ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উয়েফা সুপার কাপ, দুর্দান্ত খেলেও সেভিয়ার আত্মসমর্পণ, এসি মিলানের রেকর্ড স্পর্শ কাতালানদের, এক বছরে ছয় শিরোপার পথে লুইস এনরিকের দল, বার্সিলোনা ৫-৪ সেভিয়া

নাটকীয় জয়ে বছরের চতুর্থ শিরোপা বার্সিলোনার

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৩ আগস্ট ২০১৫

নাটকীয় জয়ে বছরের চতুর্থ  শিরোপা বার্সিলোনার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নাটকীয় জয়ে উয়েফা সুপার কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সিলোনা। মঙ্গলবার রাতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কাতালানরা অতিরিক্ত সময়ে ৫-৪ গোলে পরাজিত করে স্বদেশী ক্লাব সেভিয়াকে। জর্জিয়ার রাজধানী টিবিলিসিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বার্সার হয়ে জোড়া গোল করে নায়ক বনে যান সুপারস্টার লিওনেল মেসি। দুটি গোলই তিনি করেন দৃষ্টিনন্দন, চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিক থেকে। চ্যাম্পিয়নদের হয়ে বাকি তিন গোল করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফিনহা, উরুগুইয়ান তারকা লুইস সুয়ারেজ ও ফরোয়ার্ড পেড্রো রড্রিগুয়েজ। সেভিয়ার হয়ে গোলগুলো করেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার এভার বানেগা, অধিনায়ক জোশে এ্যান্টোনিও রেইস, কেভিন গামেইরো ও ইয়েভেন কোনোপ্লিয়াঙ্কা। ম্যাচের ৫২ মিনিটের মধ্যে ৪-১ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল গত মৌসুমে ট্রেবল জয়ী বার্সা। এরপর অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে ফেরে সেভিয়া। দলটি টানা তিন গোল করলে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ৪-৪ গোলে। এরপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা শুরু হয়। এ সময় দুটি দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় জোশে এ্যান্টোনিওর দল। কিন্তু ম্যাচটি যখন টাইব্রেকারের দিকে গড়াচ্ছিল ঠিক তখন মাত্র পাঁচ মিনিট আগে পেড্রোর সুযোগসন্ধানী গোলে শিরোপা নিয়ে মাঠ ছাড়ে লুইস এনরিকের দল। এটি বার্সিলোনার পঞ্চম উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা। এর মধ্য দিয়ে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের আসরে সর্বোচ্চ পাঁচ শিরোপা জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছে বার্সিলোনা। অসাধারণ এই জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এক বছরে ছয় শিরোপার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। এটি চলমান বছরে বার্সার চতুর্থ শিরোপা। এর আগে তারা স্প্যানিশ লা লিগা, স্প্যানিশ কোপা ডেল’রে ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই বছর আরও দুটি শিরোপার হাতছানি মেসি, নেইমার, সুয়ারেজদের। স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এই দুটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হলে দ্বিতীয়বারের মতো বছরে ছয় শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখাবে বার্সা। এর আগে ২০০৯ সালে পেপ গার্ডিওলার অধীনে প্রথমবার এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে কাতালানরা। দুর্দান্তভাবে ম্যাচ শুরু করা সেভিয়া প্রথম থেকেই বার্সার উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে। জ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো ডি বক্সের বাইরে সেভিয়া অধিনায়ক রেইসকে ফেলে দিলেও বড় ধরনের শাস্তি থেকে রেহাই পান। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে সেই ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রিকিকে গোল করে সেভিয়াকে এগিয়ে নেন এভার বানেগা। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের নেয়া ফ্রিকিকটিতে বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানের কিছুই করার ছিল না। তবে উনাই এমারির দল মাত্র চার মিনিট পর্যন্ত এই লিড ধরে রাখতে পারে। সপ্তম মিনিটে সুয়ারেজকে ডি বক্সের বাইরে ফাউল করলে ফ্রিকিক পায় বার্সিলোনা। দুর্দান্ত শটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান মেসি। ১৬ মিনিটে চারবারের বিশ্বসেরা ফুটবলারের দ্বিতীয় গোলটি আরও দর্শনীয়। সেট পিস থেকে একটি আক্রমণ করতে গিয়ে আবারও বক্সের কিছুটা বাইরে ফাউল করে সেভিয়া। ফ্রিকিক পায় বার্সা। আরেকটি দুর্দান্ত ফ্রিকিকে দলকে এগিয়ে নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ৮০ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন এই আর্জেন্টাইন গোলমেশিন। বিরতির দুই মিনিট আগে সুয়ারেজের দারুণ পাসে রাফিনহা গোল করলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় কাতালানরা। বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া সেভিয়া আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে। বেনোয়িটের পাস সার্জিও বসকুয়েটস না আটকালে তখনই হয়ত গোলে পেয়ে যেত সেভিয়া। কিন্তু কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ৫২ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ান সুয়ারেজ। ৪-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল বার্সার শিরোপা জয় সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এরপরই অবিশ্বাস্য চমক নিয়ে হাজির হন সেভিয়ার ফুটবলাররা। ৫৭ মিনিটে ভিটোলোর অসাধারণ ক্রস থেকে গোল করে রেইস ব্যবধান করেন ৪-২। এরপর ৭২ মিনিটে ভিটোলোকে বক্সের মধ্যে ফেলে দিলে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। গামেইরো স্পট কিক থেকে সেভিয়ার হয়ে গোল করে ব্যবধান করেন ৪-৩। নয় মিনিট পর আরও এক গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরায় দলটি। এবার সিরো ইমোবিলেসের ক্রস থেকে কোনোপ্লিয়াঙ্কা দারুণ এক গোল করেন। শেষ দুই গোল করা খেলোয়াড়েরই সেভিয়ার পক্ষে এই ম্যাচে অভিষেক হয়। দুর্দান্তভাবে ফিরে আসা সেভিয়া নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ৪-৪ গোলে শেষ করে ম্যাচ। এরপর অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচ জমে উঠে। অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও অনেকটা সময় গোলবিহীন কেটে গেলে টাইব্রেকারের সম্ভাবনা জোরালো হয়। তখনই আরেকবার দেখা মেলে মেসি জাদু। ১১৫ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে মেসির শট প্রতিপক্ষের দেয়ালে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে আর্জেন্টাইন তারকার শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে কিছুটা দিক পাল্টালেও রুখে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক। কিন্তু বল আয়ত্তে রাখতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল পেয়ে খুব কাছ থেকে জালে জড়িয়ে দলকে উল্লাসে ভাসান স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পেড্রো। ছয় বছর আগে ঠিক একইভাবে শাখতার ডোনেস্কের বিপক্ষে সুপার কাপে অতিরিক্ত সময়ে পেড্রোকে নামানো হয়েছিল। সেবারও ৯৩ মিনিটে মাঠে নেমে বার্সিলোনাকে রক্ষা করেছিলেন এই স্প্যানিশ তারকা।
×