ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে দুই কিশোরী হত্যা রহস্য এখনও অন্ধকারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৫ আগস্ট ২০১৫

মাদারীপুরে দুই কিশোরী হত্যা  রহস্য এখনও অন্ধকারে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১৪ আগস্ট ॥ সুমাইয়া ও হ্যাপি নিহত হওয়ার ঘটনার রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ওই দুই স্কুলছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় স্তম্ভিত জেলাবাসী। হত্যাকা-ের রহস্য এখনও অন্ধকারে। বিগত দিনে মাদারীপুরে একাধিক নৃশংস ঘটনা ঘটলেও এ ধরনের নৃশংসতার নজির নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করে বলা হয়নি দুই স্কুলছাত্রীর নিহতের কারণ। তবে পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিকভাবে শুধু ধারণা করছে, প্রেমের কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। যদিও উভয় পরিবারের পক্ষ হতে দাবি করা হচ্ছে, ধর্ষণের পরই জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয় সুমাইয়া ও হ্যাপিকে। তবে মূল কারণ দুইদিনেও উদ্ধার করতে পারেনি কেউ। হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদ্ধারে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও সিআইডি। শুক্রবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সালমা বেগম ও রহিমা বেগম নামে ২ মহিলাকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট ৪ জনকে আটক করা হলো। শুক্রবার সকাল থেকে এলাকায় অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, দুই পরিবারের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে, চারদিকে শুধু শোকের ছায়া। গ্রামের মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভের পাশাপাশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না অযথা পুলিশী হয়রানির আশঙ্কায়। তবে দু’একজন কথা বললেও তাদের মনে ছিল ভয়। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মস্তফাপুর বাজারের দর্জি দোকানদার সূর্য বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় কোলে তুলে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছে’। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার জাহাঙ্গীর নাগাসী বলেন, ‘বিকেলে আমি দেখি দুটি ছেলে দুটি অসুস্থ মেয়েকে ভ্যানে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম বলেন, ‘আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার সুমাইয়ার মতো আর কোন মেয়েকে যেন অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।’ নিহত হ্যাপির চাচী কেয়া বেগম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শুক্রবার সকালে মস্তফাপুর গ্রামের সন্দেহভাজন রানার মা সালমা বেগম এবং ফজলুল কবিরের ছেলে মেহেদির মা রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সদর থানার পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই মেহেদি ও রানাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য পলাতক রয়েছে। মাদারীপুর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ফায়েকুজ্জামান জানান, ধারণা করা হচ্ছে একই গ্রামের রানা নামে এক ছেলের সঙ্গে নিহত ওই দুই স্কুলছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরও জানান, মস্তফাপুর গ্রামের সৈকত খলিফার ছেলে রানার সঙ্গে দুই বান্ধবীর দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে ত্রিভূজ প্রেমের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, দুই স্কুলছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা দু’যুবকই হচ্ছে মেহেদি ও রানা। বৃহস্পতিবার আটককৃত শিপন ও রাকিব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মেহেদি ও রানা নিহত দুই স্কুলছাত্রীকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তারা হাসপাতালে আসে। মাদারীপুর মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান খান বলেন, ‘১০ আগস্ট থেকে সুমাইয়া ও হ্যাপি স্কুলে আসেনি।’ তিনিও এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ শফিকুল ইসলাম রাজিব জানান, ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এদিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মস্তফাপুর গ্রামের আক্তার দর্জির ছেলে রফিকুল ও কদ্দুস শিকদারের ছেলে শিপনকে আটক করা হয়েছে এবং রাতে রানার মা ও মেহেদির মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন লোকেশন পরিদর্শন ও ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে রানার সঙ্গে হ্যাপি ও সুমাইয়ার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাওয়ারও ছবি এবং চিঠি আছে। যা নেয়ার জন্য রানার কাছে গিয়েছিল হয়ত তা না দেয়ায় কারণে দুইজনই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে। মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোঃ সরোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল, হ্যাপি, সুমাইয়ার পরিবার ও এলাকা পরিদর্শন করে জানান, হত্যাকারী যেই হোক না কেন তাকে বিচারের আওতায় এনে সঠিক বিচার করা হবে। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোন নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৪) এবং তার সহপাঠি প্রতিবেশী মস্তফাপুর গ্রামের হাবিব খার মেয়ে ও ওই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী হ্যাপি আক্তার (১৪) নিখোঁজ হয়। বিকেলে অচেতন অবস্থায় ৪ যুবক ওই দুই ছাত্রীকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে রেখে দুইজন পালিয়ে যায়। ওই দুই মেয়ের পরিবার লোকমুখে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুমাইয়া ও তার বান্ধবী হ্যাপির লাশ দেখতে পায়। পুলিশ সন্ধায় হাসপাতাল এলাকা থেকে শিপন ও রফিক নামে দুই যুবককে আটক করে। শুক্রবার দুপুরে নিহত সুমাইয়ার পিতা বিল্লাল সিকদার বাদী হয়ে রানা ও মেহেদিকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নামে মাদারীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ক্যাপটিভ পাওয়ার এক অফিস আদেশে বলা হয়, নতুন গ্যাস সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির বৈঠকে গত বছর ২৯ ডিসেম্বরের এক বৈঠকে ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে সাধারণভাবে আর কোন সংযোগ না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে জ্বালানি বিভাগ এই অফিস আদেশটি জারি করে। সরকার বিদ্যুত দিতে না পারায় ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ করে। এতে শিল্প মালিকরা নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন করেন। কিন্তু ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে অন্তত ৩০ ভাগ জ্বালানি অপচয়ের অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ গ্যাস ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যবহার করে তা দিয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে অন্তত ৩০ ভাগ বেশি বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে দেশে গ্যাসের মজুদ তলানিতে এসে ঠেকেছে। নতুন করে গ্যাসের মজুদও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। এতে করে নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের এখন থেকে গ্রিডের বিদ্যুত ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক সম্প্রতি জনকণ্ঠকে জানান, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে নতুন সংযোগ বন্ধ করে দিতে চায় সরকার। এজন্য বিদ্যুত বিভাগের কাছে বিদ্যুত পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়েছে। নতুন যেসব শিল্পকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে তারা বিদ্যুত সংযোগ দিতে পারলেই আমরা ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেব। অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি থেকে উদ্যোক্তারা ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে সমন্বিত একটি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে সরকার নতুন করে চিন্তা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপটিভের চেয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্রে একই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনে অর্ধেক গ্যাসের প্রয়োজন হয়। সাশ্রয়ী না হওয়ায় ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানির অর্ধেকই অপচয় হয়। কিন্তু এতদিন দেশের বিদ্যুতের অবস্থা ভাল না হওয়ায় সরকার কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিল না। এখন সেই অবস্থা না থাকায় এসব অপচয় রোধ করার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে নতুন করে আর কোন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে না সরকার। গ্যাসের স্বল্পতার কারণেই বাধ্য হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্রর দরপত্র আহ্বান করা হলেও পেট্রোবাংলা জানিয়েছে এসব বিদ্যুত কেন্দ্রে নতুন করে গ্যাস দেয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে বিদ্যুত খাতে ৪৫ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য খাতে গ্যাস না দিয়ে শুধু বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস দেয়াও সম্ভব নয়। পেট্রোবাংলা বলছে এখন ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে ৪৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৩৮০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। আর চাহিদার পুরোটা দিয়ে দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সম্ভব। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পাওয়ারসেলকে বলে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিত। এরপর দেশের সকল গ্যাস বিপণন কোম্পানির কাছে তারা ক্যাপটিভ পাওয়ারে বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ, প্রতিদিন কতটি ক্যাপটিভ কেন্দ্রে কি পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাওয়ার সেল সূত্র বলছে বিদ্যুতের অবস্থা ভাল ছিল না। তখন এই জাতীয় বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। সরকার চাইছে এখানের ব্যবহৃত গ্যাস দিয়ে বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করতে। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব বলেই ক্যাপটিভের জ্বালানি অপচয় বন্ধের পক্ষে তারা। বিদ্যুত বিভাগ বলছে যে পরিমাণ গ্যাস দিয়ে ক্যাপটিভে যে পরিমাণ গ্যাস দেয়া হয় তা দিয়ে কম্বাইন্ড সাইকেলে বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। তবে এখন নির্মাণাধীন বিদ্যুত কেন্দ্রে থেকে শিল্পকারখানার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত নিশ্চিত করা যায় কি না তাও বিবেচনা করা হবে। তবে ভবিষ্যতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
×