ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাসে আয় সোয়া কোটি টাকা

বঙ্গোপসাগরে টোকেন বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৫ আগস্ট ২০১৫

বঙ্গোপসাগরে টোকেন বাণিজ্য

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার বরাবর বঙ্গোপসাগরে কতিপয় বোট মালিকদের ইন্ধনে জলদস্যুদের উৎপাত দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজার উপকূলের সমুদ্র চ্যানেল কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে প্রতিনিয়ত ফিশিং ট্রলারে লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ জলদস্যু। আর ওইসব মাল কিনে নিচ্ছে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী। সাগরে লুণ্ঠিত মাছ, মেশিনারি পার্টস ও মাছ ধরার উপকরণ সস্তায় কিনতে কতিপয় মুখোশধারী বোট মালিক তথা কোম্পানি সাগরে ফিশিং ট্রলারে তা-ব চালাতে জলদস্যুদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফলে ভরা মৌসুমেও উপকূলীয় এলাকার শত শত জেলে প্রাণ ভয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে না। শহরের নুনিয়াছড়া, ফিশারিঘাট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার অন্তত ১০ জন প্রভাবশালী বোট মালিক ও লুণ্ঠিত মাল ক্রেতার ইন্ধনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। চিহ্নিত জলদস্যুদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে মাল কিনতে সাগরে ডাকাত নামিয়ে লুটতরাজ চালাচ্ছে ওইসব প্রভাবশালী বোট মালিক। কতিপয় বহদ্দারের ওইসব কারসাজি বুঝতে পেরে জেলে পল্লীর অনেকে মাছধরা পেশা বাদ দিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। তারা জানায়, বহদ্দারদের মধ্যে কতিপয় বোটের মালিক হঠাৎ করে একাধিক ট্রলারের মালিক ও কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের পেছনে সাগরে ডাকাতির মালামাল কিনে লাভ করা এবং জলদস্যুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বহু প্রমাণ রয়েছে। এসবের প্রতিবাদ করলে জান বধ হওয়ার আশঙ্কায় তারা জেলে পেশা ছেড়ে নতুন রুজীর সন্ধানে নেমেছেন বলে জানা গেছে। শহরের একাধিক ট্রলার মালিক জানান, সরকারের বিধিনিষেধ মেনে ইলিশ সপ্তাহ শেষে জেলেরা সাগরে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে ও কুতুবদিয়ায় জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। গত তিনদিনে অন্তত ৪০টি ফিশিং ট্রলারে জলদস্যুরা হামলা চালিয়েছে। মারধর করে মাছ, জাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে গেছে। জলদস্যুদের হামলায় ৩০ জেলে আহত হয়েছে। জলদস্যুদের কাছ থেকে চাঁদা দিয়ে মাসিক পাস নিয়ে গেলে মোটেও ডাকাতি হয় না ওইসব বোটে। যেসব ট্রলার মালিক মাসোহারা দিতে অক্ষম, ওই ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেলেই ইঞ্জিন, জাল, মাছ, তেল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ট্রলারটি ফুটো করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় ডাকাতরা। এতে মাঝি মাল্লাদের অনেকে সাঁতার কেটে বা অন্য ট্রলারের সাহায্যে কূলে ফিরে আসলেও সাগরে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। অনেক সময় লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে তাদের মন না ভরলে মাঝি মাল্লাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে ছাড়ে।
×