ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষিতা শিশুর সন্তান প্রসব

কুড়িগ্রামে ধারালো অস্ত্রের মুখে দিনের পর দিন ধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৫ আগস্ট ২০১৫

কুড়িগ্রামে ধারালো অস্ত্রের মুখে দিনের পর দিন ধর্ষণ

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী (১৩) কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পূত্রসন্তান প্রসব করেছে। ফুটফুটে শিশুটি জন্ম নিয়েই নানা জটিলতার মধ্যে পড়েছে। শিশু ছাত্রীটির পরিবার এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় তার বাড়ি। প্রতিবেশী হাসনাবাদ ইউনিয়নের খেওনীটারী গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের পুত্র জাকিরুল ইসলাম ওরফে জাকরুল (২০) ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন শিশুটির ওপর নির্যাতন চালায়। এর একপর্যায়ে শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হলে চাপ সৃষ্টি করে গর্ভপাতের। স্থানীয় মুরব্বি ও চেয়ারম্যান বিচারে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা গড়ায় থানায়। ধর্ষিতার পিতা শাহ আলম এ বিষয়ে নাগেশ্বরী থানায় মামলা দায়ের করলেও ধর্ষক গ্রেফতার হয়নি। উল্টো ধর্ষকের পরিবারের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী গোবর্ধনকুটি গ্রামে আশ্রয় নেয় পরিবারটি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাগেশ্বরীর হাসনাবাদ ইউনিয়নের খেওনীটারী গ্রামের খামার হাসনাবাদ এলাকার দিনমজুর শাহ আলমের স্কুল পড়ুয়া কন্যা (১৩) নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিবেশী জাকিরুল ইসলামের দ্বারা। মেয়েটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্ম চালায় জাকিরুল। মেয়েটি গোবর্ধনকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। জন্মনিবন্ধন সূত্রে তার জন্ম তারিখ : ২৩/১২/২০০২। ধর্ষণের শিকার শিশুটি জানায়, গত ডিসেম্বর মাসে সন্ধ্যাবেলা জাকিরুল ছুরির ভয় দেখিয়ে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় তার বাড়িতে। একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর থেকে সে ফাঁকা বাড়ি পেলেই একই ভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এ কথা কাউকে বললে হত্যার হুমকি দিত সে। এ কারণে ভয়ে সে বাড়ির কাউকে বিষয়টি জানায়নি। শিশুটির বাবা শাহ আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকায় রিক্সা চালান। মে মাসে বাড়িতে এসে দেখতে পান তার শিশুকন্যার পেট বেশ উঁচু, অসুস্থ, পায়ে পানি নেমেছে। তিনি স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে মেয়েটির চিকিৎসা করান। এতেও ভাল না হলে ফকিরের হাট বাজারে মেয়ের চিকিৎসার জন্য ১২শ’ টাকা চাঁদা তোলেন। পরে নাগেশ্বরীতে মানিক ডাক্তারের কাছে নিলে টিউমারের চিকিৎসা করায়। এভাবে কেটে যায় ২০ থেকে ২৫ দিন। মেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শিশুটির তীব্র যন্ত্রণা শুরু হলে সে জানায়, টিউমার নয়; আমার পেটে বাচ্চা। আর এর জন্য দায়ী প্রতিবেশী জাকিরুল। এ কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাহ আলম। গ্রামের মোড়ল, মসজিদ কমিটি ও হাসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর জামালের কাছে বিচার চান। এরপর গ্রামে কয়েক দফা বৈঠক হয়। কিন্তু ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা ঠিকমতো বিচারে উপস্থিত হয়নি। উল্টো শাহ আলমকে হুমকি দেয় গ্রাম ছাড়ার। বাধ্য হয়ে ৭ জুলাই নাগেশ্বরী থানায় বাদী হয়ে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন শাহ আলম। এরপর নিরাপত্তার অভাবে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। আশ্রয় নেন গোবর্ধনকুটি গ্রামের মোকলেছ ব্যাপারীর বাড়িতে। এরপরও লোক মারফত হুমকি দিয়ে আসছে ধর্ষকের পরিবার। তিনি আরও জানান, বুধবার গভীর রাতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। বৃহস্পতিবার পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। এখন মা এবং নবজাতক শিশু দু’জনই অসুস্থ। বুকের দুধ পাচ্ছে না শিশুটি।
×