ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সাউদার সাহায্যে লালনসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ আগস্ট ২০১৫

ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সাউদার সাহায্যে লালনসন্ধ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফকির লালন সাঁইয়ের গানে মুগ্ধ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনের শ্রোতা। দেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত একের পর এক লালন গীতি শ্রোতাদের ভিন্ন এক মোহময়তায় নিয়ে যায় বুধবার সন্ধ্যায়। শিল্পী সমীর বাউলের নাতনি সাউদার চিকিৎসার্থে প্রদর্শনীর বিনিময়ে এ লালন গীতির আসরের আয়োজন করে দেশের প্রথিতযশা লালন শিল্পীরা। দুই বছর বয়সী শিশু সাউদা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুরেশ্বর দরবারের খলিফা গাজী মনজুরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. আবদুল ওয়াদুদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবির হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাসেল মাহমুদ। বক্তারা বলেন, লালন ফকির আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক বিশেষ দিকপাল। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো আমরা লালনের গানের মধ্যে খুঁজে পাই আমাদের সংস্কৃতির শিকড়। দেশের প্রথিতযশা লালন সঙ্গীত শিল্পী সমির বাউলের নাতনি সাউদার চিকিৎসার জন্য আজকের এ আয়োজনে শিল্পীদের সপ্রণোদিত অংশগ্রহণ সত্যিকার অর্থে মহত্ত্বের পরিচয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মানুষের জন্য মানুষের এগিয়ে আসা প্রত্যেকেরই মানুষ হিসেবে পরিচয়ের এক বিশেষ কার্যকলাপ। আলোচনার পর শুরু হয় লালনের গানের আসর। শুরুতে ‘তুমি ডুবায়ে ভাসাইতে পার’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী সমির বাউল। মিলনায়তভর্তি দর্শক-শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার পরিবেশনা উপভোগ করেন। এরপর মঞ্চে আসেন শিল্পী নাহিদা আক্তার তুলি। তার কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘গুরু তুমি পতিত পাবন পরম ঈশ্বর’ গানটি। এরপর অনুষ্ঠানে একে এক লালনের গানে শ্রোতাদের বিনোদিত করেন শিল্পী রিংকু, লায়লা, বিউটি, আরিফ, মৌসুমী বাউলসহ আরও অনেকে। শিল্পকলায় দেশ নাটক প্রযোজিত ‘অরক্ষিতা’ নাটক মঞ্চস্থ ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রধান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় দেশ নাটক প্রযোজিত ‘অরক্ষিতা’। মহাভারতে শুক্রাচার্যের মন্ত্র হারানো আখ্যান অবলম্বনে নাটকটি রচনা করেছেন মাহবুব লীলেন। নির্দেশনা দিয়েছেন ইশরাত নিশাত। সহকারী নির্দেশনায় রয়েছেন অয়ন চৌধুরী। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, দু’পক্ষের বাহুতে সমান শক্তি না থাকলে শান্তিচুক্তি হয় না, হয় এক পক্ষের দাসত্বের দলিল।’ এই বাস্তব সত্য উপলব্ধির পর বঙ্গদ্বীপ নামক রাজ্যে সৈন্য বহরের পাশাপাশি বঙ্গদ্বীপে সংযোজিত হয় আচার্যদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আচার্য শুক্রাচার্য। এই শুক্রাচার্য জানতেন মহামন্ত্র, মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র। এই মৃতসঞ্জীবনীর শক্তিতে নিহত সৈনিকদের আবারও বাঁচিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখতেন শুক্রাচার্য। বঙ্গদ্বীপের সৈন্যবহর আর শুক্র শক্তি মিলে বঙ্গদ্বীপ হয়ে ওঠে এক অমর ও অক্ষয় রাজ্য। বিপরীতে অন্য এক রাজ্য আর্যস্থলী। বঙ্গদ্বীপের কাছে বার বার পরাজিত আর্যস্থলী বঙ্গদ্বীপকে পরাজিত করার জন্য বা শক্তিহীন করার জন্য বেছে নেয় অন্য এক পন্থা। পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে শুক্রাচার্যের মহামন্ত্র মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র হাতিয়ে নেয়ার। অবশেষে আর্যস্থলীর আচার্য বৃহস্পতি তার অতিশয় বুদ্ধিমান সন্তান কচকে প্রেরণ করে বঙ্গদ্বীপে শুক্রাচার্যের শিষ্যত্ব নেয়া কিংবা কোন কৌশলে মন্ত্রটি হাতিয়ে নেয়ার জন্য। কচ বঙ্গদ্বীপে প্রবেশ করে। শুক্রাচার্য শত্রুসন্তান হিসেবে কচকে শিষ্যত্ব দানে অস্বীকার করে। কচ খুঁজতে থাকে অন্য এক পন্থা। খুঁজে বের করে শুক্রের দুর্বল জায়গা। তার দুর্বল জায়গা একমাত্র কন্যা দেবযানী। দেবযানীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে দিয়ে তার পিতা শুক্রকে অনুরোধ করায় কচকে শিষ্যত্বদানে। শুক্র একমাত্র কন্যার আবদার ফেলতে পারে না। কচকে শিষ্যত্ব দেয়। ব্যস এখানেই চরম ভুল করে শুক্রাচার্য। নানান নাটকীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কচ প্রেমে অন্ধ দেবযানীর শত অনুরোধে শুক্রাচার্য বাধ্য হয় কচকে মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র দান করতে। কিন্তু প্রেমের যে বিশ্বাস, সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে দেবযানীকে ফেলে কচ পালিয়ে যেতে চায়। পালানোর মুহূর্তে বঙ্গদ্বীপ রাজ্যের রাজকন্যা শর্মিষ্ঠা হাজির হয় কচের সামনে একটি চাকু নিয়ে। কচকে শর্মিষ্ঠা বলে পালানোর পথে এই চাকুটি হয়ত তাকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করবে। কচ চাকুটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ওই চাকুর সামনে স্বেচ্ছায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন বিসর্জন দেয় শর্মিষ্ঠা। কারণ- মৃতসঞ্জীবনীর মতো এই মহামন্ত্র যা কিনা মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারে তা কোন খুনী বা রক্তপাত ঘটানো ব্যক্তির হাতে কার্যকর হবে না। ফলে অকার্যকর হয়ে পড়ে এই মহামন্ত্র। বঙ্গদ্বীপ অরক্ষিত হতে হতে রক্ষা পায় শর্মিষ্ঠার মতো একজন দেশপ্রেমিকের কারণে। কচ ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যায়। আর দেবযানী প্রেম শোকে, দেশের রক্ষাকবচ হারানোর শোকে পাথর হয়ে বসে থাকে নৌকা ঘাটে। এ নাটকের কচ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামুন চৌধুরী রিপন ও দেবযানী চরিত্রে তিথি জামান।
×