ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রপথে পাচার

চার দেশের আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও অবস্থান করছে ৮০৩ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ আগস্ট ২০১৫

চার দেশের আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও অবস্থান করছে ৮০৩ বাংলাদেশী

তৌহিদুর রহমান ॥ সমুদ্রপথে পাচার হওয়া বেশিরভাগ বাংলাদেশী নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে চারটি দেশের আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও ৮০৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক অবস্থান করছে। এসব নাগরিকদের পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। আগামী মাসের মধ্যেই আটকেপড়া সকল নাগরিককে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। সমুদ্র থেকে আটক হওয়ার পর মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে দুই হাজার ৪০৩ জন বাংলাদেশী নাগরিককে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ। মে মাসে এসব নাগরিক সমুদ্রপথে পাচারের পর সেখানে আটকে পড়ে। তারপর থেকেই ধাপে ধাপে এসব বাংলাদেশী নাগরিককেই ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবার মিয়ানমার থেকে চতুর্থ দফায় ১৫৯ জন বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হয়। সমুদ্রপথে পাচার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৭৩৮ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৮১ জন, মিয়ানমারে ৬৯৭ জন ও থাইল্যান্ডে ১৮৭ জন নাগরিককে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার ২৪০ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন মালয়েশিয়ায় ২৪৭ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ১৬৯ জন, থাইল্যান্ডে ১৪২ জন ও মিয়ানমারে ২৪৫ জন বাংলাদেশী আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সমুদ্র থেকে আটক হওয়ার পর চার দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে এসব নাগরিকের মধ্যে বাংলাদেশী পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অন্য কোন দেশের নাগরিক হলে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না। আটকে পড়া নাগরিকদের বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না সরকার। কেননা এসব নাগরিকদের মধ্যে মিয়ানমারেরও নাগরিক রয়েছেন। মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সেদেশের। সে কারণে এসব নাগরিকের নাম ঠিকানা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদেরকে ফিরিয়ে আনছে সরকার। সূত্র জানায়, চার দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের পরিচয় শনাক্তের পর তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব দেশ থেকে এক হাজার ২৪০ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনাও হয়েছে। তবে অন্য কোন দেশে সমস্যা না হলেও মিয়ানমারে আটকা পড়া নাগরিকদের নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্র থেকে মিয়ানমার ৬৯৭ জন বাংলাদেশী নাগরিককে উদ্ধার করে তাদের আশ্রয়ে রাখে। এসব নাগরিকের মধ্যে চার দফায় ৪৫২ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন দেশটির আশ্রয়ে ২৪৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে এসব নাগরিককে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব নাগরিকের নাম, পরিচয়, ঠিকানা জেনে বাংলাদেশী নাগরিক নিশ্চিত হওয়ার পরেই ফেরত আনা হবে। সেভাবেই চার দফায় সেখান থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে নৌপথে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়টি গত মে মাসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসে। থাইল্যান্ডের গহীন অরণ্যে শত শত গণকবর পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অভিবাসন সমস্যা সমাধানে চাপ দেয়। প্রথম দিকে রাজি না হলেও আন্তর্জাতিক চাপে সাগরে ভাসমান হাজার হাজার অভিবাসীকে উদ্ধারে তৎপর হয় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এদিকে সমুদ্র পথ দিয়ে পাচার হওয়া বাংলাদেশী নাগরিকদের ফেরাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পাচার হওয়া এসব নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে কোনো নাগরিক সেদেশে না গেলেও সমুদ্র থেকে মিয়ানমার এসব নাগরিককে উদ্ধার করে তাদের আশ্রয়ে রেখেছে। গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগর হয়ে আন্দামান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল সাগর এলাকায় অবৈধপথে অভিবাসী প্রত্যাশীদের গমনাগমন চলে আসছে। এসব অভিবাসীদের বেশিরভাগ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক। সাগর পথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে রোহিঙ্গারা দেশান্তরী হচ্ছে। আর এদের সঙ্গে অধিক উপার্জনের আশায় যোগ দিয়েছে বাংলাদেশী কিছু নাগরিক। গত ১ মে থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে অভিবাসীদের বন্দী শিবির ও গণকবরের তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে ২ মে থেকে শুরু হয় পুলিশ ও সেনা অভিযান। এ অভিযানে এর সত্যতা মিললে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। থাইল্যান্ডে গণকবর ও বন্দীশিবির উদ্ধার তৎপরতা চলা অবস্থায় গত ২৩ মে মালয়েশিয়ার পেরলিস প্রদেশে আবিষ্কৃত হয় গণকবর ও বন্দী শিবির। সেখানে মোট লাশ পাওয়া যায় ১৩৯টি। তখন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার তাদের স্ব স্ব জলসীমায় নৌ ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করলে হাজার হাজার অভিবাসী বোঝাই বিভিন্ন ধরনের নৌযান আন্দামান সাগরের মালাক্কা প্রণালীমুখী হয়। এ অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া সরকার এসব অভিবাসীদের বিতাড়নে যুদ্ধ জাহাজ ও যুদ্ধবিমান প্রেরণের ঘোষণা দিলে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের পক্ষ থকে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সরকার তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে পিছু টান দেয়। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ২ হাজার অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের আশ্রয় দেয়া হয়। থাইল্যান্ড উপকূলে দু’দফায় উদ্ধার হয় ৯৩৫ অভিবাসী প্রত্যাশী। এখন সেখান থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের নাগরিকদের ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এর আগে পরররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, সাগরে পাচার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোহিঙ্গা আর ৪০ শতাংশ বাংলাদেশী। আটকে পড়া নাগরিকদের শনাক্তের পর ফিরিয়ে আনা হবে।
×