ব্যাঘ্রবিষয়ক
আগস্টের পনেরো তারিখ উনিশ শ’ পঁচাত্তর;
অতর্কিত শিকারির পদশব্দে অরণ্য শঙ্কিত
বাদুড়ের ডানার ঝাপ্টায় গজারীর মৃত পাতা
খসে পড়ে, বনের গোপন সঙ্কেতে সচকিত
হরিণ-হরিণী, কাক কা-কা, ইতস্তত রাইফেলের
প্রক্ষিপ্ত-উন্মত্ত গুলি, বিঘিœত বেজির সহবাস;
বাঘের দু’চোখ বিদ্ধ সার্চলাইটে, হটে না এগোয়
আহত প্রচণ্ড ক্ষোভ আলোর চাতুর্যে মানবিক
ছলনায়, শাসায় মৃত্যুকে, জানে এই বেঁচে থাকা
শিকারির আক্রমণে অরণ্য শঙ্কিত অযথাই;
দীর্ঘদেহী সুন্দরী গরান শাল অতন্দ্র সেগুন
পাহারায়, নিজস্ব শাবকগুলো দুঃখে আঁচড়ায়
নখ, ফোঁসে; প্রমত্ত গর্জনে সাড়া তুলবে অকস্মাৎ;
বাঙালির শুদ্ধ নাম শেখ মুজিবুর রহমান।
তবে
নিজে স্বপ্ন দেখেছিল,
কাউকে কাউকে স্বপ্নও দেখিয়েছিল;
আজ শুকনো গোবরের নিচে
স্থলপদ্ম, মারা পড়ে আছে;
একটি সারস্বত জীবনের
জনপদাবলী;
ভালোবাসার মাস
সে তো পড়ে রইল ধলেশ্বরী পদ্মা বংশী বিষখালী
পেরিয়ে যতদূর বিস্তৃত মেঘনা যমুনা গজারিয়া তিস্তা;
কোথাও-বা তিরতির জলে হাই তুলছে বালি, বেগানা
হাওয়ায় ঘোমটা খুলছে তৃণ!
থমকে-যাওয়া মেঘে-মেঘে ক্ষয়ে-আসা চতুর্দিকে প্রক্ষিপ্ত সূর্যের
ছায়াভস্ম, এতটাই নিরুদ্বিগ্ন; যেন সময়ের অশ্বক্ষুরধ্বনি
থেমে আছে পলাশীর প্রান্তরসীমা ছুঁয়ে আম্রকাননে!
শুধুমাত্র একপাল অভিবাসী পাখির দঙ্গল উড়ে চলে
মাঠ-ঘাট-নদী, কচুরিপানার ঝাঁক, হোগলার ঝোট
ছেড়ে; পায়ে কাদা, মুখে ধানশিষ!
নিঃসাড় হয়ে এলো দেহ! এইমাত্র বেরিয়ে গেল শ্বাস!
জল ভাবে, চুড়ি-শাঁখা-নোয়া ভেঙে শুরু হলো
বেপথু হওয়ার কাল! পালটে নেয়
জ্যোৎস্না-ধোয়া ধবধবে সাদা থান!
রাত্তির কিন্তু গাঢ়স্বরে বলে, না!
ওই দেখো, অন্ধকার বাঁশঝাড়ে, শটিবনে, দেহখানা নড়েচড়ে,
হায় হায় জলগন্ধে ভুরভুর নিঃসীম পাথার!