ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াতি হাসপাতালে অপচিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৪ আগস্ট ২০১৫

জামায়াতি হাসপাতালে  অপচিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে এখন মৃত্যুর মুখে পড়েছে মুসরাত জাহান নামের তিন মাসের শিশু। অস্ত্রোপচারের সময় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটারের ঠা-ায় শীতল হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকেরা গরম ছ্যাঁক গিতে গিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তিন মাস বয়সের এই শিশুর শরীর। এখন শরীরের তিন জায়গায় পোড়ার দগদগে ঘা নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। একমাস যাবত পোড়া ঘায়ের যন্ত্রণায় ছটফট করছে শিশুটি। তার চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এ অবস্থায় আদালতে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী রবিবার রাজশাহীর সিনিয়র জেলা জজ আদালতে হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবার। এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন আব্দুস সোবাহান। গত বুধবার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ ফারহানা হককে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি করা হয় বলে জানান তিনি। তদন্ত কমিটির প্রধান ডেপুটি সিভিল সার্জন ফারহানা হক বলেন, তারা তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। শিশুটির বাবার নাম মিজানুর রহমান ও মায়ের নাম মুন্নি রহমান। বাড়ি রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার ট্রাক ট্রার্মিনালের পাশে। মিজানুর রহমান জানান, গত ১৯ মে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার কন্যা সন্তানের জš§ হয়। জšে§র পর শিশুটির পায়ুপথ না থাকায় হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মোজাম্মেল হক দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। পরের দিন ২০ মে সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার করে পেট দিয়ে পায়ুপথ বের করে দেয়া হয়। চিকিৎসক জানায় ছয় মাস পরে ফের অস্ত্রোপচার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। মিজানুর রহমান আরও বলেন, কিছুদিন পরে শিশুটির পেট দিয়ে পায়ুপথের নাড়ি বের হয়ে আসে। আবার তিনি ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে শিশুটিকে নিয়ে ছুটে যান। চিকিৎসক জানায়, সেলাইয়ের দুর্বলতার কারণে ওই জায়গা দিয়ে নাড়ি বের হয়ে এসেছে। আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার কথামতো গত ১১ জুলাই শিশুটির দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসক মোজাম্মেল হক। অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসক বের হয়ে এসে জানায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে চারঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের পর ঠা-ায় শিশুটির চেতনা ফেরানো যাচ্ছিল না। তাই গরম ছ্যাঁক দিতে গিয়ে বাচ্চার হাতের কাছে একটু পুড়ে গেছে। তারা একটা মলম দিচ্ছেন। কিছু দিন ব্যবহার করলেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপরের দিন শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেয়া হয়। দুইদিন পর দেখেন শিশুটির শরীরের তিনটি স্থানে পুড়ার দগদগে ঘা। এরপর তারা শিশুটিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসকেরা পোড়ার জন্য চিকিৎসা দিয়ে দুইদিন পর শিশুটিকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার মতো আর্থিক অবস্থা না থাকায় বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একই কাজের জন্য দুইদফা অস্ত্রোপচারের খরচ চিকিৎসক মোজাম্মেল হক নিয়েছেন। কিন্তু দুইটি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়নি। এছাড়াও ছ্যাঁক দিতে দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দেয়াও হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোজাম্মেল হক বলেন, যা হবার তা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নওশাদ আলী সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই শিশুটিকে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকায় নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মাসখানেক রাখার পরে শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তার অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। রাজশাহীতে কিছুতেই সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
×