ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএসএআইডির অনুষ্ঠানে বার্নিকাট

খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে দারুণ অগ্রগতি বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ আগস্ট ২০১৫

খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে দারুণ অগ্রগতি বাংলাদেশের

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ কৃষিক্ষেত্রে অসাধারণ অর্জনের কারণে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে দারুণ অগ্রগতি করেছে। চাল উৎপাদনে দেশটি প্রায় স্বনির্ভর। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচী ২০১০-২০১৫ : সাম্প্রতিক পর্যায়ের অর্জন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তবে বিশ্ব খাদ্য মূল্যের ওঠানামা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের অগ্রগতিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয় উল্লেখ করে দেশের দারিদ্র্য কমিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবন মানের আরও উন্নয়ন ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত। এদিকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলতা অর্জনের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চান। অনুষ্ঠানে ইউএসএআইডি বাংলাদেশে তাদের কর্মসূচী সরকারী কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী অংশীদার, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা, গণমাধ্যম ও অন্যান্য অংশীদারদের মাঝে উপস্থাপন করে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি। ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১০ সাল থেকে তৃণমূল পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচী একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছে। শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে ইউএসএআইডি জনগণকে বিশেষ করে গরিব এবং সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, পুষ্টি, পানি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দান করতে স্থানীয় সরকার, নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তারাঞ্চলে বসবাসরত অত্যন্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা জমিহীন ও অত্যন্ত পুষ্টিহীনতায় ভুগে তাদের জন্য এই কর্মসূচীটি পরিচালিত হয়েছে। ২০১০ সালের মে মাসে থেকে ২১ কোটি ডলারের কর্মসূচীটি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা ৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের গবাদী পশুর স্বাস্থ্য, কৃষি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসহ গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করেছে। যদিও এই অংশের কর্মসূচী এই বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে ১৮ কোটি ডলারের কর্মসূচী শুরু হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভর। চরম দারিদ্র্য গত কয়েক বছরে এখন অনেকটাই কমে এসেছে এবং এ কারণে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ আরও সুযোগ পাচ্ছে। তারা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ এবং উৎপাদনশীল। তবে সাফল্য সত্ত্বেও বাংলাদেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির দ্বারা অরক্ষিত। বিশ্ব খাদ্য মূল্যের উঠা-নামা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৌসুমী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে তা হুমকির মুখে ফেলে দেয়। অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবন-যাত্রার মান উন্নত করতে বিশেষ করে যারা দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত তাদের উন্নয়নের জন্য এখনো অনেক কিছু করতে হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রায় তিন কোটি বাংলাদেশী এখনো হতদরিদ্র এবং ক্রমাগত অপুষ্টিতে ভুগছে। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও ভয়াবহ। পাঁচ বছরের নিচের ৩৬ শতাংশ শিশু তাদের বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত লম্বা নয় অথবা খর্বাকৃতি। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অপুষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একদিনে অথবা এক বছরে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এই সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের সব পর্যায়, দাতা কমিউনিটি, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারী সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
×