ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পল্টন মোড়ে দু’/তিনটি ফ্লেক্সিলোড ও মোবাইল ফোনের দোকানে মিলল শতাধিক অবৈধ সিম

অবৈধ সিম জব্দ করতে প্রতিমন্ত্রী এবার নিজে নামলেন অভিযানে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ আগস্ট ২০১৫

অবৈধ সিম জব্দ করতে প্রতিমন্ত্রী এবার নিজে নামলেন অভিযানে

ফিরোজ মান্না ॥ বিকেল তিনটা। পিছনে একদল সাংবাদিক। সামনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। উদ্দেশ্য অবৈধ সিম জব্দ করা। শুরু করলেন পুরানা পল্টন মোড় থেকে। দুই তিনটি ফ্লেক্সিলোড ও মোবাইলের দোকান তল্লাশি করে পেলেন বিভিন্ন কোম্পানির অবৈধ শতাধিক সিম। যা তারা ৫০ থেকে এক শ’ টাকায় বিক্রি করতেন। এই সিমগুলো নেই কোন প্রকার নিবন্ধনের বালাই। শুধু পুরানা পল্টন মোড় নয়, এমন সিম বিক্রি হচ্ছে গোটা দেশের ফ্লেক্সিলোডের দোকানসহ এমন কি পান সিগারেটের দোকানেও। আর এ সব সিম বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে অপরাধ কমে। মন্ত্রী এর আগে জিপিওতে হঠাৎ করেই পরিদর্শনে যান। সেখানে গ্রাহকদের সেবা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোবাইল সিম ব্যবহারে বিষয়ে ‘ডাইরেক্টিভস অন সার্ভিস এ্যান্ড ট্যারিফ ২০১৫’ এক নির্দেশে বলা হয়েছে, মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন সেবা, অফার, ব্যবহার নোটিফিকেশন, নম্বর প্ল্যান, ট্যারিফ ও চার্জ, প্রচারমূলক কার্যক্রম, মার্কেট কমিউনিকেশন ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট করতে হবে। খোলা বাজারে সিম বিক্রি করতে পারবে না। মোবাইল ব্যবহারকারীকে অবশ্যই মোবাইল কানেকশন নিতে হলে আইডি কার্ডে ফটোকপি জমা দিয়ে সিম কিনতে হবে। এ ছাড়া মোবাইল সংযোগ অকার্যকর (ডি-এ্যাকটিভ), পুনরায় সচল (রি-এ্যাকটিভ), পুনরায় বিক্রির (রি-সেলিং) বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয় ওই নির্দেশে। এ সব নির্দেশ কোনটাই মানছে না মোবাইল অপারেটররা। টানা ৯০ দিন মোবাইল বন্ধ থাকলে ওই সিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এক বছর সময় পর্যন্ত রিচার্জের মাধ্যমে সেটা চালু রাখতে পারবেন গ্রাহকরা। আর যদি সিমটি টানা ৩৬৫ দিনের বেশি অব্যবহৃত থাকে তবে এটি সচল করতে গ্রাহককে ১৫০ টাকা রিচার্জ করতে হবে। গ্রাহক যদি এক বছরের মধ্যে বন্ধ সংযোগ চালু না করেন, তাহলে ৭৩০ দিনের (দুই বছর) মধ্যে অনধিক ১০০ টাকা ফি দিয়ে তা সচল করতে পারবেন। তবে সংযোগ টানা দুই বছর বন্ধ থাকলেই যে মোবাইল অপারেটররা সিমটি বিক্রি করতে পারবেন তাও না। তাদের অন্তত দুই বছর পর্যন্ত ওই নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময়ের পর বিটিআরসি বা অন্য কোন সংস্থার আপত্তি না থাকলে মোবাইল সংশ্লিষ্ট ওই নম্বর বিক্রি করতে পারবে। বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তেই আপত্তিতে তুলেছে অপারেটররা। অব্যবহৃত সিম কার্ডের নম্বর বিক্রির ক্ষেত্রেও শর্ত দিয়েছে বিটিআরসি। বিক্রি করার আগে অব্যবহৃত সিমের নম্বর সংশ্লিষ্ট আপারেটদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ও বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দিতে হবে। স্বচ্ছতা বজায় রেখেই ওই নম্বরগুলো বিক্রি করতে হবে। অব্যবহৃত নম্বর বিক্রির তিন মাস আগে কমপক্ষে তিনটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নম্বরগুলো জানাতে হবে। পুনরায় বিক্রি করা সংযোগ চলতি বাজারদরে বিক্রি করতে হবে বলেও বিটিআরসির শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। নম্বর বিক্রি করে দেয়ার পরও ওই গ্রাহকের নিবন্ধন, ব্যবহার ও অন্যান্য তথ্য অপারেটরদের সংরক্ষণ করতে হবে। অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডাটাও গ্রাহকদের ফেরত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরের মাসে কেনা ডাটা প্যাকেজের সঙ্গে আগের জমা থাকা ডাটা যুক্ত হবে। অব্যবহৃত ডাটার ব্যবহার শেষ হলেই নতুন ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে আপারেটরদের। বিটিআরসির শর্তে বলা হয়, ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জানানোর জন্য নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। কারণ গ্রাহক কত এমবি ডাটা ব্যবহার করল ও তার কত এমবি হাতে থাকছে এটা জানতে পারলে স্বচ্ছতা বাড়বে। গ্রাহক ঠকবে না। এক শ’ মেগাবাইটের (এমবি) নিচে ডাটার ক্ষেত্রে একবার, এক শ’ থেকে পাঁচ শ’ এমবির ক্ষেত্রে দু’বার ও পাঁচ শ’ এমবির বেশি প্যাকেজের ডাটার ক্ষেত্রে গ্রাহককে তিনবার নোটিফিকেশন পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। অন্যদিকে মোবাইল রিচার্জের ক্ষেত্রেও কত টাকায় কত দিন মেয়াদ হবে, তার ন্যূনতম সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিটিআরসির নির্দেশে বলা হয়েছে, ১০ থেকে ৩০ টাকা রিচার্জের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১০ দিন, ৩১ থেকে ৫০ টাকা রিচার্জের মেয়াদ ১৫ দিন, ৫১ থেকে ১৫০ টাকায় ৩০ দিন, ১৫১ থেকে তিন শ’ টাকায় ৪৫ দিন, ৩০১ থেকে পাঁচ শ’ টাকায় এক শ’ দিন, ৫০১ থেকে ৯৯৯ টাকায় ১৮০ দিন এবং এক হাজার টাকা বা তার বেশি টাকা রিচার্জে ন্যূনতম এক বছর মেয়াদ ধার্য্য করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসির নির্দেশে অপারেটরদের অসত্য ও চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদ থেকে গ্রাহকদের রক্ষা করার জন্য বেশকিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কোন কোন মোবাইল আপারেটর তাদের বন্ধ থাকা সিম চালু করলেই বোনাসসহ নানা অফারের সুযোগ পাবেন। আবার নানা এসএমএস দিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ করার কাজটি দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের মোবাইল অপরেটরদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতেই বিটিআরসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রথম দিকে অপারেটররা একমত হলেও এখন তারা বিটিআরসির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদিকে মোবাইল আপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব জানিয়েছে, অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগকে ইতিবাচক দেখছে অ্যামটব। তবে নির্দেশ জারির আগে তাদের সঙ্গে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তাহলে অনেক বিষয় আলোচনার টেবিলেই মীমাংসা করা সম্ভব হতো। এখন বিটিআরসি অপারেটরদের ওপর অনেক বিষয় চাপিয়ে দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারের নীতিমালা ভঙ্গ করে এ সব সিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজার থেকে এই অবৈধ সিমগুলো জব্দ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এই সেক্টরে কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি মানা হবে না।
×