ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন

জাল মুদ্রা ঠেকাতে দুই দেশই বদ্ধপরিকর, ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ আগস্ট ২০১৫

জাল মুদ্রা ঠেকাতে দুই দেশই বদ্ধপরিকর, ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাল মুদ্রা বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি দিন দিন অস্থিতিশীল করে তুলছে। পাশাপাশি জাল মুদ্রার কারণে দুই দেশেই চোরাচালান, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকা- বাড়ছে। দুই দেশের স্থল সীমান্ত দিয়েই জাল মুদ্রার পাচার এবং জাল মুদ্রা দিয়ে চোরাচালানের পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতে জাল মুদ্রা চক্রের সঙ্গে জড়িতদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। জাল মুদ্রার পাশাপাশি ক্ষুদ্রাস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদেরও একটি তালিকা হচ্ছে। তালিকা মোতাবেক শীঘ্রই দুই দেশ অভিযানে নামছে। দুই দেশই জাল মুদ্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে এবং সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে জাল মুদ্রা আদান প্রদান হয়, সেসব পয়েন্টে শীঘ্রই কম্বিং অপারেশন শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশ সদর দফতরে দুইদিনব্যাপী আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিতে জাল মুদ্রার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি জাল মুদ্রা দুই দেশেই সন্ত্রাসী কর্মকা-, চোরাচালানের পণ্য কেনাবেচাসহ নানা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে দুই দেশই বদ্ধপরিকর। তারই অংশ হিসেবে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণে দুই দেশের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। প্রতিবছর টাস্কফোর্স দুইটি বৈঠক করে। ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠক ভারতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে জাল মুদ্রার কারবার চলে। পাশাপাশি এসব সীমান্ত দিয়ে জাল মুদ্রা আনা নেয়া হয়। দৈনিক জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে মোখলেছুর রহমান বলেন, জাল মুদ্রার সঙ্গে জড়িতদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ভারতের তরফ থেকেও এমন একটি ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। তবে ভারতের তরফ থেকে বা বাংলাদেশের তরফ থেকে কোন তালিকা আদান-প্রদান হয়নি। স্বল্পসময়ের মধ্যেই ডাটাবেজ তৈরি শেষ হবে। এরপর ডাটাবেজের তথ্য দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান হবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এরসঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে দুই দেশের তরফ থেকেই কাজ চলছে। বিশেষ করে জাল মুদ্রার প্রকৃত শেকড় জানার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি বিভাগ জাল মুদ্রা শনাক্ত করতে সক্ষম। সিআইডির এ ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও ভারত জাল মুদ্রা শনাক্তকরণ, এরসঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করবে বলে জানান মোখলেছুর রহমান। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান সেদেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) মহাপরিদর্শক ও যৌথ টাস্কফোর্সের প্রধান এস কে সিং বলেন, জাল মুদ্রার কারণে ভারতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর প্রভাবে দিনকে দিন অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে ভারতীয় অর্থনীতি। জাল মুদ্রার প্রভাবে অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদী কর্মকা-ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে জাল মুদ্রা। জাল মুদ্রা প্রভাব বিস্তার করায় ভারত সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। এজন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে জাল মুদ্রার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। জাল মুদ্রার বিরুদ্ধে ভারত সরকার এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলেও মন্তব্য করেন এসকে সিং। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে ১৪ নম্বর চুক্তিটি হয় মাদক চোরাচালান ও জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিষয় নিয়ে ভারতের নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে গত ৩ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বৈঠক হয়। এছাড়া পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত ১২ আগস্ট ২৬ সদস্যের বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের দুই দিনব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের মূল বিষয়ই ছিল জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণে যৌথভাবে কৌশল নির্ধারণ করা। বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের জেএমবি ও ভারতীয় মুজাহিদীনদের অর্থের অন্যতম উৎস জাল মুদ্রা বলে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার পর দুই নারী গ্রেফতার হয়। ভারতের এনআইএ-এর তদন্তে বেরিয়ে আসে, বাংলাদেশ ও ভারতীয় মুজাহিদীনদের আয়ের অন্যতম উৎস জাল মুদ্রা। এমনকি জেএমবি ও ভারতীয় মুজাহিদীন এবং পাকিস্তানের তৈরি জাল মুদ্রা খুবই নিখুঁত। যা ল্যাবরেটরিতেও সহজেই যা ধরা পড়ে না। বাংলাদেশ-ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা জাল মুদ্রা সীমান্ত দিয়ে আদান-প্রদান করে থাকে। জাল মুদ্রা চোরাচালানের পণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকা-েও ব্যবহার করা হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ ও মালদা এবং বাংলাদেশের শেরপুর, সুনামগঞ্জ, যশোর, কুমিল্লা ও সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে জাল মুদ্রা আদান-প্রদান হয়ে থাকে। জাল মুদ্রা আদান-প্রদানের সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে যৌথ টহল, গোয়েন্দা নজরদারি, স্থায়ী চেকপোস্ট বসানোসহ নানা ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে।
×