আসিফের নেতৃত্বে একটি সেনা টহল দল ওই স্থানে অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীর অভিযান টের পেলে সেনা সদস্যদের ওপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় সেনাসদস্যরাও পাল্টা গুলি চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ সন্ত্রাসীর লাশ উদ্ধার করে সেনাসদস্যরা। এদের মধ্যে বাবুল চাকমা (৩২) ও রূপম চাকমার (৩০) পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত অন্যদের ছদ্মনাম হলো তাতুমনি ত্রিপুরা (৩১), কান্তি মারমা (৩০) ও জেমসন (৩০)। রুপমের পিতার নাম শান্তি কুমার চাকমা, বাড়ি লংগদু উপজেলায়। ওই সন্ত্রাসীরা বিনয় জ্যোতি চাকমার ঘরে জোর করে অবস্থান নিয়েছিল বলে জানা যায়। রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শহীদুল্লাহ ও বাঘাইছড়ি থানার ওসি জাকির হোসেন ফকির জানান, নিহত পাঁচজনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ বিকেলে খাগড়াছড়ি হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সামসুর আরেফিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করেন। রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার এলাকার অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় জেএসএসের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সন্তু লারমার বিরোধ শুরু হলে জেএসএস নেতা রূপায়নের নেতৃত্বে জেএসএস সংস্কারপন্থী নামে আলাদা একটি গ্রুপ হয়। তারা খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়িতে এই দলের কার্যক্রম শুরু করে। এর আগে ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে ইউপিডিএফ জন্ম নেয়। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন চায়। এই নতুন দলটি তাদের সঙ্গে যৌথভাবে জেএসএসের বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকে। সেই থেকে উভয় গ্রুপের সঙ্গে জেএসএসের সংঘর্ষ পাল্টা সংর্ঘষ চলতে থাকে। গত ১৪ জুন রাঙ্গামাটির লংগদুতে সন্ত্রীদের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফের তিন কর্মী নিহত। সূত্র মতে, গত ১৭ বছরে উভয় পক্ষের মধ্যে ১৭৫টি সংর্ঘষ হয়েছে। এসব সংর্ঘষে উভয়গ্রুপের অন্তত আট শত লোক নিহত ও আহত হয়েছে প্রায় এক হাজার লোক এবং উভয় গ্রুপের প্রায় দেড় হাজার লোক অপহৃত হয়। অপহৃত অনেকেরই কোন হদিস নেই এখনও। সংস্কারপন্থীরা সুযোগ বুঝে সেনা টহলের ওপর হামলা চালায়। এই দলের ক্যাডারদের হাতে ২০১৩ সালের আগস্টে বাঘাইছড়ির বারিবিন্দু ঘাট এলাকা থেকে তিন টেলিটক প্রকৌশলী অপহৃত হওয়ার ১৭ দিন পর উদ্ধার হয়। এভাবে সংস্কারপন্থীরা বাঘাইছড়ি উপজেলাকে তাদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়।
×