ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আপীল বিভাগে আদালত অবমাননা মামলায় জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন কোর্টরুমে বসে থাকার নির্দেশ, ১ হাজার টাকা করে জরিমানা

ক্ষমা চায়নি জনকণ্ঠ ॥ দেশে প্রথম কনটেস্টের রায়

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ আগস্ট ২০১৫

ক্ষমা চায়নি জনকণ্ঠ ॥ দেশে প্রথম কনটেস্টের রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সুপ্রীমকোর্টের আদালত অবমাননার কোন মামলায় কনটেস্ট করেছে কোন সংবাদ মাধ্যম। দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এম এ খান মাসুদ) এবং নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় আদালত অবমাননার ওই মামলা মোকাবেলা করেন। যে বিষয়টি নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল, তার স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণও আদালতে উপস্থাপন করেছেন তারা। তবে তার পরেও আদালতের সম্মান হানি হয় এমন কোন সংবাদ প্রকাশ করা যাবে নাÑ আদেশে এমন দাবি করে আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন। আদেশে বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন অর্থাৎ বেলা সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সোয়া একটা পর্যন্ত কোর্টরুমে জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে বসে থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত তাদের দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। এই জরিমানার টাকা যে কোন দাতব্য সংস্থাকে দান করতে বলা হয়েছে। আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। জরিমানা অনাদায়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে সাত দিন কারা ভোগ করতে হবেÑ এমনটাই বলা হয়েছে আদেশে। রায় ঘোষণার অনেক আগে থেকেই সুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের বিচার কক্ষ ছিল উৎসুক আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের বৃহত্তর আপীল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রায় ঘোষণার অনেক আগে থেকেই সুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের বিচারকক্ষ ছিল উৎসুক আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যক্রম : বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য ধার্য ছিল জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের আদালত অবমাননার মামলাটি। বহুল আলোচিত মামলাটি আদেশের জন্য আপীল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চে কার্যতালিকার ১ নম্বরেই ছিল। সাধারণত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৯টায়। আর এ কারণেই জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় পৌনে নয়টার মধ্যেই আদালত চত্বরে হাজির হন। তাদের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলনসহ সকলে ৯টার আগেই পৌঁছে যান আদালতে। সালাউদ্দিন দোলনকে সহায়তাকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন ইমু রহমান খানও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ কলামিস্ট মুনতাসীর মামুন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, আওয়ামী লীগ নেতা সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি এম বদি-উজ-জামান এবং জনকণ্ঠের সাংবাদিক, কর্মকর্তাবৃন্দসহ গণমাধ্যমকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সাধারণ সময়ের চেয়ে ৫৫ মিনিট পরে নয়টা ৫৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা এজলাসে ওঠেন। বেঞ্চ কর্মকর্তা আইটেম ওয়ান ডাকার পর পরই আইনজীবীদের বেঞ্চে বসা জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক দাঁড়ান। পরে আদালত তাদের বসতে বলেন। এরপর আদেশ পড়া শুরু করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি আদেশে বিভিন্ন আইন ও সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন। আদেশে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত সময়ে এজলাসে অবস্থান করার নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে আদেশে। এই জরিমানার টাকা সাত দিনের মধ্যে চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দান করার জন্য নির্দেশ দেন। জরিমানা অনাদায়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে সাত দিন কারাভোগ করতে হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে। আদেশের পর থেকে দুপুর সোয়া একটা পর্যন্ত আপীল বিভাগের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত সময়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক আপীল বিভাগের এজলাসেই বসে ছিলেন। আদালতের বিরতির সময়ে অনুমতি নিয়ে জরুরী প্রয়োজনে এজলাসের বাইরেও গিয়েছেন। এ সময় জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক সংবাদ কর্মী আদালতে অবস্থান করেন। কেন এই আদালত অবমাননার অভিযোগ ॥ গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা/পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। এখানে তিনি লিখেন, ৭১-এর অন্যতম নৃশংস খুনী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নিষ্পাপ বাঙালীর রক্তে যে গাদ্দারগুলো সব থেকে বেশি হোলি খেলেছিল এই সাকা তাদের একজন। এই যুদ্ধাপরাধীর আপীল বিভাগের রায় ২৯ জুলাই। পিতা মুজিব তোমার কন্যাকে এখানেও ক্রুশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই যদি না হয়, তা হলে কিভাবে যারা বিচার করছেন সেই বিচারকদের একজনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের লোকেরা? তারা কোন পথে বিচারকের কাছে ঢোকে। আইএসআই ও উলফার পথে না অন্য পথে ? ভিকটিমের পরিবারের লোকদের কী কখনও কোন বিচারপতি সাক্ষাত দেয়। বিচারকের এথিকসে পড়ে।..... ফখরুলের জামিনের বিষয়ে স্বদেশ রায় ওই নিবন্ধে লিখেন, ফখরুলের জামিনের ভেতর দিয়ে বিচারকরা কী বাংলাদেশকে আইএসের পথে অগ্রসর হওয়ার সুবিধা করে দিলেন না? এ সব ঘটে কী ফখরুলের টাকা আছে বলে আর যারা জমির আল নিয়ে মাথা ফাটায় ওদের টাকা নেই বলে? এক বিচারপতির বিদেশ যাওয়ার প্ল্যান প্রসঙ্গে তিনি লিখেন, কেন শেখ হাসিনার সরকারকে কোন কোন বিচারপতির এ মুহূর্তের বিশেষ সফর ঠেকাতে ব্যস্ত হতে হয়। সে সফরের উদ্যোক্তা জামায়াত-বিএনপির অর্গানাইজেশান। কেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী আগে গিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। কি ঘটেছে সেখানে। ক্যামেরনই পরোক্ষভাবে বলছেন সকল সন্ত্রাসীর একটি অভয়ারণ্য হয়েছে লন্ডনে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে গত ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর আপীলেও মৃত্যুদ- বহাল রাখার রায়ের পরপরই জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে তলব করে আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে রুলও জারি করেন আপীল বিভাগ। জনকণ্ঠের পক্ষে কনটেস্ট ॥ আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী ৩ আগস্ট জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এম এ খান মাসুদ) এবং নিবন্ধের লেখক নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় আদালতে উপস্থিত হন এবং এ মামলায় তারা কনটেস্ট করবেন জানিয়ে তিন মাসের সময় চান। পরে আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব দাখিল করতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে গত রবিবার ও সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির কার্যক্রম ॥ রবিবার শুনানির শুরুতেই জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে বেঞ্চ পুনর্গঠনের আবেদন জানানো হয়। জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন আদালতে বলেন, যেহেতু অভিযোগ শুধু প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে, তাই ওনি না থেকে বেঞ্চ পুনর্গঠন করার জন্য আবেদন করছি। শুনানি শেষে জনকণ্ঠের এই আবেদনটি খারিজ করে দেন আপীল বিভাগ। এর পর জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের পক্ষে দাখিল করা জবাব আদালতে তুলে ধরা শুরু করেন। এরপর আদালত বিরতিতে চলে যায়। বিরতির পর আদালত জানান, যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা তাই এ মামলার শুনানি হবে বৃহত্তর বেঞ্চে। এর পর সোমবার বৃহত্তর বেঞ্চে জনকণ্ঠের জবাবের ওপর শুনানি হয়। শুনানির এক পর্যায়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের পক্ষে দাখিল করা জবাব উপস্থাপন করেন আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন। তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক বিচারপতি কথোপকথনের বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন এবং এ সংক্রান্ত সিডিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওই কথোপকথনে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতিকে সাকা চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল এক জন বিচারপতিকে বেঞ্চে না রাখতে। পরে ওই কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেন প্রধান বিচারপতি। এরপর শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশ সফর সংক্রান্ত বিষয়েও সাক্ষী হাজিরের জন্য জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। তবে আদালত ওই আবেদনটিও গ্রহণ করেননি। এছাড়া মির্জা ফখরুলের জামিনের বিষয়ে জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন বলেন, ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘ফখরুলের টাকা আছে বলেই কি তিনি জামিন পেয়েছেন?’। এখানে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন, যাদের বেশি টাকা আছে তারা উচ্চ আদালতে এসে বেশি টাকা খরচ করে ভাল আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন। আর যাদের টাকা নেই তারা ভাল আইনজীবীও নিয়োগ করতে পারেন না। এই দুই দিনই শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্রƒপমূলক বক্তব্য দেন। সোমবার শুনানির এক পর্যায়ে এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, এ্যাডভোকেট কেএম সাইফুদ্দিন এবং সাবেক অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলনের ওপর উত্তেজিত হন। তারা বিভিন্ন বিদ্রƒপমূলক মন্তব্য করতে থাকেন। পরে জনকণ্ঠের আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দুই দিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন আপীল বিভাগ। আদালতের পর্যবেক্ষণ ॥ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, জনগণ, বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিদের মধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে যেকোন ব্যক্তিকে সাজা দেয়ার এই আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে আমরা মনে করি সার্বিক পরিস্থিতিতে আদালত অবমাননার বিষয়ে একটি গাইডলাইন থাকা উচিত, সেটি আমাদের বিস্তারিত রায়ে থাকবে। কারণ আদালত অবমাননা আইন ১৯২৬ বিচার বিভাগের জন্য প্রযোজ্য নয়, মাহমুদুর রহমানের মামলার রায়েই এ ব্যাপারে আমরা আমাদের অভিমত দিয়েছি। যদি কোন ব্যক্তি আদালতের কর্তৃত্বকে হেয় করে অথবা এ আদালতের মর্যাদাকে খাটো করে, অথবা কোন ব্যক্তি যদি আদালত, অথবা কোন বিচারকের নামে কুৎসা রটায় অথবা বিচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে অথবা আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, এমন মন্তব্য করে তবে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা এই আদালতের রয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেছেন, সংসদ অবশ্যই আইন করতে পারে। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ৭ (২) ধারায় যা বলা আছে, সংবিধানের মূল স্তম্ভের কোন পরিবর্তন করা যাবে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে পাওয়া যাবে। জনকণ্ঠের আইনজীবী যা বললেন ॥ জনকণ্ঠের পক্ষের আইনজীবী সালাহউদ্দিন দোলন আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতকে বলেছিলাম, সত্য লেখায় আদালত অবমাননা হয়নি। তারপরও যেহেতু আদালত রায় দিয়েছেন, সেহেতু রায় মানতেই হবে। আমরা এ রায় মেনে নিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে জনকণ্ঠের সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে কি কি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যায়, এ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ হবে কি হবে না সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, রায়ের আদেশে ওনাদের দুপুর একটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আদালতে অবস্থান করতে হবে। জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক আদালতের সময় অনুযায়ী বসেছিলেন। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা টাকা দুটি চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশনকে দিতে হবে। আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন আরও বলেন, শুনানির এক পর্যায়ে আদালতে প্রধানবিচারপতি স্বীকার করেছিলেন, ঐ কথোপকথনের এক প্রান্তে তিনি ছিলেন। যার অন্য প্রান্তে আরেকজন বিচারপতি ছিলেন। ওই কথোপকথন প্রধান বিচাপতি স্বীকার করে নেয়ায় আমার আশা ছিল, গত দু’দিন ধরে বলেছিলাম সত্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট করা হয়েছে, সেইহেতু আমার মক্কেল গণআদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবেন। আদালত অবমাননায় সাব্যস্ত হবে না। যেহেতু আদালত সেটা গ্রহণ করেনি, সেহেতু কিছুটা হতাশ তো হয়েছি। এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য ॥ আদালত অবমাননার রায়ের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, আদালত সার্বিকভাবে বলেছেন, সমালোচনা করা যাবে, কিন্তু লাগামহীন নয়। সমালোচনার মাধ্যমে আদালত বা বিচারককে স্ক্যান্ডালাইজড করা যাবে না। তিনি বলেন আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেছেন, কন্টেম্পট (আদালত অবমাননা) এ্যাক্ট পুরনো হয়ে গেছে, নতুন করে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আদালত আরও বলেছেন, হাইকোর্ট এবং সুপ্রীমকোর্ট শুধুমাত্র কন্টেম্পট অব কোড ১৯২৬’র আন্ডারে এ কন্টেম্পট রুল ইস্যু করেননি। সংবিধানের যে বিধান আছে তার আলোকে কন্টেম্পট অব রুল জারি করেছেন। পুরো বিষয়টি বিবেচনা করে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এবং স্বদেশ রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছেন আদালত। উভয়কে আদালতের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত সাজা প্রদান করেছেন এবং দুইজনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন। জরিমানার টাকা সাত দিনের মধ্যে যেকোন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে বলেছেন। না হলে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদ- ভোগ করতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত সার্বিকভাবে বলেছেন, কন্টেম্পটের বিষয়ে অন্য মামলায় কি দেয়া হলো আর এ মামলায় কতখানি দেয়া হবে সেটা বিবেচ্য বিষয় না। কোর্ট বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন সাজা দিতে পারেন। কোর্ট সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে এ আদেশ দিয়েছেন।
×